E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Walton New
Mobile Version

অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত 

২০২৩ ফেব্রুয়ারি ০৯ ১৮:৪৩:১০
অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত 

দিলীপ চন্দ, কুয়াকাটা থেকে ফিরে : সমুদ্র দেখতে আমরা কে না ভালোবাসি। সমুদ্রের বিশালতা মানুষকে সব সময় তার কাছে টানে। পৃথিবীর বেশিরভাগ মানুষ এই সমুদ্রের পাশে সময় কাটাতে বেশ পছন্দ করে। যুগে যুগে কবি সাহিত্যিকগণ সমুদ্রকে নিয়ে অনেক সুন্দর সুন্দর উক্তি এবং বাণী করে গেছেন। প্রায় ১৮ কিলোমিটার দীর্ঘ এই কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত থেকে একই সাথে সূর্যোদয় আর সূর্যাস্ত দেখা যায়। এই বৈশিষ্ট কুয়াকাটাকে সকল সমুদ্র সৈকত থেকে অনন্য করেছে। সূর্যোদয় সবচেয়ে ভাল দেখা যায় সৈকতের পূর্ব প্রান্তের গঙ্গামতির বাঁক থেকে। আর সূর্যাস্ত দেখার ভাল জায়গা হচ্ছে কুয়াকাটার পশ্চিম দিকে।

বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলে "সাগর-কন্যা" খ্যাত মনোরম একটি ভ্রমণ স্বর্গ কুয়াকাটা। ভ্রমণ বিলাসী ও পর্যটকদের আনন্দ ভ্রমণ ও অবকাশ সময় কাটানোর অন্যতম মনোরম ও মন-মুগ্ধ কর জায়গা হল সাগর কন্যা কুয়াকাটা। শুধু দেশে নয়, কুয়াকাটার পরিচিতি এখন বিশ্বজুড়ে। বেলাভূমির একই স্থানে দাড়িয়ে সূর্যোদয়-সূর্যাস্তের বিড়ল মনোরম দৃশ্য দেখার সমুদ্র সৈকত। নজরকাড়া প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের কারণে কুয়াকাটার রয়েছে আলাদা সুখ্যাতি। দেশের সর্বদক্ষিণে পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার লতাচাপলী ইউনিয়নের শেষ প্রান্তে সাগরপারের এ জনপদ কুয়াকাটা। প্রায় ১৮ কিলোমিটার দীর্ঘ এবং এক কিলোমিটার প্রস্থ সৈকতের সর্বত্র রয়েছে সুন্দরের সমাহার। চোখ ধাঁধানো সবকিছু। রয়েছে সংরক্ষিত বনাঞ্চল, যার মধ্য দিয়ে বয়ে গেছে অসংখ্য লেক। সৈকত লাগোয়া নারিকেল বীথি। রয়েছে জাতীয় উদ্যান অধীন ইকোপার্ক ও আন্ধার মানিক মোহনার উল্টোদিকের ফাতরার বিশাল ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল। রয়েছে শুটকি পল্লী,লাল কাঁকড়ার চর। অদূরেই রয়েছে পর্যটন-পল্লী গঙ্গামতি সৈকত। পরিচ্ছন্নতার জন্য কুয়াকাটার রয়েছে আলাদা পরিচিতি। সুন্দরের স্বকীয়তায় কুয়াকাটাকে বলা হয় সাগর-কন্যা।

প্রতিদিন শত শত পর্যটক-দর্শনার্থীর পদচারণয় মুখরিত থাকছে কুয়াকাটা। বেলাভূমির সর্বত্র হৈ-হুল্লোড় চলে আগতদের। সাগরের হিম শীতল পানির স্পর্শে শরীরে শিহরণ জাগায় আগতদের। নির্মল আনন্দ আর গভীর প্রশান্তি পেতে মানুষ প্রকৃতির সান্নিধ্য খুঁজে বেড়ায়। প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য তাকে মুগ্ধ করে, ক্লান্তি ও মনের জড়তা ঘুচিয়ে দেয়। সেই প্রশান্তির জায়গা হচ্ছে কুয়াকাটা। জীবনের আমুদে সময় কাটাতে ও মুহূর্তগুলো স্মরণীয় করতে কুয়াকাটায় ভ্রমণের বিকল্প নেই। প্রায় সোয়া দুই শ’ বছর আগে আরাকান থেকে বিতাড়িত দেড় শ’ রাখাইন পরিবার নৌকায় ভাসতে ভাসতে কুয়াকাটা সৈকতে এসে নোঙ্গর করে। শ্বাপদ-সঙ্কুলের এ জনপদে গড়ে তোলেন বসতি। পান করার নিরাপদ পানি ছিল না। কুয়া কেটে (খনন) মিঠা, নিরাপদ পানি সংগ্রহ করেন। ওই কুয়ার নামানুসারেই আজকের কুয়াকাটা। কুয়াকাটার অবিচ্ছেদ্য অংশ এখানকার আদি বাসিন্দা রাখাইন সম্প্রদায়। এদের ভিন্ন আদলের বৈচিত্র্যময় জীবনযাত্রা অবলোকনের সুযোগ রয়েছে। চোখে পড়বে এদের তাঁতসহ উল বুনন কার্যক্রম।

