E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

বাড়ির পাশে আরশি নগর ‘লুটন হু’

২০১৭ নভেম্বর ০৫ ১৬:২২:৪১
বাড়ির পাশে আরশি নগর ‘লুটন হু’

নুরুল ইসলাম খলিফা


যুক্তরাজ্য ভ্রমনের বিষয়টি ফেসবুকে প্রকাশ করার শুরু থেকেই ফেসবুক বন্ধু লন্ডন প্রবাসী ইঞ্জিনিয়ার রেজাউল করিম সাহেব যোগাযোগ রাখছিলেন । ব্যক্তিগতভাবে তাকে আমি চিনতাম না , কিন্তু লন্ডনে দেখা হওয়ার পরে তিনি বলছিলেন যে, আমি যখন ইসলামী ব্যাংক বরিশাল শাখার ম্যানেজার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলাম , তখন তিনি বরিশাল পলিটেকনিকে পড়াশুনা করছিলেন এবং ব্যাংকে তার আসা যাওয়া ছিল । সেই সুবাদে আমাকে তিনি চিনতেন । তার লেখা ‘নির্বাচিত কলাম ‘ বইটি পড়ে তাকে একজন বোদ্ধা লেখক ও সুপন্ডিত বলেই মনে হলো ।

দেখা হওয়ার পরথেকেই তিনি আমাকে কিছুটা সময় দিতে চাইলেন । শীত এবং শারিরীক অসুস্থতার জন্য দূরে কোথাও যাওয়ার আগ্রহী ছিলাম না , তাই কাছাকাছি কোথাও ঘুরে আসবো বললাম । নির্দিষ্ট দিনে তিনি লন্ডন থেকে চলে আসলেন লুটনে এবং লুটনের কাছেই একটি পাঁচ তারা হোটেল লুটন হু (Luton hoo ) দেখতে গেলাম । লুটন শহর থেকে লন্ডনস্ট্রীট ধরে মাইল তিনেক রাস্তা হবে হয়তো । আমরা আট দশ মিনিটের মধ্যেই পৌঁছে গেলাম । স্থানটি লুটন ও হারপেনডেন শহরের মাঝামাঝি ।

রেজাউল করিম সাহেবের সাথী জনাব বরকত উল্লাহ গাড়ী ড্রাইভ করছিলেন । ফাঁকে ফাঁকে গল্প করছিলাম আমরা তিন জন । প্রচন্ড শীতে যতক্ষন গাড়িতে থাকা যায় ততক্ষনই আরাম । গাড়ীর দরজা খুললেই শীত যেন ঝাপটে ধরে । লুটন শহরের কাছেই এমন একটি চমৎকার বাগান বাড়ি এবং তৎসন্নিহিত একটি অত্যাধুনিক পাঁচ তারা হোটেল আছে দেখে চমৎকৃত হলাম । ইতোপূর্বে এসে প্রায় মাস খানেক লুটনে থাকলেও এটা গোচরে আসেনি । খোঁজ খবর নিয়ে জানলাম এটি একটি ঐতিহ্যবাহী জমিদার বাড়ি । জনৈক স্যাকসন জমিদার ( Lord ) ডি হু পরিবারের মালিকানায় এ বাড়িটি ছিল প্রায় চার শ’ বছর । পরবর্তীতে হাত বদল হয়েছে অসংখ্যবার । বাড়িটি এর বাগান ও লেক সহ প্রায় ১২০০ একর ভূমির উপর প্রতিষ্ঠিত । এরই সামনের অংশে ২০০৭ সালের পয়লা অক্টোবর এই বিলাসবহুল হোটেলটি চালু হয় ।

