E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

ঢাবির মধ্য দিয়ে মেট্রো রেলের রুট পরিবর্তনে মানববন্ধন

২০১৬ জানুয়ারি ০৭ ১৭:১৫:২৯
ঢাবির মধ্য দিয়ে মেট্রো রেলের রুট পরিবর্তনে মানববন্ধন

ঢাবি প্রতিনিধি : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) মধ্য দিয়ে প্রস্তাবিত মেট্রো রেলের রুট পরিবর্তনের দাবিতে ক্যাম্পাসে আন্দোলন জমাট বাঁধতে শুরু করেছে। ইতোমধ্যে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। বৃহস্পতিবার আন্দোলন কর্মসূচির ধারাবাহিকতায় শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে। কর্মসূচিতে শিক্ষকরাও অংশ নেন। শিগগিরই সিদ্ধান্ত পরিবর্তন না হলে কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন আন্দোলনরতরা।

টিএসসির রাজু ভাস্কর্যের সামনে বৃহষ্পতিবার বেলা ১১ টা থেকে ঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।

শিক্ষার্থীদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে মানববন্ধনে সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক সামিনা লুৎফা বলেন, ‘সেনাবাহিনীর ক্যান্টনমেন্টের ভেতর দিয়ে যদি মেট্রো রেলের রুট পরিবর্তন করা সম্ভব হয় তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতর দিয়ে রুট কেন পরিবর্তন করা হবে না? আমরা উন্নয়নের বিপক্ষে নই, আমরা মেট্রো রেল চাই। তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহ্যকে ধ্বংস করে নয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘কোনো প্রকার আলোচনা ছাড়াই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বুক চিরে সরকার একতরফাভাবে প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছে। যেটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের পক্ষে মেনে নেওয়া সম্ভব নয়।’

আর্ন্তজাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষক তানজিম উদ্দিন বলেন, ‘বাংলাদেশের প্রতিটি স্বাধিকার আন্দোলনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস জড়িত। আর আজ সেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বুক চিরে মেট্রো রেল করার মাধ্যমে শিক্ষার পরিবেশকে বিনষ্ট করার পাঁয়তারা চলছে।যেখানে আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে প্রাচ্যের অক্সফোর্ড বলে থাকি।’

শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন আইন বিভাগের মো. ইসতিয়াক, ফিন্যান্স বিভাগের কণক, উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের নাসিম নয়ন, নাট্যকলার রাজিব নাইমসহ সাধারণ শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীরা জানান, মেট্রো রেলের বিরুদ্ধে আন্দোলন নয়, আন্দোলন কেবল এর রুট পরিবর্তনের জন্য। কর্তৃপক্ষ যদি সিদ্ধান্ত পরিবর্তন না করে তাহলে কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেন তারা।

মানববন্ধন শেষে মেট্রোরেল রুট পরিবর্তনের দাবিতে একটি বিক্ষোভ মিছিল করে। মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে পুনরায় রাজু ভাস্কর্যে গিয়ে শেষ হয়। গতকাল বুধবার আনুষ্ঠানিকভাবে মেট্রো রেলের রুট পরিবর্তনের দাবিতে মানববন্ধন কর্মসূচি ঘোষণা করেন আন্দোলনের উদ্যোক্তা অর্থনীতি বিভাগের ছাত্র সঞ্জীবন সুদীপ।

