E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

বিছানাগত এক মুক্তিযোদ্ধা

২০১৫ মার্চ ২৬ ১৫:০০:৫০
বিছানাগত এক মুক্তিযোদ্ধা

গৌরীপুর (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি : গুলি ও গ্রেনেডের গর্জন নেই, নেই ভয়ঙ্কর সেই কালোরাত, আতঙ্কে আঁতকে উঠার ভয় নেই, তবু চোখে তাঁর অশ্রুবন্যা। বয়সের ভারে নুয়ে পড়েছে জীবন। অর্থাভাব ও অসুখ-বিসুখের সাথে যুদ্ধ করে ৭১’র সেই বীর মুক্তিযোদ্ধা বিছানায় পড়ে কাঁদছে।

অসহায় পরিবারের শেষ সম্বল দিয়ে চলছে জীবন রক্ষার সংগ্রাম। সনদ নেই, নেই কোন সহযোগিতা। ৭১’র বীরত্বের সনদ আর বাঁচার জন্য প্রধানমন্ত্রীর নিকট অর্থনৈতিক সহযোগিতা চাইলেন বীরমুক্তিযোদ্ধা এস.কে চান্দা।

ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার পৌর শহরের চকপাড়া মহল্লার এস.কে চান্দা (চান্দ) ৭১’র মহান মুক্তিযুদ্ধে জীবনবাজি রেখে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। পাক হানাদার, রাজাকার, আল বদর, আল শামসদের তথ্য সংগ্রহ করতে তিনি পাগলের অভিনয় করতেন। পাগলা মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে পরিচিতিও ছিলেন তিনি। ময়মনসিংহ তারা কমান্ডারের অধীনে নাজিরপুর সম্মুখ যুদ্ধে অংশ নেন এস.কে চান্দা। ভারতীয় প্রামাণ্য দলিল, ইবিআরসি তালিকা, নাজিরপুর যুদ্ধ ক্ষেত্র সহ সর্বত্র তালিকাভূক্ত হলেও মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে স্বাধীনতার ৪৪বছরেও গেজেটভূক্ত হয়নি। নোয়াখালীতে ইবিআর ক্রমিক নং- ১১৫২। বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টে রক্ষিত ভারতীয় প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের প্রামান্য দলিলের ৪নং খন্ডের ২৯১৮৬ নং ক্রমিকে নাম লিপিবদ্ধ রয়েছে। সংশয় বিরাজ করছে তিনি কি মৃত্যুর আগে গেজেটভূক্ত মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে লাল-সবুজ খচিত সনদ দেখে যেতে পারবেন?

শুধুমাত্র গেজেটভূক্ত না হওয়ায় ৭১’র হাতিয়ার আজ লাল-সবুজের পতাকা দেখে কাঁদে, কাঁদে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি দেখেও। হৃদয়ে অজান্তে জায়গা করে নেয় মুক্তিযুদ্ধের সেই ভয়াল রাতের কথা। আশান্বিত হয় বঙ্গবন্ধুর তনয়া শেখ হাসিনাকে দেখে। তবে অসুস্থ অবস্থায় বিছানায় ইনজেকশানের সুঁই, রোজ ৩/৪বার ট্যাবলেট খাওয়া, দৈনিক নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করিয়ে শেষ সম্বুলটুকু হারিয়ে আজ চোখে শুধুই অন্ধকার দেখছেন। মূত্রনালিতে একটি অপারেশনের পর উচ্চ রক্তচাপের কারণে হার্টব্লক হয়ে যায়।

এ চিকিৎসা করে একটু সুস্থ্যতার পরেই আবার শরীরের ডানপার্শ্বের কিডনী অচল হয়ে যায়। ছেলেরাও বাবার চিকিৎসা খরচ যোগাতে গিয়ে নিঃস্ব। এ প্রতিনিধিকে দেখেই দু’চোখ গড়িয়ে পড়ে জল। তিনি বললেন, আমি বাঁচতে চাই, আমাকে বাঁচান। বিছানায় ৭১’র গর্জে উঠা সেই মুক্তিযোদ্ধা আজ অশ্রু বিসর্জন করছেন। পাকহানাদার, দালাল, আল বদর, আল সামছ আজ তার প্রতিপক্ষ নয় উচ্চ ব্যয়ের কঠিন অসুখ প্রধান শত্রু। জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিকট সনদ আর আর্থিক সহযোগিতা চান মুক্তিযোদ্ধা এস.কে চান্দা (চান্দ)। ডাক্তারের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করেই বার বার বলতে চাইলেন ৭১’র যুদ্ধাবস্থা সেই দিনগুলোর কথা।

মহান স্বাধীনতা সংগ্রামে জীবনবাজি করে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়ার ৪৪টি বছর অতিক্রম করার পরেও আজও স্বাধীন দেশের গেজেটে নাম নেই এস.এক চান্দার। ইবিআর, ভারতীয় প্রামাণ্য দলিল, নাজিরপুর যুদ্ধ ভূমিতে নামঙ্কিত আছে। এই মুক্তিযোদ্ধার কল্যাণে সনদ আর মৃত্যুর পূর্বে বিনাচিকিৎসায় যেন মৃত্যু না হয় সেই দায়িত্বটুকু কি মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় পালন করবে?

(এসআইএম/এএস/মার্চ ২৬, ২০১৫)


পাঠকের মতামত:

১৯ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test