সুযোগ মেলে অন্যতম সৌন্দর্য ইন্দো-চীনের আদলে রাখাইনদের শ্রীমঙ্গল বৌদ্ধবিহার দর্শনের। এছাড়া কুয়াকাটার অদূরে মিশ্রিপাড়ায় রয়েছে সীমা বৌদ্ধবিহার। এ-বিহারের মধ্যে গৌতম বুদ্ধের ধ্যানমগ্ন ১৩৭ মন ওজনের অষ্টধাতু নির্মিত বিশাল আকৃতির বৌদ্ধমূর্তি শোভা পাচ্ছে। রাখাইনদের দাবি এশিয়ার বৃহত্তম বৌদ্ধমুর্তি এটি। নিজের অভিজ্ঞতাকে সমৃদ্ধ করতে কুয়াকাটায় ভ্রমণের বিকল্প নেই। প্রাকৃতিক শোভামণ্ডিত দৃশ্যপট অবলোকনের পাশাপাশি দেশের প্রাচীন পুরাকীর্তি বিভিন্ন বৌদ্ধবিহার ও প্রাচীন কুয়া স্বচক্ষে দেখার সুযোগ রয়েছে। রূপসী কুয়াকাটার নৈসর্গিক রূপ অন্যান্য সৈকতের চেয়ে বহুলাংশে আকর্ষণীয়। জেলেরা এখানে সার দিনরাত মাছ ধরে। ঢেউয়ের সঙ্গে মিতালী করা জীবন-জীবিকার যুদ্ধ অবলোকন করা যায়। কুয়াকাটার শ্রীমঙ্গল বৌদ্ধবিহারের সামনেই সংরক্ষিত রয়েছে কুয়ার পাশেই নতুন সংযোজিত দুই শ’ বছরের প্রাচীন নৌকা। এসব নিদর্শন আর সুন্দরের সমাহার শুধু স্বচক্ষে দেখলেই হৃদয় দিয়ে উপলব্ধি করা যায়।

কুয়াকাটায় সূর্যোদয় দেখার জন্য ঝাউ বনে যাওয়াই ভালো। সেখান থেকেই সূর্যোদয় ভালো দেখা যায়, সমুদ্রের পেট চিড়ে কিভাবে সূর্য উঠে তা দেখার জন্য অনেক লোকই আগে চলে যাবে সেখানে। সকাল বেলা হেটে হেটে ঝাউ বনে যেতে সময় লাগবে ২০ মিনিট। আর ভ্যানে বা মোটরসাইকেলে গেলে অল্প সময়ে যাওয়া যায়। সেখানে সারি সারি ঝাউ গাছ নিঃসন্দেহে সুন্দর। এই বনটি সরকার বনায়ন পরিকল্পনার অধীনে তৈরি করেছে। সূর্যোদয়ের চেয়ে সূর্যাস্তের দৃশ্যটা বোধহয় বেশি চমৎকার। সূর্যটা সমুদ্রে ডুবে যাওয়ার সময় রংয়ের পরিবর্তনটা আপনি স্পষ্টই দেখাতে পাবেন। কুয়াকাটা সৈকতের যেকোন প্রান্ত থেকে সূর্যাস্ত দেখা যায়। তবে দৃষ্টিনন্দন সূর্যাস্ত দেখার জন্য পর্যটকরা ভিড় জমান কুয়াকাটা সৈকতের পশ্চিম প্রান্ত ‘লেবুর বনে’।

(ডিসি/এসপি/ফেব্রুয়ারি ০৯, ২০২৩)

পাঠকের মতামত:

২৭ জুলাই ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test