সামনে চমৎকার সুসজ্জিত গার্ডেন ,ঝর্না ইত্যাদি । ফেব্রুয়ারীর এই কনকনে শীতে স্বাভাবিক ভাবেই গাছ গুলো পাতা শূন্য ; সামনের গার্ডেনটিও অনেকটা বিবর্ণ । কিন্তু বুঝতে অসুবিধা হয়না যে ,বসন্তের ছোঁয়া পাওয়ার সাথে সাথে কতটা মোহনীয় ও মাধুর্যমন্ডিত হয়ে ওঠবে এই গার্ডেন এবং পত্র পল্লবে পরিবেষ্টিত বাগানবাড়ি । আমরা হোটেলে সংক্ষিপ্ত লাঞ্চ সেরে নিলাম যেহেতু দুপুর প্রায় পার হয়ে যাচ্ছিল । হোটেল লবিতে বসে গল্পসল্প করছিলাম । হোটেলের গেষ্ট আসছে যাচ্ছে যা মাঝে মধ্যে দৃষ্টি আকর্ষন করছিল । এই বিষয়গুলো মাঝেমধ্যে আমার মনকে ভিন্নদিকে ঘুরিয়ে দেয় । যেমন খেয়া ঘাটে নৌকার জন্য অপেক্ষারত যাত্রীদের দেখে একই অনুভূতি জাগ্রত হয় ।

একদল এসে এপারে নামে , অপেক্ষমান লোকেরা আবার খেয়ায় ওঠে বসে । এপারে নেমে যাওয়া লোকেরা পথ ঘাট মাঠ-প্রান্তর পেরিয়ে তাদের গন্তব্যের দিকে এগিয়ে যায় । ধীরে ধীরে তাদের কন্ঠশব্দ মিলিয়ে যায় , হ্রস্ব হতে হতে মিলিয়ে যায় তাদের ছায়া । নিজ গন্তব্যের দিকে ধাবমান এই যাত্রীরা অদৃশ্যের আড়ালে হারিয়ে যায় - খেয়াঘাটে তাদের তেমন কোনো প্রভাব আর থাকে না । কিন্তু ইতোমধ্যে আবার নতুন যাত্রীরা এসে ঘাট সরগরম করে তুলে ; তারা ওপারের যাত্রী । তারাও ওপারে নেমে এমন করেই এগিয়ে যাবে তাদের গন্তব্যে । খেয়া ঘাটে তাদের ক্ষনিকের পদচারণা ছাড়া আর কোনো চিহ্ন থাকবে না । লুটনহুর লবিতে বসে বোর্ডারদের ব্যাগ-ব্যাগেজ নিয়ে বিদায় হওয়া , হোটেলের ওয়েটারদের স্যালুট দেয়া এবং ব্যাগ-ব্যাগেজ গাড়িতে তুলে দেয়া একই সাথে নতুন বোর্ডাদের আগমন , তাদের অভ্যর্থনা দেখে আমার কেবলই দুনিয়ার জীবনে আসা যাওয়ার কথা মনে হচ্ছিল । বিমানবন্দরে কিংবা রেল স্টেশনে অথবা বাস স্ট্যান্ডে ঠিক একই অনুভূতি সৃষ্টি হয় আমার ।

ভাবছিলাম এই ক্ষনিকের আসা যাওয়ার ষ্টপেজে আমাদের কতইনা দর্প-কতইনা অহংকার ! অন্যের ঘাড়ের উপর পা রেখে নিজেকে উপরে তোলার এক কুৎসিত প্রতিযোগিতা দেখে অবাক হয়ে যাই । এ ধরনের প্রতিযোগিতায় লিপ্ত থেকে জীবনের লক্ষ ভুলে যাই আমরা -ভুলে যাই নিজের অবস্থান । ভুলের ঘুর্নাবর্তে ঘুরপাক খেতে খেতে দেখি ওপারের খেয়া এসে গেছে । তখন হুঁশ হলেও লাভ নেই , কেননা পরপারের খেয়া এসে গেলে ওঠা না ওঠার কোনো স্বাধীনতা থাকে না । লুটন হু থেকে বের হয়ে আসতে আসতে এমন একটি ভাবনা আমার মনকে আচ্ছন্ন করছিল । রেজাউল করিম সাহেবকে অনেক অনেক ধন্যবাদ ‘বাড়ির পাশের এই আরশী নগরের’ সন্ধান দেয়ার জন্য এবং আমার জন্য এতটা সময় ব্যয় করার জন্য । আল্লাহ তাকে উত্তম প্রতিদান দিন !


(এনআইকে/এসপি/নভেম্বর ০৫, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

২০ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test