E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

লাল শাপলার রাজ্যে ছুঁটছেন প্রকৃতি প্রেমিরা

২০২১ সেপ্টেম্বর ২৫ ১৬:০৫:৪৮
লাল শাপলার রাজ্যে ছুঁটছেন প্রকৃতি প্রেমিরা

আঞ্চলিক প্রতিনিধি, বরিশাল : জাতীয় ফুলের সেই শাপলার বিলে ফোটা নয়নাভিরাম লাল শাপলার রাজ্য এখন প্রকৃতি প্রেমিদের দখলে। শাপলার বিমুগ্ধ রুপ উপভোগ করতে প্রকৃতি প্রেমিরা সূর্যোদয়ের আগে ও পরে ছুটছেন শাপলার বিলে। নয়নাভিরাম লাল শাপলার রাজ্য ঘুরে খুশি মনে ফিরছেন সকল বয়সীরা। বর্ষা থেকে হেমন্ত মৌসুম পর্যন্ত লাল শাপলার বিলকে ঘিরে গড়ে ওঠা পর্যটন এলাকায় ঘুরেছে মানুষের অর্থনৈতিক ভাগ্যের চাকাও।   

বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার দক্ষিণ সীমান্ত এলাকা বাগধা ইউনিয়ন ও উজিরপুর উপজেলার সাতলা ইউনিয়নের মধ্যবর্তি বিস্তৃর্ণ বিল এলাকা জুড়ে এই লাল শাপলার রাজ্যের অবস্থান। প্রকৃতির অপরুপ শোভায় সজ্জিত হয়ে ফোটে লাল শাপলার রাজ্যে।

শুক্রবার বিকেলে আগৈলঝাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আবুল হাশেম স্বপরিবারে ঘুরেছেন এই লাল শাপলার রাজ্যে। অনুভুতি প্রকাশ করতে গিয়ে তিনি বলেন- অন্যন্য, অসাধারণ ভাল লাগার একটি জায়গা। প্রকৃতির নিজ হাতে একটু একটু করে শোভা বর্ধণের জন্য মনে হয় রোপন করা হয়েছে এই লাল শাপলা। দৃষ্টি সীমানা পর্যন্ত চোখ ধাঁধানো লাল শাপলার মাঝে মধ্যে সাদা ও হুন্দি শাপলার বাহারী রং পর্যটকদের আরও বেশী আকৃষ্ট করে আসছে।

আষাঢ় মাস থেকে অগ্রহায়ন মাস পর্যন্ত উপজেলার ফোটে শাপলা। বিলের পর বিল এই শাপলা দেখতে প্রতিদিন নৌকায় চরে ঘুরে বেড়াচ্ছেন দেশী বিদেশী প্রকৃতি প্রেমীরা। অনেকে আবার বাজারে শাপলা বিক্রি করে সেই টাকা দিয়ে জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন। বিলে ঘুরতে যাওয়া পর্যটকদের হাতে হাতে দেখা যায় লাল শাপলা। মৌসুমী পর্যটন এলাকায় পরিনত হওয়া সাতলার বিলে অনেকেই পর্যটকদের নৌকায় ঘুরিয়ে আয় করছেন প্রতিদিন দেড় থেকে দুই হাজার টাকা। তবে অনেকেই অভিযোগ করেছেন নৌকা ভাড়াটা একটু বেশীই। প্রকৃতি সমৃদ্ধ হলেও পর্যটকদের জন্য এখনো ড়ড়ে ওঠেনি কোন বাড়তি সুবিধা। তার পরেও একদিনের জন্য ঘুরতে যাওয়ায় প্রতিকুল অবস্থা মেনে নিচ্ছেন ভ্রমন পিপাসুরা।

আগৈলঝাড়া থেকে শাপলার বিলে ঘুরতে যাওয়া অন্তর মাহামুদ বলেন, কয়েক বছর আগেও বর্ষা এবং হেমন্তের সকালে দিগন্ত জোড়া খাল-বিলে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকত লাল শাপলা। সকালের দিকে জলাশয়ে চোখ পড়লে রং-বেরংয়ের শাপলার বাহারী রূপ দেখে চোখ জুড়িয়ে যেত। তবে জমিতে অধিক ফসল ফলনের জন্য জমিতে অধিক মাত্রায় কীটনাশক প্রয়োগ, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সাতলার বিল থেকে কমে যাচ্ছে লাল শাপলা। এক সময়ে শাপলার বিলে দেখা মিলতো দেশী প্রজাতির বিভিন্ন পাখির। শাপলার বিলে সকাল ও সন্ধ্যায় মুখরিত হয় পাখির কলতানে। যা এখন পরিবেশের কারনে আগের মতো আর চোখে পরে না।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা দোলন চন্দ্র রায় জানান, শাপলা প্রধানত দু’রংয়ের হয়ে থাকে। লাল ও সাদা। এরমধ্যে সাদা ফুল বিশিষ্ট শাপলা সবজি হিসেবে ও লাল রঙ্গের শাপলা ঔষধী গুনে সমৃদ্ধ। শাপলা খুব পুষ্টিগুন সমৃদ্ধ সবজি। সাধারণ শাক-শবজির চেয়ে এর পুষ্টিগুন অনেকে বেশী। শাপলায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম। শাপলায় ক্যালসিয়ামের পরিমাণ আলুর চেয়ে সাতগুন বেশি।

তিনি আরো জানান, লাল শাপলা চুলকানী ও রক্ত আমাশয়ের জন্য বেশ উপকারী। প্রতি ১’শ গ্রাম শাপলায় রয়েছে খনিজ পদার্থ ১.৩ গ্রাম, আঁশ ১.১ গ্রাম, খাদ্যপ্রাণ ১৪২ কিলোগ্রাম, ক্যালোরি-প্রোটিন ৩.১ গ্রাম, শর্করা ৩১.৭ গ্রাম, ক্যালশিয়াম ৭৬ মিলিগ্রাম। আবার শাপলার ফল (ঢ্যাপ) দিয়ে চমৎকার সু-স্বাদু খৈ ভাজা যায়। এই ফলটি গ্রামগঞ্জে ঢ্যাপের খৈ নামে পরিচিত। মাটির নিচের মূল অংশকে (রাউজোম) আঞ্চলিক ভাষায় শালুক বলে। নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসে বিল-ঝিল-হাওড়-বাঁওড়-পুকুরের পানি যখন কমে যায় তখন গ্রামগঞ্জের লোকজন জমি থেকে শালুক তোলেন। শালুক খেতেও বেশ সু-স্বাদু। গ্রামগঞ্জে একসময় অভাবী সংসারে শালুক সিদ্ধ করে দিনের খাবার হিসেবেই গ্রহন করা হত। শালুক আমাশয়ের জন্য খুবই উপকারী সবজী। সহজলভ্য হওয়ায় গ্রামের মানুষ প্রতিদিনই শাপলা খাদ্য হিসাবে গ্রহণ আসছে।

কীটনাশকের যথেচ্ছ ব্যবহার ও কার্প জাতীয় মাছ চাষের কারণে শাপলার বংশবৃদ্ধি বাধাগ্রস্থ হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে হুমকির মুখে পরবে জীব বৈচিত্র। তাই জীব বৈচিত্র ধরে রাখতে সরকারের পরিকল্পনা নেয়া উচিত বলেও মনে করেন তিনি।

(টিবি/এসপি/সেপ্টেম্বর ২৫, ২০২১)

পাঠকের মতামত:

১৯ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test