E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

'যারা মানুষ পুড়িয়ে মেরেছে তাদের বিচার হবে'

২০১৬ জানুয়ারি ১২ ২১:০৪:০২
'যারা মানুষ পুড়িয়ে মেরেছে তাদের বিচার হবে'

ডেস্ক রিপোর্ট : 'আন্দোলনের নামে যারা মানুষ পুড়িয়ে মেরেছে, যারা আপনাদের আপনজনদের কেড়ে নিয়েছে, আপনাদের ক্ষতি করেছে তাদের বিচার হবে।'

বর্তমান সরকারের ক্ষমতাগ্রহণের দুই বছর পূর্তি উপলক্ষে মঙ্গলবার জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ কথা বলেন। ভাষণের শুরুতে তিনি দেশবাসীর প্রতি কৃতজ্ঞা জ্ঞাপন করেন। তিনি দেশ জাতির সুখ সমৃদ্ধি কামনা করেন। তিনি গণতন্ত্রকামী মানুষগুলোকে অভিনন্দন জানিয়েছেন।

বক্তব্যের শুরুতে তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও চার জাতীয় নেতাকে স্মরণ করেন। মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে ৩০ লাখ শহীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন। একইসঙ্গে ২ লাখ ইজ্জতহারা মা-বোনদের প্রতি সহমর্তিতা জ্ঞাপন করেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনকে ঘিরে বিএনপি জামাত জোট যে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়েছে তা দেশের মানুষের কখনো ভুলবার নয়। তিনি বলেন, ৫ জানুয়ারির নির্বাচনী সহিংসতায় ২৩১ জন মারা গেছেন, আহত হয়েছেন ১০১৮জন, ২৯৩০টি গাড়ি পোড়ানো হয়েছে, ১৮টি রেলগাড়িতে আগুন দেয়া হয়েছে, ৮টি লঞ্চে আগুন দেয়া হয়েছে, ৭০টি সরকারি অফিসে অগ্নিসংযোগ ও ৬টি ভূমি অফিসে আগুন দেয়া হয়েছে।

যারা ওই সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে যারা জীবন দিয়েছেন তাদের প্রতি প্রধানমন্ত্রী শ্রদ্ধা জানান। সন্ত্রাসীদের বিচার হবে বলেও নিশ্চয়তা দেন প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, মুক্তিযুদ্ধ ও শহীদদের সংখ্যা নিয়ে যে কটাক্ষ করা হয়েছে আমি এই ঘৃণ্য বক্তব্যের তীব্র নিন্দা জানাই।

তিনি দেশবাসীর উদ্দেশ্যে বলেন, মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে কোনো কটাক্ষ করা হলে আপনারা আন্দোলন গড়ে তুলুন। আমরা আপনাদর পাশে আছি। তিনি বলেন, যুদ্ধাপরাধের বিচার আমাদের অঙ্গীকার ছিল। আমরা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করছি। কেউই এ বিচার বাধাগ্রস্ত করতে পারবে না।

প্রধানমন্ত্রী পররাষ্ট্র নীতির বিভিন্ন দিক তুলে ধরতে গিয়ে বলেন, শান্তি রক্ষায় বাংলাদেশ ‘ব্র্যান্ডনেম’। তিনি হুশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, কাউকে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করতে দেওয়া হবে না। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা ক্ষমতা গ্রহণের পর জনগণকে যে ওয়াদা দিয়েছি তা পূরণ করেছি।

শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের দেশ এখন উন্নয়নের রোল মডেল। আমরা বিভিন্ন সেক্টরে উন্নয়নের জন্য বিশ্ববাসীর কাছে পুরস্কৃত হচ্ছি। বিএনপি –জামাতের সহিংসতাকারীদের ব্যাপারে শেখ হাসিনা বলেন, যারা আপনাদের প্রিয়জনদের কেড়ে নিয়েছে, যারা আপনাদের ক্ষতি করেছে তাদের বিচার হবে।

তিনি বলেন, বিএনপি-জামাত জোটের সহিংসতা এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দমননীতির কারণে ২০০৯ সালে ক্ষমতায় থেকে আমরা নানামুখী চাপের মুখে ছিলাম। ওই সময় চলছিল বিশ্বমন্দা। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা ইতোমধ্যে ৬ষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করেছি। এখন ৭ম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছি।

জিডিপির ভিত্তিতে বিশ্বে এখন বাংলাদেশের অবস্থান ৪৫তম এবং ক্রয় ক্ষমতার দিক থেকে ৩৩তম। ইকোনোটিমস্টের গবেষণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, গণতন্ত্র সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বে ৮৫তম আর পাকিস্তান ১০৮তম। সেভ দ্য চিলড্রেনের মাতৃসূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ১৩০তম, ভারতের ১৪০ এবং পাকিস্তানের ১৪৯তম।

