E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

এমএ পাস করেও বেকার প্রতিবন্ধী বাবলু

২০১৫ জানুয়ারি ২৫ ১৬:৫২:১৯
এমএ পাস করেও বেকার প্রতিবন্ধী বাবলু

ধামরাই (ঢাকা) প্রতিনিধি : মা-বাবার আদর স্নেহ থেকে বঞ্চিত জন্মগত প্রতিবন্ধী না হলেও ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে সারাজীবন পঙ্গুত্ব বরন করতে হচ্ছে আশরাফুল ইসলাম নামের এক যুবককে। ডাক নাম বাবলু। পিতা মৃত নাছির উদ্দিন। ধামরাইয়ের সোমভাগ ইউনিয়নের দেপাশাই তার গ্রাম। ১৯৯৫ সালে তিনি (বাবলু) তখন চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র। ওই সময় একদিন জাম পাড়তে গিয়ে গাছ থেকে নিচে পড়ে যায় বাবলু। এতে তার মেরুদন্ডে আঘাত পায়। ভর্তি হয় সাভারের পক্ষাঘাতগ্রস্ত পুনর্বাসন কেন্দ্রে (সিআরপি)। সেখানে পরীক্ষা-নীরিক্ষা করার পর ধরা পড়ে তার মেরুদন্ডের স্পাইনাল কড ছিঁড়ে গেছে।

সেখানে তিন মাস চিকিৎসা দেওয়া হয়। কিন্তু স্বাভাবিক জীবনে আর ফিরে আসতে পারেনি বাবলু। তখন তাকে সিআরপি থেকে চলার জন্য দেওয়া হয় একটি হুইল চেয়ার। হুইল চেয়ারের মাঝেমধ্যে মেরামত করা হলেও সেই পুরনো হুইল চেয়ারের আসল রডটি রেখে বাকিগুলো পরিবর্তন করে ওই চেয়ারটি আজও বহন করে চলেছে বাবলুকে। তার পরিবারের পক্ষ থেকে অর্থের অভাবে উন্নত চিকিৎসা করানো সম্ভব হয়নি। পরে সিআরপি কর্মকর্তাদের সহায়তায় ওই যশোরের শার্শা উপজেলার বাগআচঁড়ার খ্রীষ্টান মিশনারিজের পরিচালনায় ফাদার গ্যাব্রিয়েল এর তত্ত্বাবধানে ‘আশার বাড়ি’তে পাঠিয়ে দেন বাবলুকে। সেখানে ফাদার গ্যাব্রিয়েলের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা নিতে থাকে। সেখানে থেকেই বাবলু প্রাইমারী শিক্ষাজীবন, এসএসসি ও এইচএসসি পাশ করেন হুইল চেয়ারে বসেই।

সেখানে চিকিৎসার পাশাপাশি তাকে অলস বসিয়ে না রেখে গ্যাব্রিয়েল তাদের দিয়ে দরিদ্র পরিবারের ছেলে-মেয়েদেরকে বিনা পয়সায় পড়িয়েছে বাবুল। এছাড়া হাতের কাজ হিসেবে কাপড়ে এমব্রয়ডারীর কাজও করেছে। এভাবেই সেখানে কেটে যায় ছয়টি বছর। ছয় বছর পর একবার গ্রামে ফিরে আসে বাবলু। কিন্তু গ্রামে এক ভাই সাইফুল ইসলাম ও চাচা লোকমান হোসেন ছাড়া তার আপন বলতে কেউ। সেই আশার বাড়িতে থাকাকালিন ফাদার গ্যাব্রিয়েল ও চাচা লোকমান হোসেনের সহায়তায় মানিকগঞ্জ দেবেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে ভর্তি হয় অনার্সে। কলেজের হোস্টেলে থেকে বাবুল বিবিএস (অনার্স)এ দ্বিতীয় শ্রেণিতে পাশও করেছেন। ওই সময় দেবেন্দ্র কলেজের হোস্টেলে থেকে লেখা-পড়ার খরচ জোগান দিয়েছে গ্যাব্রিয়েল।

