E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শিরোনাম:

খাদিজার এগিয়ে চলার স্বপ্ন কি থেমে যাবে !

২০১৫ জুন ০৭ ১৫:০৭:৫৩
খাদিজার এগিয়ে চলার স্বপ্ন কি থেমে যাবে !

কলাপাড়া (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি : ‘জাইল্যার মাইয়া, ল্যাহা পড়া কইর‌্যা কি হইবে। নামাজ-কালাম শেখলেই স্বামীর ঘরে যাইয়া রাইন্দা-বাইন্দা খাইতে পারবি। এ্যাতো বই পইলে বিয়ার পর সংসার সামলাবি ক্যামনে’। পটুয়াখালীর কলাপাড়ার খাজুরা জেলে পল্লীর মেধাবী খাদিজাকে এই কথা শুনতে শুনতেই বড় হতে হয়েছে। এবার দাখিল পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পাওয়ায় সেই খাদিজা এখন গোটা জেলে পল্লীর মেয়েদের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। কিন্তু তার এগিয়ে চলা হয়তো এখানেই থেমে যাবে দারিদ্রতার কারণে।

খাদিজার অনেক সহপাঠী এখন গৃহবধূ ও সন্তানের মা। কিন্তু সেই ছোট থেকে বড় হওয়ার স্বপ্ন খাদিজাকে সবার থেকে এগিয়ে রেখেছে। যে পল্লীর মেয়েদের স্কুলের গন্ডি পার হওয়ার আগেই স্বামীর সংসারে যেতে হয়, সেই জেলে পল্লীর মেয়ে মোসাঃ খাদিজা জিপিএ-৫ পেয়ে সবাইকে চমকে দিয়েছে। এখন সে গোটা জেলে পল্লীর শিশুদের মাছ ধরা না, লেখাপড়ায় আগ্রহী করতে খুলেছে পাঠশালা। যেখানে লেখাপড়া করছে সব জেলে পরিবারের ছেলে-মেয়ে।
দরিদ্র জেলে আনোয়ার গাজীর চার সন্তানের মধ্যে তৃতীয় খাদিজা। বড় দুই মেয়েকে যখন বিয়ে দিয়েছেন তখন তারা স্কুলের গন্ডিও পেরোয়নি। ছোট ছেলে হানিফা (৯) হার্টের সমস্যায় শয্যাশায়ী। তার চিকিৎসার জন্য প্রায় দুই লাখ টাকা প্রয়োজন। কিন্তু আর্থিক সংকটে হাসপাতালে ভর্তিও করাতে পারছেন না।
কুয়াকাটার খাজুরা বেড়িবাঁধের বাইরে ত্রানের একটি জীর্নঘরে খাদিজাদের বাস। এই গ্রামের খাদিজার বয়সী অধিকাংশ কিশোরী এখন স্বামীর সংসার করলেও প্রায় তিন/চার কিলোমিটার হেঁটে কুয়াকাটা দাখিল মাদ্রাসায় নিয়মিতি ক্লাস করতো খাদিজা। জেলের মেয়ে কেন লেখাপড়া করতে পারবে না এ জেদ তাঁকে আজ সাফল্যের উচ্চতায় নিয়ে গেলেও আর্থিক সংকটে হয়তো এখানেই থেমে যেতে হবে।
খাদিজা জানায়,‘ঘরে অসুস্থ্য ভাই। বাবায় তো হারাদিন সাগরেই থাহে। কিন্তু সাগরে যে মাছ পায় হেইয়া দিয়া দুইডা ডাইল,ভাত ও ভাই’র অসুধ কিনতে কিনতে শ্যাষ। কলেজে ভর্তি হইতে ম্যালা টাহা। এই টাহা মোর বাবায় কই পাইবে’।
লেখাপড়া শেষ করে স্কুল শিক্ষিকা কিংবা বড় চাকুরী করা ইচ্ছে ছিলো তার। তাই জেলে পল্লীর শিশুদের শিক্ষার আলোতে আলোকিত করতে নিজ উদ্যেগে এলাকার ২৫/৩০শিশুকে সকাল-বিকাল পাঠদান করাতো খাদিজা। কিন্তু আর্থিক সংকটে নিজের স্বপ্ন ভেঙ্গে গেলেও জেলে গ্রামের শিশুদের প্রতিদিন পাঠদান করাচ্ছে এখনও আপন মনে।
খাদিজার পিতা আনোয়ার গাজী বলেন,‘স্বপ্ন আছিলো মাইয়াডারে ল্যাহাপড়া করামু। কিন্তু সাগরে মাছ না পড়ায় অনেক টাহা দেনা হইয়া গেছি। সাগরে যুদ্ধ কইর‌্যা মাছ ধরি,কিন্তু টাহা ঘরে আনতে পারি না। মহাজনগো দেতে দেতে শ্যাষ হইয়া গ্যাছি। এ্যাহন অরে যে কলেজে ভর্তি করমু,বই কিইন্না দিমু হেই টাহা পামু কই।’
কুয়াকাটা দাখিল মাদ্রাসার সুপার সৈয়দ ফারুক হোসেন জানান, খাদিজা অনেক মেধাবী। একটু সহায়তা পেলেই তার বিশ্বাস ভবিষতেও সে এই রেজাল্ট ধরে রাখতে পারবে। কিন্তু তার পরিবারের অবস্থা ভালো না। তাই কলেজে ভর্তি করবে কিভাবে।
(এমআর/পিবি/জুন ০৭,২০১৫)

পাঠকের মতামত:

০২ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test