চৌধুরী আবদুল হান্নান


মিয়ানমারের জন্মভিটা থেকে নির্মমভাবে বিতাড়িত রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশ আশ্রয় দিয়েছে। তাতে সরকারের প্রতি মানুষ খুশি হয়েছে এবং বিদেশে প্রশংসিত হয়েছে। নানাবিধ সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও সবহারানো বিপন্ন মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশ এক অনন্য উদাহরণ সৃষ্টি করেছে।

১৯৭১ সালে পাকিস্তান সরকারের অত্যাচারে জীবন বাঁচাতে বাস্তুভিটা ছেড়ে এক কোটি বাংলাদেশি শরনার্থী ভারতে আশ্রয় নিয়েছিল। সেটি ছিল ভারতের জন্য কঠিন সময়, এক সংকটকাল। এ সংকট ভারতকে অন্য এক সম্ভাবনা এনে দিয়েছিল। ভারতের দুটি প্রধান উদ্দেশ্য পূরণ হয়েছিল। তা হলো- মানবতার পাশে দাঁড়িয়ে একটি বিপন্ন বাস্তুহারা জনগোষ্ঠীকে স্বাধীনতা অর্জনে পূর্ণ সগযোগিতা করা এবং চিরশত্রু পাকিস্তানকে উপযুক্ত শিক্ষা দেওয়া।

১৯৭১ এর সংকটকে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী দক্ষ রাজনৈতিক প্রজ্ঞার মাধ্যমে একটি সফল পরিনতির দিকে নিয়ে গিয়েছেন। তাতে ভারতও লাভবান হয়েছে আর জন্ম হয়েছে একটি নতুন স্বাধীন দেশ ‘বাংলাদেশ’। ভারত কীভাবে এক কোটি বাংলাদেশি শরনার্থীর দক্ষতার সাথে সফল ব্যবস্থাপনা করেছিল তা থেকে আমাদের শিক্ষা নিলে দোষের কিছু নেই। এ ইস্যু নিয়ে আন্তর্জাতিক সহানুভূতি আদায়ের জন্য বিশ্ব ভ্রমণে বের হয়েছিলেন তিনি। ইন্দিরা গান্ধীর রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক প্রজ্ঞা দেশ-বিদেশে এক নতুন মাত্রায় উন্নীত হয়েছিল এবং পুনরায় তাঁর ক্ষমতায় আরোহনের পথ সুগম হয়েছিল।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে মহাধ্বংস যজ্ঞের মধ্যেও একটি বড় সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছিল। তা হলো- গ্রেট ব্রিটেন বিশ্বযুদ্ধে ধকল সামলাতে গিয়ে তার উপনিবেশ সাম্রাজ্য দখলে রাখতে ব্যর্থ হওয়া এবং দখলদারীত্ব ত্যাগ করে দেশগুলোকে স্বাধীনতা দিতে বাধ্য হওয়া।

একদা শান্তিতে নোবেলজয়ী অং সান সু চির নেতৃত্বাধীন মিয়ানমারের নির্বাচিত সরকার ও সেনাবাহিনী এক হয়ে রাখাইনের অধিবাসী রোহিঙ্গাদের নিপীড়নের মাধ্যমে দেশ ত্যাগ করতে বাধ্য করে চলেছে। সে দেশ থেকে আসা ১০ লক্ষাধিক বাস্তুহারা শরনার্থীর ভার বহন করা বাংলাদেশের পক্ষে সম্ভব নয়। কারণ আমাদের সীমিত সম্পদ, সীমিত জায়গা। তবুও বাংলাদেশ তাদের ফিরিয়ে দেয়নি, দিয়েছে আশ্রয় । এ সংকট সৃষ্টিতে বাংলাদেশের কোনো দায় নেই। তবুও দায় বহন করতে হচ্ছে।

রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশ মানবিক আচরন করছে। মানবতার পাশে দাড়িয়েছে। বিপন্ন শরনার্থীদের দুরদর্শার গভীরতা আমরা বুঝি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, আমরা রোহিঙ্গাদের সাথে ভাগ করে খাব। তাতে বাংলাদেশের মানবিক দিক বিশ্বে আরও উজ্জ্বল হয়েছে।

আমাদের এখন প্রধান দুটি কাজ- শরনার্থীদের ব্যবস্থাপনা এবং তাদের নিজদেশে ফিরিয়ে দেয়ার দীর্ঘ পরিকল্পনা কার্যকর করা। বাংলাদেশ রাজনীতি, কূটনীতি ভুলে মানবতার সাথে একাত্ম হয়েছে। উচ্চ কণ্ঠে বিশ্ববাসীকে মানবতার পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানানোর অধিকার জন্মেছে আমাদের। মানবতার পাশে দাঁড়ানোর এ ডাক একদিন নতুন দুয়ার খুলে দিতে পারে।

অপরদিকে দেশের মধ্যে ও দেশের বাইরের এক সময়ের পরাজিত শত্রুদের উস্কানিতে সামাজিক ও রাজনৈতিক অস্থিরতা, জঙ্গীবাদের উত্থানসহ বহুতর ভয়ংকর দুর্দশা সৃষ্টির এক উর্বর ক্ষেত্রে পরিনত হওয়ারও আশঙ্কা রয়েছে এ ভূখন্ডে। তবে সবকিছু নির্ভর করছে সমস্যার সঠিক ব্যবস্থাপনা ও সময়মত সুযোগ কাজে লাগানোর দক্ষতার উপর।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্বে শান্তির দূত, মানবতার দূত হিসেবে পরিচিতি পাবেন যা এখন কেবল সময়ের ব্যাপার এবং বাংলাদেশও এক অনন্য উচ্চতায় পৌঁছে যাবে।

লেখক : চৌধুরী আবদুল হান্নান, সাবেক ব্যাংকার