তিনি বলেন, ৬ শতাংশের উপর দীর্ঘদিন প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে পারেনি কোনো দেশ। কিন্তু আমরা তা পেরেছি। এখন জিডিপি ৭ শতাংশে উন্নীত করার চেষ্টা করছি। তিনি বলেন, বিএনপি জামাতের আমলে বাংলাদেশের মানুষের মাথাপিছু আয় ছিল ৫৪৩ মার্কিন ডলার। আর এখন তা ১০১৪ মার্কিন ডলার।

ইতোমধ্যে ৫ কোটি জনগণকে নিম্নবিত্ত থেকে মধ্য নিম্নবিত্তে উন্নীত করতে পেরেছি। ইতোমধ্যে আমরা নিম্নমধ্যবিত্ত আয়ের দেশে পরিণত হয়েছি। শেখ হাসিনা বলেন, ২০০৬ সালে রেমিট্যান্স ছিল ৪.৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। সেটা এখন ১৫.০২ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে। বিএনপি জামাতের আমলে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল ৩.৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। রফতানি আয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩২.২ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে। বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সংখ্যা ১০০ ছাড়িয়ে গেছে।

প্রধামন্ত্রী বলেন, এদিকে, বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়ে এখন ১৪ হাজার ৭৭ মেগাওয়াট। ১২ হাজার মেগাওয়াট উৎপাদন হচ্ছে। ৪৪ লাখ সোলার প্যানেল বসানো হয়েছে। প্রায় ৭৫ শতাংশ মানুষ বিদ্যুৎ সুবিধা পাচ্ছে। ২০২১ সালের মধ্যে ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছাবো ইনশাআল্লাহ’।

শেখ হাসিনা বলেন, ২০০৬ সালে গ্যাসের দৈনিক উৎপাদন ছিল মাত্র ১৬০০ মিলিয়ন ঘনফুট। ২০১৫ সালে গ্যাস উৎপাদন গড়ে দৈনিক ২ হাজার ৭২৮ মিলিয়ন ঘনফুটে উন্নীত হয়েছে। এছাড়াও সারাদেশে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলা হবে। ১৬টির কাজ চলছে।

যোগাযোগ খাতের উন্নয়ন নিয়ে বলেন, এ খাতে আমরা ব্যাপক উন্নয়ন করেছি। ঢাকায় হাতিরঝিল প্রকল্প, কুড়িল-বিশ্বরোড বহুমুখী উড়াল সেতু, মিরপুর-বিমানবন্দর জিল্লুর রহমান উড়াল সেতু, বনানী ওভারপাস, মেয়র হানিফ উড়াল সেতু, টঙ্গীতে আহসানউল্লাহ মাস্টার উড়াল সেতু এবং চট্টগ্রামে বহদ্দারহাট উড়াল সেতু উদ্বোধন করা হয়েছে। মগবাজার-মালিবাগ উড়ালসেতুর নির্মাণ কাজ অচিরেই শেষ হবে। ঢাকায় এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে এবং মেট্রোরেল নির্মাণের কাজ চলছে। প্রায় ২৮ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নিজস্ব অর্থায়নে দেশের ইতিহাসের বৃহত্তম নির্মাণ প্রকল্প পদ্মাসেতুর কাজ চলছে। ২০১৮ সালের মধ্যে পদ্মাসেতু দিয়ে যানবাহন চলাচল করবে।

তিনি বলেন, পদ্মাসেতু জিডিপি প্রবৃদ্ধিতে ১ দশমিক ২% হারে অবদান রাখবে। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১টি জেলার মানুষের ভাগ্যের উন্নয়ন হবে। ব্যবসা-বাণিজ্যসহ শিল্প স্থাপনা বাড়বে। কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।

তিনি বলেন, মাওয়া, শিবচর ও জাজিরাকে ঘিরে আধুনিক স্যাটেলাইট শহর গড়ে তুলবো। মাদারীপুর, শরীয়তপুর ও কেরানীগঞ্জ জেগে উঠবে নতুন উদ্যমে। আমার সরকার নবীনগর-ডিইপিজেড-চন্দ্রা সড়ক এবং ঢাকা-চট্টগ্রাম এবং জয়দেবপুর-ময়মনসিংহ সড়ক ৪-লেনে উন্নীত করেছে। এছাড়াও চট্টগ্রামে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেল নির্মাণ কাজ শিগগিরই শুরু হবে। নারায়ণগঞ্জের ৩য় শীতলক্ষ্যা সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু করার উদ্যোগ নিয়েছি। অচিরেই জয়দেবপুর-টাঙ্গাইল-এলেঙ্গা মহাসড়ক ৪-লেনে উন্নীত করার কাজ শুরু হবে।

(ওএস/পি/জানুয়ারি ১২, ২০১৬)

পাঠকের মতামত:

১৮ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test