E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

সুমাইয়ার মুখের হাসি কি থাকবে

২০১৫ জুন ১২ ১৬:০৭:৪১
সুমাইয়ার মুখের হাসি কি থাকবে

নড়াইল প্রতিনিধি : নারী শিক্ষার এক অদম্য প্রতীকের নাম সুমাইয়া। শত কষ্টের মাঝেও হাসি তার মুখে লেগেই থাকে। এবার সে হাসির সাথে যোগ হয়েছে এসএসসি পরীক্ষায় সাফল্যের আনন্দ। বৈদ্যুতিক আলো বা মোমবাতির আলোতে নয়।

অর্থাভাবে কেবল মাত্র দিনের আলোয় লেখাপড়া করে পেয়েছে জিপিএ -৫। আলোকিত করেছে গোটা আশ্রয়ন প্রকল্প এলাকা। সুমাইয়া নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার মাইটকুমড়া আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দা। তার সাফল্যে আনন্দে ভাসছে আশ্রয়ণ প্রকল্পের গোটা এলাকা।

সুমাইয়া খানম এ বছর নড়াইলের লোহাগড়া পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের কারিগরি বিভাগ থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে জিপিএ-৫ পেয়েছে। ভালো ফলাফলের কারণে তাদের খুপড়ি ঘরটি ক্ষণিকের আনন্দে ভরে উঠলেও নতুন করে দুশ্চিন্তা ভর করেছে সুমাইয়ার পরিবারে। তার পিতা সমান্য একজন মৌসুমি ফলবিক্রেতা।

সুমাইয়ার বাবা শহীদ বিশ্বাস জানান, শত বাধা পার হয়েও ভালো ফলাফল করেছে সুমাইয়া। এই আনন্দের মাঝেও তারা সুমাইয়ার ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন।

সুমাইয়ার মা জাহেদা বেগম আক্ষেপ করে বলেন, ‘আমার ঘরে বিদ্যুৎ নাই, টাকার অভাবে সময়মত কেরোসিন তেল কিনতে না পারায় বেশির ভাগ দিনেরবেলা লেখাপড়া করেছে সুমাইয়া। অভাব-অনটনের সংসারে তিনবেলা ঠিকমতো ভাতও জোটেনি ওর।’

শত প্রতিবন্ধকতার মাঝেও বাঁধভাঙ্গা খুশিতে হাসছে সুমাইয়া। শেষ পর্যন্ত সেই হাসি থাকবে তো তার মুখে? এমন প্রশ্ন বারবার ঘুরপাক খাচ্ছে তার বাবা-মায়ের মনে। আশ্রয়ণ প্রকল্পের বরাদ্দে পাওয়া জীর্ণ ঘরটিতে বাবা-মায়ের সাথেই তার বসবাস।

সুমাইয়ার সাফল্যে আনন্দিত আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দা আসমানী বেগম বলেন, ‘পাশের ছেলেমেয়েরাও ওর মতো ভালো ফলাফল করে আশ্রয়ণ প্রকল্পের প্রতিটি ঘর উজ্জ্বল করুক, এটাই চাই।

প্রতিবেশী সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী সুমি জানায়, সুমাইয়ার ভাল রেজাল্টে পড়ালেখার প্রতি উৎসাহ বেড়েছে তার। আশ্রয়ণ প্রকল্পের অপর শিক্ষার্থী ইব্রাহিম বলে, অনেক কষ্টের মাঝেও সুমাইয়া আপু জিপিএ-৫ পেয়েছে। আমিও তার মতো ভালো ফল করতে চাই।

লোহাগড়া পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের কারিগরি বিভাগের শিক্ষক আব্দুস ছালাম বলেন, ‘সুমাইয়া ভবিষ্যতে লেখাপড়ার সুযোগ পেলে এগিয়ে যেতে পারবে।’ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক এসএম হায়াতুজ্জামান বলেন, ‘আশ্রয়ণ প্রকল্পে শুধু দরিদ্র মানুষেরাই থাকেন না, সেখানে মেধাও থাকে। সুমাইয়াই তার প্রমাণ। অন্যদেরও অনুপ্রেরণা জোগাবে সে।

সুমাইয়ার ইচ্ছে, পড়ালেখা শেষ করে সরকারি উর্ধ্বতন কর্মকর্তা হয়ে তার মতো দরিদ্র মেধাবীদের সহযোগিতা করা। এদিকে সুমাইয়ার বড় ভাই জাহিদুল ইসলামেরও ইচ্ছে, লেখাপড়া শেষ করে চাকরিতে ঢুকে পড়া। কম্পিউটার বিষয়ে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে অধ্যয়নরত জাহিদুল লেখাপড়ার পাশাপাশি প্রাইভেট পড়িয়ে সংসারে খরচ জোগাচ্ছে।

সুমাইয়ার এই অসামান্য সাফল্যে সরকারসহ বিত্তবানরা এই অসহায় মেধাবীর পাশে দাঁড়াবে। এমনটাই প্রত্যাশা আশ্রয়ন প্রকল্প বাসির।

(টিএআর/এএস/জুন ১২, ২০১৫)

পাঠকের মতামত:

২৫ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test