E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

৪২ দিনে সংক্রমণের শিখরে পৌঁছাবে বাংলাদেশ : বিবিসি বাংলা

২০২০ জুন ২০ ১৬:৩৪:৫৪
৪২ দিনে সংক্রমণের শিখরে পৌঁছাবে বাংলাদেশ : বিবিসি বাংলা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : বাংলাদেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত প্রথম রোগী শনাক্ত হয়েছিল গত ৮ মার্চ। সেই থেকে মাত্র ১০৪ দিনের মাথায় আক্রান্তের সংখ্যা এক লাখ ছাড়িয়েছে। এই হিসাবে বাংলাদেশে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা পিক বা সর্বোচ্চ শিখরে পৌছাতে আরও দেড় মাসের মতো লাগতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।

বাংলাদেশে যেভাবে বাড়ছে আক্রান্তের হার

মার্চে প্রথম করোনা রোগী শনাক্তের পর প্রথম কয়েকদিন দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা ছিল এক অংকের ঘরে। তখন টেস্টের হারও ছিল বেশ কম। পরে নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে শনাক্তের সংখ্যাও ক্রমশ বাড়তে থাকে।

প্রথম রোগী খুঁজে পাওয়ার প্রায় একমাসের মাথায় গত ৯ এপ্রিল একদিনে শতাধিক ব্যক্তি করোনা পজিটিভ শনাক্ত হন। এরও প্রায় একমাস পর গত ১১ মে একদিনে শনাক্তের সংখ্যা এক হাজার ছাড়ায়।

এভাবে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৫০ হাজার ছাড়ায় গত ২ জুন। অর্থাৎ, বাকি ৫০ হাজার রোগী শনাক্ত হয়েছে শেষ ১৬ দিনে। আগামী দিনগুলোতে এই সংখ্যা আরও বাড়তে পারে এবং এভাবেই বাংলাদেশ করোনাভাইরাস সংক্রমণের শিখরে পৌঁছাবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক পরিচালক বেনজির আহমেদ বলেন, ‘জুন মাসের শুরু থেকেই গ্রাফটা সোজা ওপরে উঠছে। এটা সামনের দিনগুলোতে আরও বাড়তে থাকবে।’

ইতোমধ্যে করোনায় আক্রান্তের দিক থেকে শীর্ষ ২০ দেশের তালিকায় ঢুকে গেছে বাংলাদেশ। এশিয়ার মধ্যে শীর্ষে ও বিশ্বের মধ্যে চতুর্থ সর্বোচ্চ আক্রান্ত এখন ভারতে। তবে প্রতিবেশী দেশটিতে আক্রান্তের সংখ্যা এক লাখে পৌঁছাতে সময় লেগেছিল ১০৯ দিন, সেখানে বাংলাদেশে লেগেছে আরও কম।

এছাড়া, ইতালি-ব্রাজিলের কয়েকটি শহরে যেভাবে সংক্রমণের বিস্ফোরণ দেখা গিয়েছিল, বাংলাদেশেও কোনও একটি জনপদে তেমন ভয়াবহ সংক্রমণের আশঙ্কা রয়েছে বলে জানিয়েছেন আরেকজন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ মুশতাক হোসেন।

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ ঘনবসতিপূর্ণ একটি দেশ। এখানে স্বল্প আয়ের মানুষেরা গাদাগাদি করে বসবাস করে। এমন পরিবেশে আক্রান্তের সংখ্যায় বিস্ফোরণ হওয়ার আশঙ্কা থেকেই যায়- অনেকটা ব্রাজিলের সাও পাওলো বা রিও ডি জেনিরোতে যেমনটা দেখা গেছে।’

বাংলাদেশে পিক টাইম আসবে কবে

যুক্তরাজ্যে করোনা সংক্রমণের পিক টাইম স্থায়ী ছিল প্রায় ৪২ দিন। ইউরোপের আরেক দেশ ইতালিতে পিক টাইম স্থায়ী হয়েছিল আরও কম। সেখানে আক্রান্তের সংখ্যা যেমন দ্রুতগতিতে বেড়েছে, তেমন দ্রুত কমেও গেছে।

ইতালিতে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ চূড়ায় পৌঁছে ধীরে ধীরে নেমে আসা, এর পুরো প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে দুই মাসের মধ্যে।

তবে বাংলাদেশে প্রথম রোগী শনাক্তের তিন মাস পার হলেও এখনও দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা ঊর্ধ্বমুখী। দেশে করোনা সংক্রমণ কবে নাগাদ শিখরে পৌঁছাবে সেটাও নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না কেউ।

বিশেষজ্ঞদের মতে, বাংলাদেশে করোনা সংক্রমণের পিক টাইম কখন আসবে এবং সেটা কতদিন স্থায়ী হবে তা নির্ভর করছে কত টেস্ট করা হচ্ছে, মানুষ কতটা স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলছে, সরকার কতটা কড়াকড়ি আরোপ ও তার বাস্তবায়ন করছে- এসবের ওপর।

তারা বলছেন, চীন ও ইতালির মতো বাংলাদেশও যদি শুরু থেকেই লকডাউনের কড়াকড়ি আরোপের পাশাপাশি কোয়ারেন্টাইন ও আইসোলেশন সঠিক ব্যবস্থাপনায় নিয়ে আসত, তাহলে এতদিনে সংক্রমণ চূড়ায় পৌঁছে আবার নিচে নামা শুরু হয়ে যেত।

তবে এখনও যদি কঠোরভাবে জোনভিত্তিক লকডাউন কার্যকর করা হয়, রোগী শনাক্ত করে তাদের উপযুক্ত চিকিৎসা দেয়া হয়, তাহলে সংক্রমণের বিস্ফোরণ রোধ করা সম্ভব হবে বলে মনে করেন মুশতাক হোসেন। সেক্ষেত্রে, আগামী এক থেকে দেড় মাসের মধ্যেই পিক টাইম দেখা যেতে পারে বলে জানান তিনি।

একই মত বেনজির আহমেদেরও। তিনি বলেন, ‘সংক্রমণের ঝুঁকি হিসেবে যদি এক হাজার হটস্পট বা রেড জোন চিহ্নিত করে লকডাউন করা হয় এবং প্রতিটি রেড জোনে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ দলের মাধ্যমে কড়াকড়ি আইসোলেশন ও কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করা হয়, তাহলে আগামী ৪২ দিনের মাথায় সংক্রমণের পিক টাইম দেখা যেতে পারে।’ নাহলে আগামীতে এই সংখ্যা আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন এ স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ।বিবিসি বাংলা।

(ওএস/এসপি/জুন ২০, ২০২০)

পাঠকের মতামত:

২০ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test