E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

‘রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের কাজ ধাপে ধাপে এগিয়ে চলছে’

২০১৬ এপ্রিল ০৯ ২১:২১:৪৩
‘রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের কাজ ধাপে ধাপে এগিয়ে চলছে’

ঈশ্বরদী (পাবনা) প্রতিনিধি : দেশীয় ও আন্তর্জাতিক সকল বাধ্যবাধকতা এবং মানদণ্ড অনুসরণ করেই রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের কাজ ধাপে ধাপে এগিয়ে চলছে বলে জানিয়েছেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সচিব সিরাজুল হক খান। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের কাজের স্বচ্ছতা এবং গণমাধ্যমের মাধ্যমে দেশের জনগণকে প্রকল্পের সামগ্রিক কর্মকান্ড অবহিতকরণের লক্ষ্যে শনিবার বিকেলে প্রকল্পের সাইট অফিস ঈশ্বরদীর রূপপুরে এক জণাকীর্ণ সাংবাদিক সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

তথ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মাহফুজুর রহমানের নেতৃত্বে ঢাকা হতে প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার ৭৩ জন এবং পাবনা ও ঈশ্বরদীর ১৪জন সংবাদ কর্মী প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন এবং প্রেস ব্রিফিং-এ অংশ গ্রহণ করেন। সচিব সিরাজুল হক খান জানান, ১০৬২ একর জমির উপর এই প্রকল্প নির্মাণ হচ্ছে। প্রস্তুতিমূলক পর্যায়ে রাশান ফেডারেশনের নির্ধারিত ঠিকাদার এটমষ্ট্রয় এক্সপোর্ট এর সাথে ইতোমধ্যে ৪টি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। চুক্তির ১ম ও ২য় পর্যায়ের কাজ দ্রুততার সাথে এগিয়ে চলেছে। আগামী ডিসেম্বরে ১ম পর্যায়ের কাজ শেষ হবে। গ্রাউন্ড প্রিপারেশনসহ এরমধ্যেই ৮০ ভাগ আবার কোন কোন ক্ষেত্রে এর বেশী কাজও সম্পন্ন হয়েছে। মূল নির্মাণ কাজ ৩য় ও ৪র্থ চুক্তির মাধ্যমে বাস্তবায়নাধীন।

প্রথম পর্যায়ে কাজের জন্য রাশিয়া বরাদ্দকৃত অর্থের পরিমান ছিল চার হাজার কোটি টাকা এবং দেশীয় তহবিলের সাড়ে চার শত কোটি টাকা। প্রকল্পের মূল পর্যায়ের নির্মাণ কাজের জন্য মোট ১২.৬৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার চুক্তি ২০১৫ সালের ২৫শে ডিসেম্বর স্বাক্ষরিত হয়েছে। এর ১০ ভাগ অর্থাৎ ১.২৬৫ বিলিয়ন ডলার জিওবি’র অংশ। অবশিষ্ট ৯০ ভাগ অর্থাৎ ১১.৩৮৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ষ্টেট ঋণ চুক্তির মাধমে রাশিয়া প্রদান করবে। রাশিয়ান সরকারের সাথে অর্থ ঋণ চুক্তি এপ্রিলের শেষ নাগাদ অথবা মে’র প্রথমে স্বাক্ষরিত হবে বলে তিনি জানান।

তিনি আরো জানান, সাধারণ চুক্তির আওতায় বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ইউনিট-১ ও ২ এর বিস্তারিত নকশা প্রণয়ণ, নির্মাণ, কমিশনিং ও চালুকরণ; প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি সরবরাহ এবং প্রকল্প সাইট পর্যন্ত পরিবহন; প্রাথমিক পর্যায়ের প্রয়োজনীয় নিউক্লিয় জ্বালানী সরবরাহ; কমিশনিং পর্যায় থেকে ওয়ারেন্টি অপারেশন পর্যন্ত পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র পরিচালন ও রক্ষণাবেক্ষণে কারিগরি সহায়তা; জনবল প্রশিক্ষণ; কমিশনিং এবং পরিচালনার জন্য লাইসেন্স প্রাপ্তির লক্ষে দলিলাদি প্রণয়নে সহযোগিতা; প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন; অবকাঠামো প্রতিষ্ঠা; লোডিং/আনলোডিং সুবিধাসহ বার্থ/জেটি নির্মাণ এবং জেটি হতে প্রকল্প পর্যন্ত রাস্তা নির্মাণ; বিকিরন পর্যবেক্ষণ ও জরুরী অবস্থা মোকাবেলার জন্য অবকাঠামো স্থাপন এবং প্রকল্প ব্যবস্থাপনায় নিয়োজিত জনবল প্রশিক্ষণ।

