E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

বঙ্গোপসাগরে আর এক সেন্টমার্টিন ‘বঙ্গবন্ধু আইল্যান্ড’

২০১৬ মার্চ ১৬ ২০:৫৬:৩৬
বঙ্গোপসাগরে আর এক সেন্টমার্টিন ‘বঙ্গবন্ধু আইল্যান্ড’

শেখ আহসানুল করিম, সুন্দরবন থেকে :সুন্দরবনের হিরণ পয়েন্ট, দুবলারচর ও লোনা পানির মাছের খনি সোয়াচ আব নো গ্রাউন্ডের মাঝামাঝি বঙ্গোপসাগরের গভীরে জেগেওঠা বিশাল ভুখন্ডের নাম ‘বঙ্গবন্ধু আইল্যান্ড’। মংলা সমুদ্র বন্দর থেকে ১২০ নটিক্যাল মাইল ও  বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবন উপকূলর দুবলারচর- হিরণ পয়েন্ট থেকে ১০ নটিক্যাল মাইল দূরে সাগর গভীরে এই দ্বীপটি বাংলাদেশের আর এক ‘সেন্ট মার্টিন’।

বঙ্গবন্ধু আইল্যান্ডের চার পাশে সমুদ্রের সচ্ছ নীল জল, নানান প্রজাতির পাখির কিচির-মিচির শব্দ, সৈতকে আছড়ে পড়া সমুদ্রের ঢেউ, বাতাসের শো-শো শব্দে মানুষের মনকে প্রকৃতির গভীরে নিয়ে যায়। মাইলের পর মাইল দীর্ঘ এই সমুদ্র সৈকতে বসে দেখা মেলে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের। প্রায় ১০ কিলোমিটার দীর্ঘ সমুদ্র সৈকতেসহ দ্বীপ জুড়ে ঘুরে ফিরছে হরিণসহ বিভিন্ন বণ্যপ্রাণী, কচ্ছপ, হাজারো লাল রংঙ্গের ছোট-ছোট শিলা কাকঁড়া। সচ্ছ নীল জলে ঘুরছে বিভিন্ন প্রজাতির ছোট-বড় সমুদ্রেক মাছ, কখনো- কখনো দেখা মিলছে ডলফিনের।

সৈকতের নীল জলে নেই কোন হাঙ্গরের আনাগোনা। সৈতকে আছড়ে পড়া ঢেউয়ে শাপরিং এর আদর্শ জায়গা। প্রাকৃতির অপরূপ সৌন্দার্য লীলাভূমি এই বঙ্গবন্ধু আইল্যান্ড যেকোন দেশী-বিদেশী ইকো-ট্যুরিষ্টদের জন্য আর্কষণীয় স্থান। তবে বাংলাদেশের পর্যটন শিল্পের এ উজ্জল সম্ভবনাময় স্থান বঙ্গবন্ধু আইল্যান্ড প্রচার-প্রচারণার অভাব ও বঙ্গপসাগরের অচেনা এক নতুন দ্বীপে নেই কোন দেশী-বিদেশী ইকো-ট্যুরিষ্টদের আনাগোনা। শনিবার সরোজমিনে বঙ্গবন্ধু আইল্যান্ড ঘুরে দেখাগেছে এমনই চিত্র।

দেশের সমুদ্র বিজয়ের পর বঙ্গাপসাগরে বাংলাদেশের বিশাল এলাকার ব্লুইকোনমির কারণে এই দ্বীপটি শুধু প্রাকৃতির অপরূপ সৌন্দার্য লীলাভূমিই নয়,- দস্যু দমন, চোরাচালান প্রতিরোধ ও সমুদ্র নিরাপত্তায় রাখবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। এই লক্ষ্যকে সামনে রেখে কোস্টগার্ড এই দ্বীপে করতে যাচ্ছে এইটি শক্তিশালী বেইজ ক্যাম্প। আগামীতে বঙ্গবন্ধু আইল্যান্ডে কোস্টগার্ডের বেইজ ক্যাম্প নির্মাণ হলে ইকো-ট্যুরিষ্টরা (প্রতিবেশ পর্যটক) র্নিভিগ্নে ঘুরে দেখতে পারবে বঙ্গবন্ধু আইল্যান্ডের প্রাকৃতিক অপরূপ সৌন্দার্য। থাকবে না কোন নিরাপত্তার অভাব।

মংলা কোস্টগার্ড পশ্চিম জোনের পক্ষ থেকে সাংবাদিকদের জানান হয়, বঙ্গবন্ধু আইল্যান্ড দেড় যুগ আগে জেগেওঠে প্রকৃতির নিয়মে বছরের পর বছর ধরে বিশাল আয়তন ধারণ করা এই দ্বীপটি সরকারি ভাবে এখনো কোন জরিপ হয়নি। তবে দ্বীপটির উপকূলে মাছ আহরণে থাকা জেলেদের দাবি বঙ্গবন্ধু আইল্যান্ড প্রায় ১০ কিলোমিটার লম্বা ও পূর্ব-পশ্চিমে ৮ কিলোমিটার প্রশস্ত। বর্ষা মৌসূমেও বঙ্গবন্ধু আইল্যান্ডের অধিকাংশ এলাকায় জোয়ারের পানি ওঠেনা। সরেজমিনে এই দ্বীপ ঘুরে দেখাগেছে, প্রাকৃতিক ভাবে জন্মাতে শুরু করেছে ম্যানগ্রোভ উদ্ভিত সুন্দরী, কেওড়া, গেওয়া, পশুর, গরান, ধন্দুল, বাইন, আমুর, টাইগার ফার্নসহ বিভিন্ন লতাগুল্ম ও অর্কিড। এখন রূপ নিচ্ছে ম্যানগ্রোভ বনে।

