E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

বরেণ্য চিত্রশিল্পী এসএম সুলতানের ৯২তম জন্মবার্ষিকী আজ

২০১৬ আগস্ট ০৯ ১৬:৪৮:২৪
বরেণ্য চিত্রশিল্পী এসএম সুলতানের ৯২তম জন্মবার্ষিকী আজ

তানভীর আহমেদ রুবেল, নড়াইল  :আজ ১০ আগস্ট । বরেণ্য চিত্রশিল্পী এসএম সুলতানের ৯২তম জন্মবার্ষিকী । এই গুণী শিল্পী ১৯২৪ সালের ১০ আগস্ট নড়াইলের মাছিমদিয়ায় জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা মেছের আলী, মা মাজু বিবি

তার সংক্ষিপ্ত জীবন ইতিহাস থেকে জানা যায়, রাজমিস্ত্রি বাবার সংসারে দারিদ্রতার মাঝেও ১৯২৮ সালে নড়াইল ভিক্টোরিয়া কলেজিয়েট স্কুলে লেখাপড়া শুররু করেন শেখ মোহাম্মদ সুলতান। স্কুলের অবসরে বাবাকে কাজে সহযোগিতার করার সময় ছবি আঁকতে শুরু করেন। এ সময় তার আঁকা ছবি স্থানীয় জমিদারদের দৃষ্টি আর্কষণ করে।

রাজনীতিক ও জমিদার শ্যামাপ্রাসাদ মুখোপাধ্যায় ১৯৩৩ সালে নড়াইলের জমিদার ব্যারিস্টার ধীরেন রায়ের আমন্ত্রণে ভিক্টোরিয়া কলেজিয়েট স্কুল পরিদর্শনে গেলে তার একটি পোট্রেট আঁকেন পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র এসএম সুলতান। মুগ্ধ হন শ্যামাপ্রাসাদসহ অন্যরা। লেখাপড়া ছেড়ে ১৯৩৮ সালে কলকাতায় গিয়ে ছবি আঁকা ও জীবিকা নির্বাহ শুরু করেন। সে সময় চিত্র সমালোচক শাহেদ সোহরাওয়ার্দীর সাথে তার পরিচয় হয়। সোহরাওয়ার্দীর সুপারিশে অ্যাকাডেমিক যোগ্যতা না থাকা সত্ত্বেও ১৯৪১ সালে কলকাতা আর্ট স্কুলে ভর্তির সুযোগ পান।

১৯৪৩ অথবা ’৪৪ সালে আর্ট স্কুল ত্যাগ করে ঘুরে বেড়ান এখানে-সেখানে। এ সময় কাশ্মীরের পাহাড়ে উপজাতীয়দের সাথে বসবাস এবং জীবন-জীবিকা নিয়ে চিত্রাংকন শুরু করেন। ১৯৪৫ মতান্তরে ’৪৬ সালে ভারতের সিমলায় তার প্রথম একক চিত্র প্রদর্শনী হয়। মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর বোন ফাতিমা জিন্নাহ ১৯৪৮ সালে লাহোরে সুলতানের চিত্র প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন।

১৯৫০ সালে চিত্রশিল্পীদের আন্তর্জাতিক কনফারেন্সে পাকিস্তান সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে যোগদানের জন্য তিনি আমেরিকা যান। এরপর ইউরোপের বেশ কয়েকটি একক ও যৌথ প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণ করেন। পাবলো পিকাসো, সালভেদর দালি, পল ক্লী প্রমুখ খ্যাতিমান শিল্পীদের ছবির পাশে সুলতানই এশিয়ার একমাত্র শিল্পী যার ছবি এসব প্রদর্শনীতে সুযোগ লাভ করে।

১৯৫৩ সালে নড়াইলে ফিরে আসেন সুলতান। শিশু-কিশোরদের সাধারণ শিক্ষার পাশাপাশি চারুকলা শিক্ষার ব্যবস্থা করেন। ১৯৬৯ সালের ১০ জুলাই ‘দি ইনস্টিটিউট অব ফাইন আর্ট’ প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৮৭ সালে স্থাপিত হয় ‘শিশুস্বর্গ’।

এদিকে, সুলতান তার সঞ্চিত অর্থ দিয়ে ১৯৯২ সালে ৯ লাখ মতান্তরে ১২ লাখ টাকা ব্যয়ে ৬০ ফুট দৈর্ঘ্য ও ১৫ ফুট প্রস্থ বিশিষ্ট দ্বিতলা নৌকা (ভ্রাম্যমাণ শিশুস্বর্গ) নির্মাণ করিয়েছিলেন।

চিত্রাংকনের পাশাপাশি বাঁশি বাজাতে পারতেন। পুষতেন সাপসহ বিভিন্ন পশু-পাখি। চিত্রাপাড়ের লালমিয়া শিল্পের মূল্যায়ন হিসেবে পেয়েছেন ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ‘ম্যান অব দ্য ইয়ার’ নিউইয়র্কের বায়োগ্রাফিক্যাল সেন্টার থেকে ‘ম্যান অব অ্যাচিভমেন্ট’ এবং এশিয়া উইক পত্রিকা থেকে ‘ম্যান অব এশিয়া’ পুরস্কার। এছাড়া ১৯৮২ সালে একুশে পদক এবং ১৯৯৩ সালে স্বাধীনতা পদকে ভূষিত হন।

১৯৮৪ সালে বাংলাদেশ সরকারের রেসিডেন্ট আর্টিস্ট স্বীকৃতি এবং ১৯৮৬ সালে বাংলাদেশ চারুশিল্পী সংসদ সম্মাননা। ১৯৯৪ সালের ১০ অক্টোবর অসুস্থ অবস্থায় যশোর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। প্রিয় জন্মভূমি নড়াইলের কুড়িগ্রামে তাকে শায়িত করা হয়।

সুলতানের ৯২তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে সংগ্রহশালা চত্বরে আজ বুধবার সকাল সাড়ে ৬টায় কোরআনখানি, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, শিল্পীর কবরে পুষ্পমাল্য অর্পণ, আলোচনা সভা, দোয়া মাহফিল ও পুরষ্কার বিতরণের আয়োজন করা হয়েছে।

এছাড়া আগামী ২৯ থেকে ৩১ আগস্ট তিনদিনব্যাপী সুলতান উৎসব এবং ১ সেপ্টেম্বর চিত্রা নদীতে ঐতিহ্যবাহী নৌকাবাইচ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হবে।







(টিএআর/এস/আগস্ট০৯,২০১৬)

পাঠকের মতামত:

২৯ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test