E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

‘মুসাকে বাঁচাতে চাপ আছে কি না, বলুক তদন্ত সংস্থা’

২০১৭ মার্চ ২৩ ১১:০৬:৪৬
‘মুসাকে বাঁচাতে চাপ আছে কি না, বলুক তদন্ত সংস্থা’

উত্তরাধিকার ৭১ নিউজ ডেস্ক : গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকার ক্ষমতাসীন দলের নেতার আত্মীয় মুসা বিন শমসেরকে যুদ্ধাপরাধের বিচার থেকে বাঁচাতে কোনো চাপ রয়েছে কি না, তা তদন্তকারীদের স্পষ্ট করার আহ্বান জানিয়েছেন।

বিতর্কিত ব্যবসায়ী মুসার একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের প্রমাণ দিতে ফরিদপুরের মুক্তিযোদ্ধারা ‘তৈরি আছেন’ বলে গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশের পরদিন বুধবার এক প্রতিক্রিয়ায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার প্রতি এই আহ্বান জানান তিনি।

অতীতে তদন্ত কর্মকর্তা থেকে শুরু করে সাক্ষীদের উপর নানা চাপ দেওয়া হয়েছে দাবি করে ইমরান বলেন, এখন তারা (তদন্ত সংস্থা) যেটা বলছেন, আমার মনে হয়েছে, সেটা বলার জন্য বলছেন। তাদের যে বক্তব্য সেটা সুনির্দিষ্ট না।

যদি তাদের কোনো বাধ্যবাধকতা বা চাপ থাকে, সেটাও তারা বলতে পারতেন। তাদের ওপর সুনির্দিষ্টভাবে কারও চাপ আছে কি না, সেটাও তারা বলতে পারতেন।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিমের বেয়াই মুসার একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের অভিযোগগুলো তদন্ত সংস্থাকে জানানো হলেও তারা তাতে গুরুত্ব দিচ্ছেন না বলে ফরিদপুরের মুক্তিযোদ্ধাদের অভিযোগ।

এই অভিযোগকারীদের মধ্যে শেখ সেলিমের দলের ফরিদপুর জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মাসুদ হোসেনও রয়েছেন। তিনিসহ কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছেন, তারা মুসার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিতে ‘প্রস্তুত’।

তাদের বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে যুদ্ধাপরাধ তদন্ত সংস্থার জ্যেষ্ঠ সমন্বয়ক সানাউল হক বলেন, মুসার বিরুদ্ধে অভিযোগের পক্ষে ‘পর্যাপ্ত তথ্যপ্রমাণ’ তারা এখনও পাননি।

প্রধানমন্ত্রীর ফুপাত ভাইয়ের সঙ্গে আত্মীয়তার সম্পর্কের কারণেই মুসার বিষয়ে তদন্ত আটকে আছে বলে অভিযোগটিও নাকচ করেন তিনি।

তদন্ত সংস্থার এই বক্তব্যে অসন্তোষ জানিয়েছেন সাংবাদিক-কলামনিস্ট আবু সাঈদ খান, নিজের লেখা ‘মুক্তিযুদ্ধে ফরিদপুর’ গ্রন্থে মুসার অপরাধের প্রমাণ রয়েছে বলে জানান তিনি।

মুসার শাস্তি চেয়ে আসা সাংবাদিক প্রবীর সিকদারও তদন্ত সংস্থার বক্তব্যকে দায় এড়ানোর চেষ্টা বলে মনে করছেন। একাত্তরে একসঙ্গে অনেক স্বজন হারিয়েছেন তিনি।

সানাউলের এই বক্তব্যে সন্তুষ্ট নন একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে গড়ে ওঠা গণজাগরণ মঞ্চের সমন্বয়ক ইমরানও, যিনি আত্মীয়তার সম্পর্ক গড়েছেন আওয়ামী লীগেরই নেতা শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের সঙ্গে।

ইমরান বলেন, তদন্ত সংস্থা এটা (মুসার বিষয়) তদন্ত করেছে কি না, এটা তারা পরিষ্কার করে বলছেন না। তার বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ তদন্ত করলেই পাওয়া যাবে। তারা তদন্ত করেছেন কি-না, এটা আমাদের আগে জানা দরকার। তাদের বক্তব্য খুবই অস্পষ্ট মনে হয়েছে।

তার বিরুদ্ধে ভিকটিমরা যে অভিযোগগুলো করছেন, সেটা তারা আমলে নিয়েছেন কি না, সেটা তারা এখনও বলেননি। যদি তারা আমলে নিয়ে থাকেন, তাহলে তারা তদন্ত করবেন। তারপর জানা যাবে- যুদ্ধাপরাধে তার (মুসার) সম্পৃক্ততা কতটুকু?

