মৃণাল সরকার মিলু, সিরাজগঞ্জ : চল্লিশ বছর বয়সী বিধবা নারী সপ্তমী রানী মোহন্ত । বাড়ি সিরাজগঞ্জের সলঙ্গা থানার ভুঁইয়াগাতী গ্রামে। বাবার অভাবের সংসারে এগুতে পারেনি লেখাপড়ায়। ৫ম শ্রেনীতে উঠার পরই ইতি টানতে হয় পড়ালেখায়। ১৯৯৪ সালে বিয়ে হয় জয়পুরহাট জেলা সদরে। অভাব থাকলেও সুখ শান্তিতে ভরপুর ছিল তাদের সংসার।

তাদের ঘরে একে একে জন্ম নেয় ১ ছেলে ও ২ মেয়ে। এই সুখ আর শান্তি যেন বিধিও সইতে পারলেন না। অকালে মুত্যু হয় সপ্তমী রানী মোহন্তের স্বামী রবীন্দ্রনাথ মোহন্তের। স্বামীর মৃত্যুর পর তার সংসারে নেমে আসে ঘোর অনামিষা।

অবশেষে উপায়ান্তর না দেখে ছেলে-মেয়েদের নিয়ে চলে আসেন ভাইয়ের সংসারে। তার ভাই নিহারের সংসারও অস্বচ্ছল। অর্ধাহারে-অনাহারে দিন কাটতে ছিল এই বিধবা নারীর। শেষ মেশ সপ্তমী রানী মোহন্ত নিজেই হাল ধরলেন সংসারের। বেঁছে নিলেন রং তুলি দিয়ে নকশার কাজ। সে অটোভ্যান-রিক্সাসহ বিভিন্ন আসবাব পত্রে রং এর কাজ করেন। এ কাজ করে যা পান তাই দিয়েই চলে তার অভাবের সংসার। শনিবার রায়গঞ্জ যাওয়ার পথে ভুঁইগাতী-রায়গঞ্জ আঞ্চলিক সড়কের তেলিজানা ভাষা মিস্ত্রির কারখানায় দেখা যায় এই বিধবা নারী রং তুলি দিয়ে অটোভ্যানে নকশা আঁকছেন। কৌতুহল বসত কথা বলতে বলতে জানা গেল তার জিবনের পথচলার উপরোক্ত কাহিনী। নকশা আঁকার ফাঁকে ফাঁকে সপ্তমী রানী মোহন্তের কথা হয় । তিনি বলেন, একটি রিক্সা অথবা অটোভ্যানে নকশা করে মুজুরী পাই ১শ’টাকা। দিনে ১টি মাত্র অটোভ্যানের কাজ করা যায়। এই দিয়েই চলে কষ্টের সংসার।

এলাকাবাসীর সহযোগীতায় দুই মেয়ে সাথী ও সুকলাকে বিয়ে দিয়েছি। এক মাত্র ছেলে সবুজ ৭ম শ্রেণীতে পড়া-লেখা করে। প্রতিদিনের আয় দিয়ে অন্ন যোগানই কষ্টকর। এরপর ছেলের পড়া লেখার খরচ চালাতে হয়। নানাবিদ কষ্ট থেকে দুরে থাকার জন্য স্বাংস্কৃতিক চর্চা করে থাকেন সপ্তমী রানী মোহন্ত। তিনি ভর্তি হন উপজেলা শিল্প কলা একাডেমীতে। পরিচয় হয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইকবাল আখতারের সাথে। পরিচয়ের পর সপ্তমী রানী মোহন্তর কষ্টের কথা শুনে তাকে একটি বিধবা ভাতা প্রদান করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। প্রতিমাসে বিধবা ভাতার ৫শ’ ও নিত্যদিনের সামান্য আয় দিয়েই চলছে সপ্তমী রানী মোহন্তের সংসার। মোটামুটি স্বচ্ছলভাবে চলার জন্য সুদমুক্ত ঋণের আশা করছেন। এ ব্যাপারে প্রশাসনের সহযোগিতা চায় বিধবা নারী সপ্তমী রানী মোহন্ত।

(এমএসএম/এসপি/সেপ্টেম্বর ২৪, ২০১৭)