E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শিরোনাম:

দুই সন্তানসহ অন্ত:সত্তা বিধবা লাকী এখন কি করবে!

২০১৬ সেপ্টেম্বর ০৮ ১৫:৫১:৩৮
দুই সন্তানসহ অন্ত:সত্তা বিধবা লাকী এখন কি করবে!

মাদারীপুর প্রতিনিধি : ১২ বছর বয়সে বিয়ে হয় লাকী বেগমের। এরপর দুই সন্তানের মা। আর বর্তমানে অন্তঃসত্তা লাকী বেগম তৃতীয় সন্তান জন্ম দেয়ার আগেই মাত্র ২৮ বছর বসয়েই বিধবা হয় সে। এখন দুই সন্তান ও অনাগত সন্তানদের নিয়ে কোথায় যাবে কি করবে কিভাবে এদের মানুষ করবে জানেনা সে। চোখের সামনে শুধু অন্ধকার। বাল্য বিয়ের কারণেই আজ তার জীবনে এই অনিশ্চয়তা নেমে এসেছে বলে লাকী মনে করেন।

স্থানীয়, পারিবারিক ও লাকীর সাথে কথা বলে জানা তার অনিশ্চিত জীবন আর কষ্টের কথা। বরিশালের গৌরনদীতে তার বাবার বাড়ি। বাবার নাম মোজ্জাফর আলী খান। মা ফরিদা বেগম। বড় ভাই মিন্টু খানের জন্মে পরের বছরের লাকীর জন্ম হয়। লাকীর বয়স যখন মাত্র ৪/৫ বছর। ঠিক তখন তার বাবা মারা যায়। এর দুই বছর পর মা ফরিদা বেগম ছোট্ট মেয়েকে শশুরবাড়ি ফেলে ছেলেকে নিয়ে আবার বিয়ে করে অন্য জায়গায় চলে যায়।

লাকীর দাদী তার দেখা শুনা করে। স্কুলে ভর্তি করে। ৫ম শ্রেণীর উঠার পর দাদীও মারা যায়। কি আর করার। কোথায় যাবে। কে দেখা শোনা করবে লাকীর। তার মা ফরিদা বেগম বিয়ে দিয়ে দেয় লাকীর।

মাদারীপুর সদর উপজেলার মাদ্রা গ্রামের ছালাম মোল্যার সাথে বিয়ে হয়। ছালাম মোল্যা বার্বুচির কাজ করে আবার কখনও নছিমন চালিয়ে কোন রকমভাবে সংসার চালায়। বিয়ে কি, সংসার কি তা বোঝার আগেই কোলজুড়ে আসে ছেলে আল-আমিন। নিজের পড়াশুনার সুযোগ না পেলেও তার সন্তানরা যেন শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত না হয়, তাই ছেলেকে স্কুলে ভর্তি করে দেয়। বর্তমানে আল-আমিন শহরের পুরানবাজার এলাকার রাজ্জাক একাডেমীতে ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে পড়ছে।

দ্বিতীয় সন্তান সাদিয়া আক্তারকেও পড়াশুনা শিখিয়ে শিক্ষিত করে তবেই বিয়ে দিবে। যাতে করে তার মতো বাল্য বিয়ের শিকার হতে না হয়। তাই তাকেও পুরান শহর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি করে দেয়। সাদিয়া প্রথম শ্রেণীতে পড়ে।

ছেলে-মেয়ে-স্বামী আর অনাগত সন্তানের জন্মের অপেক্ষায় দিনগুলো ভালো যাচ্ছিল। কিন্তু এরমধ্যেই নেমে আসে লাকীর জীবনে অন্ধকার।

২০ আগস্ট জীবীকার তাগিদে নছিমন নিয়ে বের হলে গোপালগঞ্জের ছাগলছিড়া নাম স্থানে ট্রাক আর নছিমনের মুখোমুখি সংর্ঘষে মারা যায় স্বামী ছালাম মোল্যা।

মুর্হূতেই নেমে আসে লাকীর জীবনে অন্ধকার। শহরের পূর্বরাস্তি ভাড়া করা বাসায় কোন রকম খেয়ে না খেয়ে জীবন যাপন করছে। স্বামী প্রায় দেড় লাখ টাকার ঋণ করে গেছে। পাওনাদারও ভীর করে তার দরজায়। ছেলে মেয়েদের পড়াশুনা অনিশ্চিত হয়ে গেছে। অনাগত সন্তান জন্ম হলে তাকে কিভাবে বড় করবে তাও অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।

তাই লাকীর জীবন এখন শুধুই অন্ধকার। বাল্যবিয়ের কুফল তার জীবনকে উল্টে-পাল্টে দিয়েছে। পড়াশুনা করতে না পারায় আজ তার কোন চাকুরী পাওয়াও সম্ভব নয়।

এ ব্যাপারে লাকী বেগম বলেন, আমার জীবনে যা ঘটেছে। তা আমার মেয়ের জীবনের ঘটাতে চাইনা। আমি আমার সন্তানদের পড়া শুনা করে মানুষ করতে চাই। কিন্তু কিভাবে করাবো জানিনা। কোথায় যাবো তাও জানিনা। বাল্য বিয়ে আর পড়াশুনা করতে না পারায় আজ আমার জীবন এই অবস্থা।

এ ব্যাপারে মাদারীপুর মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা মাহমুদা আক্তার কণা বলেন, একজন মেয়ের যখন বাল্য বিয়ে হয়, তার জীবনের সব আশা স্বপ্ন শেষ হয়ে যায়। তাই সবার সচেতন হতে হবে। বাল্য বিয়ে বন্ধের ব্যাপারে সবার এগিয়ে আসতে হবে। মাদারীপুরের লাকীর মতো সারাদেশে অসংখ্য লাকী বাল্য বিয়ের শিকার হয়ে আজ তাদের জীবন অন্ধকারে নেমেছে। তাই এই বাল্যবিয়ে বন্ধের জন্য জরুরিভাবে সবার এগিয়ে আসতে হবে।

(এএসএ/এএস/সেপ্টেম্বর ০৮, ২০১৬)

পাঠকের মতামত:

২৭ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test