E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

পর্যবেক্ষক অভিমত

বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি, তবে তীব্র নদী ভাঙনে দিশেহারা মানুষ

২০১৭ জুলাই ১৯ ১২:৫৩:৪৩
বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি, তবে তীব্র নদী ভাঙনে দিশেহারা মানুষ

নিউজ ডেস্ক : বাংলাদেশে চলতি বর্ষা মৌসুমে আতি বৃষ্টি ও সীমান্তের ওপার থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট বন্যার বিপর্যয় কাটতে না কাটতেই দেশের বিভিন্ন জেলায় নদ-নদীতে ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেছে।

রংপুর, গাইবান্ধা, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, জামালপুর, নেত্রকোনা, টাঙ্গাইল, মানিকগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, ফরিদপুর, রাজবাড়ী, শরিয়তপুর, মাদারীপুর এবং বান্দরবানের নদী তীরবর্তী এলাকায় এরইমধ্যে শত শত ঘরবাড়ি, ফসলি জমি, রাস্তা, সরকারি স্থাপনা এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। হাজার হাজার বাসিন্দা নদী ভাংগনের শিকার হয়ে এখন দিশেহারা। হুমকির মুখে থাকা গ্রামগুলোর বাসিন্দাদের দিন কাটছে ভাঙন আতঙ্কে।

পরপর বন্যা ও পাহাড়ি ঢলে পানি তীব্র স্রোতে ফাঁরিখালের তীব্র ভাঙনে পাহাড়ী জেলা বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়িতে শত বছরের পুরনো রাস্তা ভেঙে বিলীন হতে চলেছে

এদিকে শেষ দফার বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে রংপুর অঞ্চলের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো। বানের পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় ৫৯১টি প্রাথমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। আর ভাঙনের মুখে পড়েছে শতাধিক প্রাথমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়। এ ছাড়া নদ-নদীর অব্যাহত ভাঙনের কবলে পড়ে এখন পর্যন্ত ৫৪টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠ, দেয়াল, কক্ষের মেঝে ধসে গেছে।

নেত্রকোনার খরস্রোতা কংস নদীর ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করায় ফকিরের বাজার এলাকার কর্ণপুর, চরপাড়া, পাঁচপাই ও বাঘরুয়া গ্রামের কয়েকশ বাড়িঘর, ফসলি জমিসহ শত শত গাছপালা এরইমধ্যে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ভেঙে যাচ্ছে জেলা শহরের সঙ্গে যোগাযোগের একমাত্র সড়কটিও। হুমকির মুখে রয়েছে আরও চার-পাঁচটি গ্রাম। ভাঙনের কবলে পড়া এসব লোকজন আশ্রয় নিয়েছে আশপাশের এলাকায়। গত দুই বছরে নদী ভাঙনে বারহাট্টার ফকিরের বাজার এলাকায় চারটি গ্রামের প্রায় কয়েকশ বাড়িঘর নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।

টাঙ্গাইলের নাগরপুর উপজেলার যমুনা ও ধলেশ্বরী নদীতে ভাঙন ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে উপজেলার মোকনা ইউনিয়নের আগদিঘুলিয়া বাজারের কমপক্ষে ৩৭টি দোকানঘর, একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, চারটি মন্দির ও শ্মশানসহ অর্ধশতাধিক বসতবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। বহু আবাদি জমি ও গাছপালা এরইমধ্যে ধলেশ্বরী নদীর পেটে চলে গেছে। ভাঙনের হাত থেকে রক্ষা পেতে বাড়িঘর, আসবাবপত্র ও গবাদি পশুসহ মালামাল অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছে।

প্রতিবছর নদীর ভাঙনে মোকনা ইউনিয়নের কেদারপুর আগদিঘুলিয়ার বিস্তীর্ণ এলাকা ভাঙনের কবলে পড়লেও ভাঙন প্রতিরোধে এখন পর্যন্ত কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।

পানি বৃদ্ধির সাথে সাথে মানিকগঞ্জের পদ্মা-যমুনার চরাঞ্চল ও পাড় এলাকায় নদী ভাঙন দেখা দিয়েছে। এতে নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে শত শত একর ফসলী জমি, বসতবাড়িসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। নিঃস্ব হয়ে পড়ছে অনেক পরিবার। শিবালয় উপজেলার চরশিবালয় এলাকার ১টি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও গঙ্গাপ্রসাদ আশ্রয় প্রকল্পসহ বেশকিছু বাড়িঘর নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। চরম আতঙ্কে রয়েছেন, এসব এলাকার লোকজন।

এ প্রসঙ্গে ইনস্টিটিউট অব ওয়াটার এন্ড এনভায়রণমেন্ট-এর চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার এম ইনামুল হক বলেন, নদীমাতৃক বাংলাদেশে নদী ভাংগন একটি নিয়মিত বিষয়। বর্ষার তীব্র স্রোত নেমে যাবার পথে যেমন নদী ভাঙে তেমনি নদী তার গতিপথ পরিবর্তনের টানেও ভাঙে। তাই নদী ভাঙন রোধ করার চেষ্টা অনেকটাই ব্যর্থ প্রচেষ্টা। বরং এসব ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বসতি বা সরকারি স্থাপনা নির্মাণ করা উচিত নয়। তবে এ মূহুর্তে দুর্গত মানুষের জন্য সরকারি ত্রাণ পৌঁছানো জরুরি।

সর্বশেষ প্রাপ্ত খবরে জানা যায়, দেশের উত্তর ও মধ্যাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতির আরও উন্নতি হয়েছে। তবে পানি কমলেও দুর্ভোগ পিছু ছাড়েনি বন্যাকবলিত মানুষের। এখনও খাবার, বিশুদ্ধ পানি ও বসবাসের জায়গার অভাবে দুর্বিষহ জীবনযাপন করছেন তারা। তার ওপর দেখা দিয়েছে নানা রোগ-বালাই।

সোমবার কুড়িগ্রামে বন্যার্তদের মাঝে ত্রাণ বিতরণকালে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বলেছেন, পানি না নামা পর্যন্ত বানভাসি মানুষকে খাদ্য সহায়তা দেবে সরকার। মন্ত্রী আজ নীলফামারীর ডিমলায় ত্রাণ বিতরণ করেছেন।

(ওএস/এসপি/জুলাই ১৯, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

১৬ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test