E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

বিচার বিভাগের আরও স্বাধীনতায় পাশে দাঁড়ানো দরকার : সুজন

২০১৭ জুলাই ১২ ১২:৩৫:০৮
বিচার বিভাগের আরও স্বাধীনতায় পাশে দাঁড়ানো দরকার : সুজন

স্টাফ রিপোর্টার : ‘গণতন্ত্র যখন কম থাকে আর কর্তৃত্ববাদী সরকার বেশি থাকে, তখন ন্যায়বিচার ও বিচার বিভাগকে নিয়ন্ত্রণ করতে সবাই সচেষ্ট হতে থাকে। এ অবস্থায় বিচার বিভাগকে আরও স্বাধীন, সুদৃঢ় ও কার্যকর করতে বিচার বিভাগের পাশে ও পক্ষে দাঁড়ানো দরকার।’ মঙ্গলবার জাতীয় প্রেসক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে ‘সুশাসনের জন্য নাগরিক’ (সুজন) -এর  উদ্যোগে ‘বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও করণীয়’ শীর্ষক এক গোলটেবিল বৈঠকে নেতৃবৃন্দ এসব কথা বলেন।

সুজন সভাপতি এম হাফিজ উদ্দিন খানের সভাপতিত্বে ও সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদারের সঞ্চালনায় গোলটেবিল বৈঠকে আলোচনায় অংশ নেন বিচারপতি কাজী এবাদুল হক, সৈয়দ আবুল মকসুদ, ড. সি আর আবরার, সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, অধ্যাপক আসিফ নজরুল, ব্যারিস্টার জোতির্ময় বড়ূয়া, অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী প্রমুখ।

গোলটেবিল বৈঠকে প্রবন্ধ উপস্থান করেন সুজন নির্বাহী সদস্য ও বিশিষ্ট আইনজীবী ড. শাহদীন মালিক। তিনি বলেন, ‘প্রধান বিচারপতির মতে, এখন বিচার বিভাগ

আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি স্বাধীন এবং বিচার বিভাগের ওপর জনগণের আস্থা বেড়েছে। কথাগুলো সত্য, কিন্তু এতে আমরা সন্তুষ্ট নই। আমরা চাই বিচার বিভাগের আরও বেশি স্বাধীনতা আর জনগণের আরও বেশি আস্থা। কারণ এই স্বাধীনতা এবং আস্থাই কার্যকর গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার গুরুত্বপূর্ণ পূর্বশর্ত।’

ড. শাহদীন মালিক বলেন, ‘১৯৭৫ থেকে ১৯৯০ সময় বাদ দিলে এখন নির্বাহী ও বিচার বিভাগের মধ্যে টানাপোড়েন সম্ভবত সবচেয়ে বেশি। এই ধাক্কাধাক্কিতে ইদানিং যুক্ত হয়েছে সংসদও। নতুন বিচারপতি নিয়োগ হচ্ছে না, বিচারপতি নিয়োগে আইনের কথাও আলোচনায় আসছে না। কিন্তু আদালতের অনেকগুলো পদ শূন্য। বাজেট বা অর্থ বরাদ্দ নিঃসন্দেহে বিচার বিভাগের কার্যকারিতার একটা অন্যতম নিয়ামক। কিন্তু ২০১৭-১৮ অর্থবছরে আইন ও বিচার বিভাগের জন্য বরাদ্দ প্রায় ১০০ কোটি টাকা কমিয়ে করা হয়েছে ১ হাজার ৪২৩ কোটি টাকা।’

এম হাফিজ উদ্দিন খান বলেন, ‘আমরা বিচার বিভাগকে স্বাধীন ও কার্যকর দেখতে চাই। কিন্তু কলুষিত রাজনীতি বিরাজমান থাকলে বিচার বিভাগ স্বাধীন হবে না। এ অবস্থায় দুর্নীতি রোধ করা এবং রাজনৈতিক সংস্কার দরকার। যাতে বিচার বিভাগকেও স্বাধীন করা যায় এবং মানুষ ন্যায়বিচার পায়।’

ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘নাগরিকের অধিকার সংরক্ষণ করার জন্য ক্ষমতার পৃথকীকরণ নীতির ভিত্তিতে সরকারি ক্ষমতাকে তিনটি বিভাগে ‘আইন, বিচার ও নির্বাহী বিভাগে’ বিভাজন করা হয়। এই তিনটি বিভাগকে সম কিন্তু ভিন্ন ক্ষমতা দেয়া হয়। সংসদের কার্যপ্রণালি বিধির ৫৩, ৬৩, ও ১৩৩ ধারা অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিয়ে সংসদে আলোচনা করা যাবে না। এই বিধি সংসদপ্রণীত একটি আইন। সংসদ সদস্যরা নিজেরাই তাদের করা এই আইন মানেন না। এটা দুঃখজনক।’

বিচারপতি কাজী এবাদুল হক বলেন, ‘বিচার নিষ্পত্তি হতে দেরি হওয়ায় বিচার বিভাগের ওপর মানুষের আস্থা কম। বর্তমানে উচ্চ আদালতে প্রায় তিন লাখ মামলা ঝুলে আছে। নিম্ন আদালতেও ২০ জন বিচারপতির বদলে ১০ জন দিয়ে বিচারকার্য চালানো হচ্ছে। তাই দ্রুততম সময়ের দলীয় বিবেচনার বদলে দক্ষ লোকদের বিচারক হিসেবে নিয়োগ দেয়া দরকার।’

সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন, ‘কোনো দেশের বিচার ব্যবস্থা সে দেশের আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক অবস্থার বাইরে নয়। এটা সব আমলেই যা ছিল এখনো তা’ই। বিচার বিভাগের স্বাধীনতার কথা এ জন্যই বারবার বলা হয়, যাতে রাষ্ট্রের শক্তিশালী ব্যক্তিটির সঙ্গে সবচেয়ে দুর্বল ব্যক্তিটিও ন্যায়বিচার পায়।’

ড. আসিফ নজরুল বলেন, ‘নিম্ন আদালতের স্বাধীনতা নিয়ে আমরা অনেক কথা বলি। কিন্তু উচ্চ আদালতের স্বাধীনতা নিয়ে আমাদের বেশি সোচ্চার হওয়া দরকার। কারণ এটি মানবাধিকার রক্ষার সবচেয়ে বড় প্রতিষ্ঠান।’

ড. সি আর আবরার বলেন, ‘ষোড়শ সংশোধনী বাতিল সংক্রান্ত মামলার পূর্ণাঙ্গ রায় বের হওয়ার আগেই সংসদে এ নিয়ে উত্তেজনাকর বক্তব্য দেয়া হচ্ছে। সংসদ সদস্যরা বলছেন, সংসদ সার্বভৌম। এটি ঠিক নয়। বরং জনগণ সার্বভৌম।’

সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘স্বাধীন দেশে সবাই কেন নিজ নিজ স্বাধীনতা নিয়ে আজকে চিন্তিত, তা গণতান্ত্রিক সরকারকে ভাবতে হবে। বিচারপতি নিয়োগে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে।

(ওএস/এসপি/জুলাই ১২, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

১৬ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test