তিনি (গ্যাব্রিয়েল) বাবলুর নামে ব্যাংকে ৬ মাস অন্তর অন্তর ৯ হাজার করে টাকা পাঠিয়েছেন। দেবেন্দ্র কলেজে হোস্টেলে থাকাকালীন হল সুপারের দায়িত্বে ছিল বাবলুর পাশের চাপিল গ্রামের শাহজাহান স্যার। তিনিও তাকে হোস্টেলে থাকা খাওয়ার বিষয়ে বেশ সহযোগিতা করেছেন। পরে আবার সেই গ্যাব্রিয়েলের সহযোগিতায় সাতক্ষীরার রিশিল্পি ইন্টারন্যাশনাল নামের একটি এনজিওতে ‘অফিস সহকারি কাম কম্পিউটার অপারেটর’ পদে স্বল্প বেতনে ২ বছর চাকুরী করেন। চাকুরি করাবস্থায় গ্যাব্রিয়েলের অনুপ্রেরনায় সাতক্ষীরা সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ থেকে ব্যবস্থাপনা বিষয়ে (ম্যানেজমেন্ট) দ্বিতীয় শ্রেণিতে মাষ্টার ডিগ্রী পাশ করেন সেই হুইল চেয়ারে বসেই। দুর্বিসহ জীবনের মধ্য দিয়েইে সে কম্পিউটাও চালাতে শিখেছে। এখন সেই মহাপুরুষ গ্যাব্রিয়েল শারিরীক অসুস্থ্যতার দরুন তার দেশ ইতালিতে চলে গেছেন বলে জানান বাবলু। গ্যাব্রিয়েল ইতালি চলে যাওয়ার পর বাবলু এখন অভিভাবকহীন হয়ে পড়েছে। সেই ‘আশার বাড়ীটি’তে আগের মত সহযোগিতা করার কেউ নেই।

আশরাফুল ইসলাম বাবলু উল্লেখিত ঘটনাবলি জানিয়ে বলেন, বাবা মারা যাবার পর তার মা অন্যত্র বিয়ে করেন। এর দুই মাস পরেই গাছ থেকে পড়ে ১৯৯৫ সাল থেকে আজও সে পঙ্গুত্ববরণ করছে। অর্থাভাবে অতিকষ্টে দিন কাটছে তার। বাবার সহায় সম্পত্তিও ছিলনা। দুই ভাইয়ের মধ্যে সে বড়। ছোটভাই পৃথক সংসার পেতেছে। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকুরীর আবেদনও করেছে। কিন্তু কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে তার শারীরিক প্রতিবন্ধকতা। এছাড়া চাকরী দেওয়ার মতো তার নেই কোন অভিভাবক। তার ইচ্ছা সরকারি হোক আর বেসরকারি হোক বর্তমানে তার একটা চাকুরীর জরুরী প্রয়োজন।

তিনি জানান, একবার প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারি শিক্ষক পদে আবেদন করেছিল কিন্তু ওই নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়ে যাওয়াতে তা বাতিল করা হয়। পরবর্তীতে ওই পদে পরীক্ষা দিতে যাওয়ার সময় হুইল চেয়ার নিয়ে তাকে বাসে উঠতে দেয়নি বাস কর্তৃপক্ষ। ফলে ওই পরীক্ষায় অংশগ্রহন করতে পারেনি। তবে গত সর্বশেষ নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারি শিক্ষক পদে সে আবেদন করেছে। একটি চাকুরী ব্যবস্থা করে দেওয়ার জন্য গত কিছুদিন পূর্বে ধামরাই উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা এসএম রফিকুল ইসলামের সাথে যোগাযোগও করেছেন তিনি। তার জন্ম তারিখ ২০ এপ্রিল ১৯৮৭।

(এএইচ/এএস/জানুয়ারি ২৫, ২০১৫)

পাঠকের মতামত:

২৩ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test