মেট্রো রেলের রুট পরিবর্তনের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরে সঞ্জীবন সুদীপ বলেন, ‘প্রস্তাবিত মেট্রোরেলের পরিকল্পনায় রুটের একটি অংশ শাহবাগ-টিএসসি-দোয়েল চত্বর হয়ে প্রেস ক্লাবের দিকে যাওয়ার কথা রয়েছে। এ ছাড়াও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে দোয়েল চত্বরে একটি স্টপেজ রাখা হয়েছে। পরিকল্পনা মোতাবেক এখানে একটি সুপরিসর স্টেশন নির্মিত হবে। সাড়ে তিন মিনিট পর পর ট্রেন থামবে এই স্টপেজে। কাজেই সারাদিন ভিড় লেগেই থাকবে। এই স্টপেজ শুধু যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাই ব্যবহার করবে তা নয়, ঢাকা মেডিক্যাল, বংশাল, চকবাজার, বাবু বাজারসহ একটি বিস্তৃত অঞ্চলের বাসিন্দা এবং যাত্রীরাও এই স্টপেজ ব্যবহার করবেন। এই স্টপেজ ঘিরে ছোট যানবাহনের একটি বড় জটলা তৈরি হবে।’

ক্যাম্পাসে মেট্রো রেলের ক্ষতিকর দিক তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘ এতে ক্যাম্পাসে বহিরাগতদের আনাগোনা বেড়ে যাবে। ক্যাম্পাসের নিরাপত্তাব্যবস্থা বিপর্যস্ত হবে। অরক্ষিত হয়ে পড়বে গোটা বিশ্ববিদ্যালয়। ট্রেনের শব্দের কারণে মাত্রাতিরিক্ত শব্দদূষণের কবলে পড়বে বিশ্ববিদ্যালয়। সুস্পষ্টভাবেই শিক্ষার পরিবেশ বিঘ্নিত হবে। বিপুল পরিমাণ গাছ কাটা পড়বে, ক্যাম্পাস হারাবে তার স্বাভাবিক সবুজ সৌন্দর্য।’

ঢাবির আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা প্রচারণার জন্য ইতোমধ্যে www.facebook.com/events/166848650341779/ নামে একটি পেজ খুলেছেন। পেজটির স্লোগান দেওয়া হয়েছে মেট্রো রেলের রুট বদলাও, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বাঁচাও।

মেট্রো রেলের পরিকল্পনা অনুযায়ী, তিন মিনিট ৩০ সেকেন্ড পরপর আসবে ট্রেন। গতি হবে ঘণ্টায় ৩২ কিলোমিটার। এ গতিতে উত্তরা থেকে মতিঝিল পৌঁছাতে লাগবে ৩৭ মিনিট। ২০১৯ সাল নাগাদ ঢাকায় দেখা যাবে এই ট্রেন। প্রথম ধাপে দিন-রাত মিলিয়ে নির্ধারিত গন্তব্যে আসা-যাওয়া করবে ২৪টি ট্রেন।

ঢাকার কৌশলগত পরিবহন পরিকল্পনায় (এসটিপি) ২০২৪ সালের মধ্যে তিনটি পথে মেট্রো রেল চালুর সুপারিশ করা হয়েছে। এগুলো হলো, উত্তরা-মহাখালী-তেজগাঁও-মগবাজার-খিলগাঁও হয়ে কমলাপুর পর্যন্ত, গুলশান-মিরপুর-মোহাম্মদপুর-ধানমণ্ডি-তেজগাঁও-রামপুরা-বাড্ডা-বারিধারা হয়ে গুলশান পর্যন্ত এবং উত্তরা তৃতীয় পর্ব থেকে পল্লবী হয়ে রোকেয়া সরণি-খামারবাড়ী-ফার্মগেট-হোটেল সোনারগাঁও-শাহবাগ-টিএসসি হয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সামনে পর্যন্ত। এর মধ্যে শেষের পথটিতে মেট্রো রেল স্থাপনের কাজ শুরু হয়েছে। ২০১৯ সাল নাগাদ এ পথেই চলাচল করবে স্বপ্নের সেই ট্রেন। বাকি দুই পথে এখনো সম্ভাব্যতা যাচাই হয়নি।

২০১২ সালের ১৮ ডিসেম্বর সরকারের অন্যতম অগ্রাধিকার মেট্রো রেল প্রকল্প জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে অনুমোদন পায়।

(ওএস/এএস/জানুয়ারি ০৭, ২০১৬)

পাঠকের মতামত:

১৮ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test