এছাড়াও বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের পরবর্তী পর্যায়ের পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণ, পরবর্তী নিউক্লীয় জ্বালানী সরবরাহ, পারমাণবিক অবকাঠামো উন্নয়ন ও ব্যবহৃত জ্বালানী ফেরত ও ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত চুক্তি চুড়ান্তকরণ ও স্বাক্ষর প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে তিনি জানিয়েছেন। নিরাপত্তা প্রসংগে তিনি বলেন, নির্মিতব্য ডিভিইআর-১২০০ টাইপ রিঅ্যাক্টরে পাঁচ স্তর নিরাপত্তা বিশিষ্ঠ থাকবে। মনুষ্যসৃষ্ট যে কোন বিপর্যয় এবং প্রাকৃতিকভাবে ঘটতে পারে এমন যে কোন দুর্ঘটনা মোকাবলোর সক্ষমতা রয়েছে। ফুকুশিমার কথা মাথায় রেখে বাহ্যিক বিদ্যুৎ সরবরাহীন অবস্থায় ৭২ ঘন্টা পর্যন্ত প্লান্ট নিরাপদে শাট ডাউন রাখার ক্ষমতা এই ডিজাইনে অর্ন্তভূক্ত বলে সাংবাদিকদের জানানো হয়। তিনি বলেন, দুর্ঘটনা পরিস্থিতিতে পারমাণবিক চুল্লির মূল অংশের বিগলন প্রতিরোধ ব্যবস্থা আন্তর্জাতিক মানদন্ডের চেয়েও কয়েকগুণ বৃদ্ধি করে রূপপুরের নকশা প্রণয়ন করা হয়েছে।

তাছাড়া সর্বশেষ পর্যায়ে নিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্য রয়েছে কোর ক্যাচার। দুর্ঘটনায় যদি কোর গলেও যায়, সেক্ষেত্রেও তেজস্ক্রিয় পদার্থ পরিবেশে ছড়িয়ে পড়া হতে সম্পূর্ণ বিরত থাকবে। সচিব সিরাজুল হক খান প্লান্টের মূল্যের সঠিকতা প্রসংগে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে বলেন, ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে আমাদের মিত্র রাশিয়া জাতির জনক বঙ্গবন্ধু কণ্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আগ্রহকে প্রধান্য দিয়ে এই প্রকল্প বাস্তবায়নে সহযোগিতা করছে। সর্বাধুনিক এই প্রকল্পের যে ব্যয় তা আর্ন্তজাতক বাজার মূল্যের হিসেবে অনেক কম- তাই বলা যায় এই প্রকল্প অনেকটা গিফট প্রাইজ।
এসময় মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব আনোয়ার হোসেন জানান, নির্মাণ পর্যায়ে দৈনিক ১৭৫০ কিউবেক মিটার পানি এবঙ বিদ্যুৎ কেন্দ্র পরিচালন ও রক্ষণাবেক্ষণ কাজের জন্য ৮১ মিলিয়ন কিউবেক মিটার পানির প্রয়োজন । যার মধ্যে রিসাইক্লিং হিসেবে প্রায় অর্ধেক পানি পুনরায় ব্যবহৃত হবে।

প্রকল্প পরিচালক ড: সৌকত আকবর জানান, ২০১৭ সালের ১লা আগষ্ট হতে প্লান্ট বসানোর মূল ১ম কংক্রিট কাজ শুরু হবে। প্রথম ইউনিটের কমিশনিং ২০১৮ সালের এপ্রিলে শুরু হয়ে ২০২৩ সালে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হবে। দ্বিতীয় ইউনিটের কমিশনিং ২০১৯ সালের এপ্রিলে শুরু হবে এবং ২০২৪ সালে বিদ্যুৎ উৎপাদনে সক্ষম হবে। তিনি আরো বলেন, প্রতিটি ১২০০ মেগাওয়াট করে দুটিতে মোট ২৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে। নিউক্লিয়ার বিদ্যুৎ প্লান্ট ৫০ বছর ধরে উৎপাদন করার জন্য ফুয়েল এবং ম্যানেজমেন্ট কষ্ট তুলনামূলকভাবে কম হওয়ায় গড়ে প্রতি ইউনিটের খরচ পড়বে মাত্র ৩.০০ টাকা। যদি কোন দুর্ঘটনা না ঘটে তবে এই প্লান্ট ৮০-৯০ বছর পর্যন্ত নিরবচ্ছিন্নভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন করবে বলে তিনি জানিয়েছেন।

আমাদের জায়গার স্বল্পতা এবং পরিবেশ বিপর্যয়ের কথা মাথায় রাখলে দেশকে দ্রুত উন্নয়নের স্বার্থে বিদ্যুৎ উৎপাদনে নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্লান্ট ছাড়া আর কোন বিকল্প নাই বলে ড: সৌকত জানিয়েছেন। ৪৩৪ কোটি এডিপির টাকা ফেরত প্রসংগে নিউ ক্লিয়ার পাওয়ার কোম্পানীর উপদেষ্টা রবীন্দ্র নাথ সরকার জানান, প্রথম পর্যায়ের অনেক কাজ রাশিয়ানদের অর্থেই সম্পাদিত হওয়ায় অর্থ সাশ্রয় হয়েছে। তাছাড়া ডলারের দাম ৮০ টাকা ধরে মূল্যায়ন করা হলেও বাস্তবে ছিলো ৭৮ টাকা। এজন্য ১৬০ কোটি টাকা সাশ্রয় হয়েছে। এই টাকা পরবর্তীতে ব্যয় হবে বলে তিনি জানান।

এসময় বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের চেয়ারম্যান আলী জুলকারনাইন, সদস্য (ভৌত বিজ্ঞন) মাহাবুবুল হাসান, রাশিয়ান রোসাটমের প্রকল্প পরিচালক পাভেল ডি ভ­সব, মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব ফিরোজ আহমেদ, ওয়াহিদা মুর্সারাত অনিতা, প্রকল্পের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা জাহিদুল হাসান, হাসিনুর রহমান, সাইট ইনচার্জ এবিএম রুহুল কুদ্দুস প্রমূখসহ উর্দ্ধতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

(এসকেকে/এএস/এপ্রিল ০৯, ২০১৬)

পাঠকের মতামত:

২৬ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test