E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

বাবার স্বপ্ন পূরণ করতে চায় নিজমা

২০১৫ আগস্ট ২৬ ১৬:২০:১৫
বাবার স্বপ্ন পূরণ করতে চায় নিজমা

নড়াইল প্রতিনিধি : কেবল অদম্য ইচ্ছা থাকলেই ছোঁয়া যায় সীমাহীন আকাশটাকে। হার মানে অভাব-দৈন্যতা, ধরাদেয় সফলতা। আর এমনি এক অদম্য শিক্ষার্থী নিজমা খানম। নড়াইল সদর উপজেলার বল্লারটোপ আইডিয়াল কলেজের পরীক্ষার্থী নিজমা এবছর এইচএসসি পরীক্ষায় পেয়েছে জিপিএ-৫। ভ্যান চালক বাবার অভাবের সংসারে ক্ষণিকের আনন্দ ধরা দিলেও আর্থিক দৈন্যতায় উচ্চ শিক্ষা নিয়ে নতুন করে সংশয় দেখা দিয়েছে তার  পরিবারে।

ভ্যান চালক বাবার সামান্য উপাজর্নে এবং কলেজ কর্তৃপক্ষের সহযোগিতায় গ্রামের কলেজ থেকে বাণিজ্য শাখায় ভাল ফলাফল করে নিজমা। উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে নিজমা তার বাবা ও মায়ের স্বপ্ন পূরণসহ দেশের কল্যাণে কাজ করতে চায়।

নড়াইল সদর উপজেলার বাসগ্রাম ইউনিয়নের দৌলতপুর গ্রামের ভ্যান চালক মাহাবুর শেখের মেয়ে নিজ্মা পঞ্চম শ্রেণিতে বৃত্তিসহ এসএসসি পরীক্ষাতেও (জিপিএ-৪.৯৪) ভালো ফলাফল করার পর বাড়ি থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার দূরে বল্লারটোপ আইডিয়াল কলেজে ভর্তি হন। আর্থিক সমস্যার কারনে নিজমাকে তিন কিলোমিটার পথ পায়ে হেটে কলেজে আসা-যাওয়া করতে হতো। মাঝে মধ্যে তার বাবাও নিজের ভ্যানে কলেজে আনা-নেওয়া করতেন।

বল্লারটোপ আইডিয়াল কলেজের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক বাবলু সরকার জানান, নিজমা অত্যান্ত মেধাবী ছাত্রী। তার বাবার পক্ষে পড়াশোনার খরচ বহন সম্ভব ছিল না, বিধায় উচ্চমাধ্যমিক পড়ার সময়ে নিজমার ভর্তি থেকে শুরু করে পরীক্ষার ফরমপূরণ পর্যন্ত সব খরচ কলেজ কর্তৃপক্ষ বহন করেছে।মেধাবী এই ছাত্রী যদি পড়াশোনার সুযোগ পায় তাহলে আগামীতেও ভাল কিছু করতে পারবে।

বল্লারটোপ আইডিয়াল কলেজের অধ্যক্ষ সাইদুর রহমান জানান, নিজ্মার লেখাপড়ার খরচ বহনসহ তাকে সার্বিক সহযোগিতা কলেজ থেকে করা হয়েছে। তবে তার উচ্চ শিক্ষার ক্ষেত্রেও সহযোগিতার প্রয়োজন। সুশিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে নিজমা ভবিষ্যতে ব্যাংকে চাকুরি করতে চায়। অসহায় বাবা ও মায়ের স্বপ্ন পুরণ করে তাদের মুখে হাসি দেখতে চায়।

তার পড়াশোনার খরচ বহনকরতে সমাজের শিক্ষানুরাগী ও দানশীল ব্যক্তিদের সহযোগিতা প্রয়োজন। সরেজমিন নিজ্মার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, তার বাড়ির দক্ষিণ পোতায় দো-চালা বিশিষ্ট এবং উত্তর পোতায় ছোট একটি টিনের ঘর রয়েছে।

পূর্বপোতায় একটি টিনের ঘর থাকলেও সেটি নিজ্মার বড় ভাইয়ের। ঘরে পড়াশোনার মত পরিবেশ না থাকায় মাঝে মধ্যে ভাইয়ের ঘরে বসে পড়াশোনা করতে হয় তাকে।
নিজ্মার বাবা মাহাবুবুর শেখ জানান, বাড়ির নয় শতক এবং বিলে ১২ শতক জমি ছাড়া তাদের আর কোনো জমিজমা নেই। ভ্যান চালিয়ে পাঁচজনের সংসার চালাতে হয়। নিজ্মা ছাড়াও তার ছোট ভাই আবুল কালাম আজাদ মাদরাসায় আলিম শ্রেণিতে লেখাপড়া করছে। আর একভাই প্রতিবন্ধী এবং মা সবুরোন নেসা গৃহিণী।

তিনি কষ্টের সাথে জানান, বয়সের ভারে এখন ভ্যান চালাতে কষ্ট হয়। কিন্তু সংসারের খরচ এবং ছেলে ও মেয়ের পড়াশোনার জন্য ভ্যান চালাতে হচ্ছে। তিনি স্বপ্ন দেখছেন মেয়েকে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করবেন। এজন্য তিনি দানশীল ব্যক্তিদের সহযোগিতা কামনা করেছেন।

নিজ্মার ভালো ফলাফলে গ্রামবাসীও অনেক খুশি। অবহেলিত দৌলতপুর গ্রামের শাহাদত খন্দকার ও রতন শেখ জানান, নিজমা গ্রামবাসীর মুখ উজ্জ্বল করেছে। সে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে গ্রামের উন্নয়নে কাজ করবে এই প্রত্যাশা করি।

বাসগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম জানান, অতি দরিদ্রতার মধ্যেও নিজ্মা অনেক ভালো ফলাফল করেছে। নিজমার স্বপ্ন যেন বাস্তবে রূপলাভ করে সে জন্য বিত্তবানদের সহযোগিতার আবেদন জানান।

(টিএআর/এএস/আগস্ট ২৬, ২০১৫)

পাঠকের মতামত:

২০ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test