ইমরান বলেন, অতীতে যাদের বিচার হয়েছে-তাদের ক্ষেত্রে তদন্ত সংস্থা থেকে শুরু করে সাক্ষীদের উপর বিভিন্নভাবে চাপ প্রয়োগ করা হয়েছে। সে রকম কিছু আছে কি না, সেটা আমাদের জানা দরকার।

আমরা চাই সকল যুদ্ধাপরাধী, তার রাজনৈতিক পরিচয়, তার পারিবারিক পরিচয়, তার ব্যক্তি পরিচয় যাই হোক না কেন, সে যাতে সর্বোচ্চ দণ্ডে দণ্ডিত হয়।

মুসার বিরুদ্ধে যারা কথা বলেছেন, তারা গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হিসেবেই দেখছেন গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র।

সাংবাদিক আবু সাঈদ, প্রবীর সিকদার, আওয়ামী লীগ নেতা মাসুদ হোসেন ছাড়াও মুসার যুদ্ধাপরাধের সাক্ষী হিসেবে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেছেন ফরিদপুরের মুক্তিযোদ্ধা এ কে এম আবু ইউসুফ সিদ্দিকী পাখী ও বাবুনাথ।

ইমরান বলেন, আমি মনে করি, এটা একদমই বাইপাস করে যাওয়ার সুযোগ তদন্ত সংস্থার নাই। তদন্ত সংস্থার তাদের নিরপেক্ষতা প্রমাণের জন্যই সুনির্দিষ্টভাবে বলা উচিত, তারা কী তদন্ত করলেন?

কিছু কিছু সুনির্দিষ্ট যুদ্ধাপরাধীর ক্ষেত্রে তারা যদি গা বাঁচাতে চান, সেটা কোনোভাবেই যুদ্ধাপরাধের বিচারের জন্য সুখকর হবে না।

মুসার যুদ্ধাপরাধের কোনো তথ্য রয়েছে কি না- জানতে চাইলে একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির বলেন, আমরা জেলা পর্যায়ে যাইনি। আমরা তদন্ত করেছি সেন্ট্রাল লেভেলে। এরা তখন জেলা ও মহকুমা লেভেলে ছিল। আমরা সেন্ট্রাল কমিটির নিচে যাইনি। আমাদের অত রিসোর্স ছিল না।

মুসা বিন শমসেরের বিষয়ে পর্যাপ্ত তথ্য প্রমাণ নিয়ে আঁটঘাট বেঁধেই মাঠে নামা উচিৎ বলে মন্তব্য করেন তিনি।

তা না হলে বিচারের মাধ্যমে নির্দোষ প্রমাণ হয়ে গেলে তাকে তখন আর রাজাকারও বলতে পারব না।

মুসার অর্থ ও প্রভাবশালী আত্মীয় থাকার কারণে নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কার কথা জানালেও সাক্ষ্য দিতে প্রস্তুত বলে জানিয়েছেন মুক্তিযোদ্ধা ইউসুফ ও বাবুনাথ, যারা এর আগে ট্রাইব্যুনালে অন্য দুজন যুদ্ধাপরাধীর বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিয়ে গেছেন।

সাক্ষীদের সুরক্ষার উপর জোর দিয়ে শাহরিয়ার কবির বলেন, বিচার শুরু হলে এখন যারা বলছে, তারা যদি সাক্ষী দিতে না আসেন? সরকারকে সাক্ষী সুরক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে।

মুসাকে আগে গ্রেপ্তারের যে দাবি প্রবীর সিকদার তুলেছেন, সে বিষয়ে তিনি বলেন, গ্রেপ্তার না করলে ভয়ের ব্যাপার থাকবেই। তাকে গ্রেপ্তার না করলে তার বিরুদ্ধে কে সাক্ষী দিতে আসবে? ফ্যামিলি মেম্বাররা তাকে ইনোসেন্ট প্রমাণের জন্য বা মামলাটাকে বানচাল করতে চাইবেই।