ইকোট্যুরিষ্টদের নিরাপত্তা ও সার্বিক বিষয়ে বঙ্গবন্ধু আইল্যান্ডে কোস্টগার্ড ও ট্যুরিষ্ট পুলিশের ক্যাম্প স্থাপনের পাশাপাশি জরুরী প্রয়োজনে হ্যালিপ্যাড, মেডিকেল ক্যাম্প, সুপেয় পানির জন্য প্রয়োজন দীঘি খনন। প্রাকৃতিক দূর্যোগের হাত থেকে রক্ষায় পর্যপ্ত সাইক্লোন সেল্টার, আধুনকি বার, সুইমিংপুল, শপিং কমপ্লেক্স, হোটেল-মোটেল ও গ্যাংওয়ে নির্মান প্রয়োজন। পর্যটকদের নূন্যতম এই সুযোগ সুবিধাটুকু নিশ্চিত করা গেলে বঙ্গবন্ধু আইল্যান্ড ইকো ট্যুরিষ্টদের জন্য হয়ে উঠবে পর্যটনের স্বর্গ।

একযুগ আগে বঙ্গপসাগরে মাছ ধরতে যাওয়া জেলেরা খুবই ছোট এই দ্বীপটিকে চিনতো ‘পুতনির চর’ হিসাবে। বাগেরহাটের রামপাল উপজেলার শ্রীফলতলা গ্রামের মালেক ফরাজী নামের এক জেলে বহরদার বঙ্গবন্ধুর প্রতি নিখাদ ভালবাসায় এই দ্বীপটির নাম করণ করেন বঙ্গবন্ধুর নামে। ২০০৪ সালের ডিসেম্বরে বঙ্গবন্ধুর প্রতি অকৃতিম ভালোবাসা জানাতে মালেক ফরাজী ওই দ্বীপটির নাম ‘বঙ্গবন্ধু আইল্যান্ড’ নামের একটি সাইবোর্ড লিখে নিয়ে ওই দ্বীপে টাঙিয়ে দেয়। এরপর থেকে ওই দ্বীপটির নাম হয়ে যায় বঙ্গবন্ধু আইল্যান্ড। বঙ্গবন্ধু আইল্যান্ড উপকূলে মাছ আহরণে থাকা একাধিক জেলের কাছ থেকে জানাগেছে এতথ্য। কোস্টগার্ডেও এ তথ্যটি নিশ্চিত করেছে। তিন বছর আগে মারা যাওয়া মালেক ফরাজীর বঙ্গবন্ধু আইল্যান্ড এখন গুগল ম্যাপেও স্থান করে নিয়েছে।

মংলা কোস্টগার্ড পশ্চিম জোনের তত্বাবধানে এই প্রথম বাগেরহাট ও খুলনার কয়েকজন সাংবাদিককে শনিবার সকালে নিয়ে যাওয়া হয় বঙ্গবন্ধু আইল্যান্ডে। প্রেট্রোল বোট কেবিন ক্রজারে করে মংলা কোস্টগার্ড ঘাটি থেকে বঙ্গবন্ধু আইল্যান্ডে যেতে সময় লাগে তিন ঘন্টা। বিকেল পর্যন্ত সাংবাদিকদের ঘুরিয়ে দেখানো হয় বঙ্গবন্ধু আইল্যান্ড ও কোস্টগার্ডের বেইজ ক্যাম্পের প্রস্তাবিত স্থান। মংলাস্থ কোষ্টগার্ডের পশ্চিম জোনের ষ্টাফ অফিসার (গোয়েন্দা) লেফট্যানেন্ট এএম রাহাতুজ্জামান এসময় বলেন, বঙ্গবন্ধুর আইল্যান্ডে ইকো-ট্যুরিজমের অপার সম্ভবনাসহ গভীর সমুদ্রে মংলা বন্দরের দেশি-বিদেশি জাহাজের নিরাপত্তা, চোরাচালান প্রতিরোধের পাশাপাশি ট্যুরিষ্ট, জেলে-বনজীবীদের নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে এই দ্বীপে ভূমি বরাদ্দের পরপরই কোষ্টগার্ডের বেইজ ক্যাম্পে নির্মাণ কাজ শুরু হবে। এটি নির্মিত হলে দেশি ও বিদেশি জাহাজের নিরাপত্তা মনিটরিং সহজ হবে। রাডারের মাধ্যমে সমুদ্র উপকূলে বঙ্গাপসাগরে বাংলাদেশের বিশাল এলাকায় আমাদের ব্লুইকোনমি জোনে নিরাপত্তা দেয়া সহজতর হবে। পাশাপাশি বাংলাদেশের আর এক সেন্ট মার্টিন বঙ্গবন্ধু আইল্যান্ডের অপরূপ সৌন্দার্য উপভোগ করতে যেসব দেশী-বিদেশী ইকো-ট্যুরিষ্ট আসবে তাদের নিচ্ছিদ্র নিরাপত্তা দেয়া সম্ভব হবে।


(এসএকে/এস/মার্চ১৬,২০১৬)

পাঠকের মতামত:

২৩ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test