E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

রাতেই ফাঁসি কার্যকর

২০১৬ জানুয়ারি ০৭ ২৩:০৪:৩৭
রাতেই ফাঁসি কার্যকর

যশোর প্রতিনিধি : জাসদের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা কাজী আরেফ আহমেদসহ দলের পাঁচ নেতা হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় তিন আসামির ফাঁসি কার্যকরে তোড়জোড় চলছে। বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে তিন খুনির ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করতে সন্ধ্যা থেকে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি শেষ হয়েছে।

এর আগে বৃহস্পতিবার বিকেলে একটি অ্যাম্বুলেন্সে করে খুনি রাশেদুল ইসলাম ঝন্টু ও আনোয়ারের পরিবার শেষ সাক্ষাৎ করতে তাদের স্বজনরা কারাগারে আসেন। ঝন্টুর সঙ্গে দেখা করেন তার ভাগ্নে খাইরুল ইসালাম, চাচাতো ভাই আবুল কাশেম। আনোয়ার হোসেনের সঙ্গে দেখা করেন তার ভাগ্নে সোহেল। বৃহস্পতিবার বিকেলে হাবিবের সঙ্গে কেউ দেখা করেননি। কিন্তু হাবিবের লাশ নিতে তার ভাই হাসিবুর রহমান আসবেন বলে কারাগার সূত্র নিশ্চিত করেছেন।

তাদের লাশ শুক্রবার সকাল সাতটায় যশোর কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে হস্তান্তর করা হবে বলে কারা কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করেছেন। এদিকে, দেরিতে হলেও দোষীদের সাজা কার্যকর হওয়ায় স্বস্তি প্রকাশ করেছেন জাসদের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি ও যশোর জেলা শাখার সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা রবিউল আলম।
কারাগারের নিরাপত্তার জন্য সন্ধ্যার পর থেকেই গোটা এলাকায় পুলিশ ও র‌্যাবের পাহারা বাড়ানো হয়।

কারাগার সূত্র মতে, তিন আসামিকে গোসল করানোর পর তাদের তওবা পড়াবেন মসজিদের ইমাম রমজান আলী। আর স্বজনদের সঙ্গে শেষ সাক্ষাতের পর তাদের খাবার খাওয়ানো হয়। এরপর তাদের রায় পড়ে শোনানো হয়। নিম্ন আদালতের রায়, আপিল এবং রাষ্ট্রপতির ক্ষমার আবেদন নামঞ্জুর হওয়ার বিষয়টি তাদের জানানো হয়। এরপর তাদের জমটুপি পরিয়ে ফাঁসির মঞ্চে নেয়া হবে। রাত ১১টা ১ মিনিটে হাবিব ও আনোয়ারের ফাঁসি কার্যকর করা হবে এবং রাত ১১টা ৪৫ মিনিটে ঝন্টুর ফাঁসি কার্যকর করা হবে। তাদের ফাঁসি কার্যকর করবেন জল্লাদ তানভীর হাসান রাজু ও হযরত আলী। ফাঁসি কার্যকরের জন্য দু’দিন আগেই তাদের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে যশোরে নিয়ে আসা হয়।

পুলিশ ও কারাগার সূত্র মতে, ১৯৯৯ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি বিকেলে কুষ্টিয়ার দৌলতপুরের কালিদাসপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে সন্ত্রাসবিরোধী জনসভায় দুর্বৃত্তদের ব্রাশ ফারারে খুন হন জাসদের সভাপতি কাজী আরেফ আহমেদ, কুষ্টিয়া জেলা জাসদের সভাপতি লোকমান হোসেন, সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট ইয়াকুব আলী, স্থানীয় জাসদনেতা ইসরাইল হোসেন ও সমশের মণ্ডল। ওই ঘটনার পরদিন দৌলতপুর থানার তৎকালীন এসআই মো. ইসহাক আলী বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা করেন।

হত্যাকাণ্ডের ৫ বছর পর ২০০৪ সালের ৩০ আগস্ট কুষ্টিয়া জেলা জজ আদালত এ হত্যা মামলায় ১০ জনের ফাঁসি এবং ১২ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ দেন। পরে আসামিরা হাইকোর্টে আপিল করেন। ২০০৮ সালের ৩১ আগস্ট আদালত ফাঁসির এক আসামি ও যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত ১০ জনকে খালাস দেন। এ আদেশের বিরুদ্ধে পরে রাষ্ট্রপক্ষ (বাদী) সুপ্রিমকোর্টে আপিল করেন।

২০১১ সালের ৭ আগস্ট হাইকোর্টের দেয়া রায় বহাল রেখে রায় দেন সুপ্রিমকোর্ট। পরে ফাঁসির দণ্ডাদেশপ্রাপ্ত আসামিরা সুপ্রিমকোর্টে রিভিউ করেন। ২০১৪ সালের ১৯ নভেম্বর এ আবেদন খারিজ করে দেন সুপ্রিমকোর্ট। পরে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদন করেন সাফায়েত হোসেন হাবিব, আনোয়ার হোসেন ও রাশেদুল ইসলাম ঝন্টু।

এ আবেদন নাকচ করে দেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। ৯ জনের মধ্যে এই তিনজনের ফাঁসিতে ঝুলিয়ে বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। আর কারাগারে থাকা অবস্থায় মারা যান মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত আসামি ইলিয়ার হোসেন ওরফে এলাচ।

এ মামলার ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত অপর পাঁচ আসামি এখনও পলাতক রয়েছেন। তারা হলেন, চরমপন্থি দলের সক্রিয় সদস্য কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার পচাভিটা গ্রামের মান্নান মোল্লা, মিরপুর উপজেলার কুর্শা মেহেরনগরের রমজান আলীর ছেলে জাহান আলী, বালিয়াশিষা গ্রামের হারেজ উদ্দিনের ছেলে জালাল উদ্দিন, মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার ভবানীপুর গ্রামের নায়েব মণ্ডলের ছেলে রওশন ও কিশোরীনগর গ্রামের মোজাহার উদ্দিনের ছেলে বাকের উদ্দিন।

(ওএস/পি/জানুয়ারি ০৭, ২০১৬)

পাঠকের মতামত:

১৮ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test