E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

মায়ের মুখে হাসি ফোটালেও কে মুছবে শতাব্দীর চোখের জল

২০১৭ মে ২৩ ১৮:৩১:৪১
মায়ের মুখে হাসি ফোটালেও কে মুছবে শতাব্দীর চোখের জল

মিলন কর্মকার রাজু, কলাপাড়া : মায়ের দিন-রাত ঘাম ঝড়ানো কষ্ট দেখে গোপনে গুমড়ে কাঁদলেও বাবার শেষ স্বপ্নপূরণ করতে অদম্য ইচ্ছাশক্তি নিয়ে এসএসসিতে জিপিএ-৫ পেলেও শতাব্দী কর্মকারের উচ্চ শিক্ষার স্বপ্ন এবং বাবার স্বপ্ন বাস্তবায়ন স্বপ্নই থেকে যাচ্ছে। পটুয়াখালীর কলাপাড়ার খেপুপাড়া বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান বিভাগে জিপিএ-৫ পেয়ে মায়ের চোখের জল মুছে মুখে হাসি ফোটালেও এখন নিজের ভবিষৎ চিন্তায় উদ্বিগ্ন শতাব্দী।

দুই বছর আগে আকস্মিক হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে স্বামী গোপাল কর্মকার মৃত্যুবরন করায় দুই মেয়েকে নিয়ে অথৈ সাগরে পড়ে সুবর্না কর্মকার। তখন শতাব্দী নবম শ্রেণির ছাত্রী। আর বড় মেয়ে মিতু কর্মকার বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে অনার্স প্রথম বর্ষের ছাত্রী। পারিবারিক অস্বচ্ছলতায় দুই মেয়ের শিক্ষাজীবনই যখন বন্ধের পথে তখন নিজে টিউশনি করিয়ে দিনরাত পরিশ্রম করে দুই মেয়ের পড়াশোনা ও দুই মুঠো ভাত তুলে দেয়ার দায়িত্ব নেয় মা।

শতাব্দী জানায়, পারিবারিক অস্বচ্ছলতা থাকলেও বাবার স্বপ্ন ছিলো আমাকে ডাক্তার করবে। কিন্তু বাবার অকাল মৃত্যুর সাথে সমাধিস্থ্য হয় তার স্বপ্ন। মায়ের কঠোর শ্রমে এসএসসি পাশ করলেও এখন কলেজে ভর্তি হতে পারবো কিনা এ চিন্তা দারিদ্রতার মতো অক্টোপাশের মতো ঘিরে ধরেছে। শতাব্দী বলেন, দিদি অনার্স ৩য় বর্ষের ছাত্রী। তার লেখাপড়ার খরচ জোগাতেই হিমশিম খেতে হচ্ছে, সেখানে আমাকে ভালো কলেজে ভর্তি, ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন এখন আমাদের পরিবারের আকাশ কুসুম কল্পনা।

শতাব্দী মা সুবর্না কর্মকার বলেন, ওর বাবার মৃত্যুর পর মেয়েকে ঠিকমতো খাওয়া দাওয়া, জামাকাপড় কিনে দিতে পারিনি। সাইন্সের ছাত্রী হলেও টিউশনি দিতে পারিনি। শুধু আমার টিউশনির দেড়/দুই হাজার টাকা উপার্জনে কি দুই মেয়ের লেখাপড়ার খরচ, সংসার খরচ চালানো সম্ভব। তারপরও মেয়ে নিজ ইচ্ছায় এই সফলতা পেলেও এখন গুমড়ে কাঁদছে আর্থিক দৈন্যতায় কলেজে ভর্তি হতে পারবে কিনা এ চিন্তায়।

খেপুপাড়া বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আনোয়ার হোসেন জানান, দারিদ্রতাকে জয় করে শুধু অদম্য ইচ্ছা ও পড়ালেখার প্রতি আন্তরিকতার কারনে শতাব্দী এই ভালো ফলাফল করেছে। এখন যদি কেউ তার পাশে না দাড়ায় তাহলে হয়তো এখানেই থেমে যাবে শতাব্দীর শিক্ষাজীবন।

(এমকেআর/এএস/মে ২৩, ২০১৭

পাঠকের মতামত:

১৮ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test