যেহেতু সাক্ষীদের কোনো সুরক্ষা দেয়া হয়নি। অতীতে সাক্ষী হত্যা করা হয়েছে, গুম হয়েছে। সুনির্দিষ্ট প্রমাণ থাকলে অবশ্যই তাকে গ্রেপ্তার করতে হবে। মামলা চলাকালে বাইরে থাকলে সর্বনাশ হয়ে যাবে।

মুসা বিন শমসেরের বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্তে তদন্ত সংস্থার কাজে সন্তুষ্ট কি না- এ প্রশ্নে শাহরিয়ার কবির বলেন, আমি জানি না, তারা কী করেছে।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে দেওয়া তদন্ত সংস্থার বক্তব্য জানানোর পর তিনি বলেন, তথ্য পাবে কী করে? তাদেরকে তো এলাকায় গিয়ে ভিক্টিমদের সাথে কথা বলতে হবে।

যারা সাক্ষ্য দেবেন বলেছেন, তাদের সংবাদ সম্মেলন করে আনুষ্ঠানিকভাবে বক্তব্য দেওয়ার পরামর্শ দেন ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি।

আপনাদেরকে বলেছে, কিন্তু লেট দেম এড্রেস এ প্রেস কনফারেন্স। সারা দেশের মানুষ জানুক যে, তদন্ত সংস্থা কাউকে ক্ষমতা-টাকার জন্য ছাড় দিচ্ছে। এটা তো তদন্ত সংস্থার জন্য ভালো হবে না।

ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটির নেতা অধ্যাপক মুনতাসির মামুন বলেন, সাংবাদিকরা যদি পেয়ে থাকে, সাংবাদিকরা সেটি ছাপুক। এরপর তাদেরকে ধরা উচিৎ।

প্রকাশ হয়েছে জানানোর পর তিনি বলেন, সেটা তদন্ত সংস্থাকে বলা হোক, এইগুলো আমরা ছেপেছি, আপনি কি আরও প্রমাণ চান? আপনাদের বক্তব্য কী?

যুদ্ধাপরাধের অভিযোগের বিষয়ে মুসার কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। কয়েক মাস ধরে চেষ্টা চালিয়েও তার নাগাল পায়নি।

তার ছেলে ববি হাজ্জাজ বলেছেন, তার বাবার ‘চরিত্র হননের’ জন্য এসব অভিযোগ এখন তোলা হচ্ছে।

জাঁকজমকপূর্ণ চালচলনের জন্য বিদেশি সংবাদ মাধ্যমে মুসাকে ‘প্রিন্স অব বাংলাদেশ’ হিসেবে পরিচয় দেওয়া হয়। জনশক্তি রপ্তানি দিয়ে ব্যবসা শুরু করলেও তার অস্ত্র ব্যবসার কথাই আসে আগে।

মুসা বিন শমসের নামে এখন পরিচিত হলেও তার নাম এ ডি এম (আবু দাউদ মোহাম্মদ) মুসা। গ্রামের বাড়ি ফরিদপুরের নগরকান্দা উপজেলার কাজিকান্দা গ্রামে।

মুসার বাবা শমসের মোল্লা পাকিস্তান আমলে চাকরি করতেন পাট বিভাগের মাঠকর্মী হিসেবে পিএলএ পদে। ফরিদপুর শহরের গোয়ালচামটের ট্রাকস্ট্যান্ড সংলগ্ন এলাকায় বাড়ি করেন তার বাবা। সেখানেই বেড়ে ওঠেন মুসা।

মুক্তিযুদ্ধের সময় রাজেন্দ্র কলেজের ছাত্র বাকপটু মুসা ইংরেজি ও উর্দু কথোপকথনে পারদর্শিতাকে পুঁজি করে পাকিস্তানি সেনা কর্মকর্তাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা গড়ে তুলেছিলেন বলে স্থানীয়দের ভাষ্য।

খবর : বিডি নিউজ।

(ওএস/এএস/মার্চ ২৩, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

১৯ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test