প্রবীর সিকদার


বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার কাছে আমার বিনীত অনুরোধ,রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশকারীদের জন্য বিভিন্ন দেশ ও গোষ্ঠী থেকে আসা ত্রাণসামগ্রী যেন আমাদের সেনাবাহিনী ও আন্তর্জাতিক কোনো সংগঠন কিংবা তাদের প্রতিনিধিদের মাধ্যমে বিতরণ করা হয়। আওয়ামীলীগ কিংবা আওয়ামীলীগের নেতৃত্বের সরকার ত্রাণ সহায়তা কার্যক্রম মনিটরিং করবে কিন্তু বিতরণের দায়িত্ব পালন করবে সেনাবাহিনী এবং সংশ্লিষ্ট আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়।

আমার ভয়, স্বাধীনতা উত্তর সময়ে বিধ্বস্ত দেশ ও অভাবী মানুষের জন্য আসা ত্রাণসামগ্রী বঙ্গবন্ধু্র নেতৃত্বের সরকার দারুণ সফল বিতরণ করলেও আওয়ামীলীগ বিরোধীরা ত্রাণ বিতরণে অনিয়মের অভিযোগ তুলেছিল এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে দেশ সম্পর্কে একটি ভুল বার্তা তারা পৌঁছে দিতে সমর্থ হয়েছিল। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের আগে ও পরে ত্রাণ সামগ্রি বিতরণ কিংবা ব্যবহারে অনিয়মের বিষয়টি খুনিদের পক্ষে ব্যবহার করা হয়েছিল।

সামনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন। ওই নির্বাচনে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ শক্তিকেই ক্ষমতায় ফিরিয়ে আনতে হবে। আর মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ শক্তির কথা বললেই নেতৃত্বের আসনে সমাসীন হয় মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী সংগঠন আওয়ামীলীগ। আমরা ভুলে যেতে চাই না যে, জিয়া কিংবা মুস্তাক কিংবা এরশাদ কিংবা খালেদা-নিজামিরা একাত্তরের বাংলাদেশের কী হাল করেছিলেন! মুক্তিযুদ্ধে ত্রিশ লাখ মানুষের রক্ত, কয়েক লাখ মা-বোনের সম্ভ্রম এবং কোটি কোটি মানুষের অবর্ণনীয় দুর্ভোগের ভেতর দিয়ে আমরা যে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়েছিলাম, সেই দেশটিকে ওরা মিনি পাকিস্তান বানিয়ে ছেড়েছিল। শেখ হাসিনার নেতৃত্বের আওয়ামীলীগ সরকার একাত্তরের যুদ্ধাপরাধী ও বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিচার ও শাস্তি নিশ্চিত করেছিল। আমার বলতে এতোটুকু দ্বিধা নেই, চলমান বাস্তবতায় আওয়ামীলীগ ছাড়া আর কারো পক্ষেই মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় অসাম্প্রদায়িক গনতান্ত্রিক আধুনিক বাংলাদেশ বিনির্মাণ সম্ভব নয়। দেশের যে আকাশ ছোঁয়া উন্নতি, সেটাও শেখ হাসিনার নেতৃত্বের আওয়ামীলীগ সরকারের অবদান।

আমার বক্তব্য স্পষ্ট, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় অসাম্প্রদায়িক আধুনিক গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ বিনির্মাণে শেখ হাসিনার নেতৃত্বের আওয়ামীলীগের কোনও বিকল্প নেই। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামীলীগ বিজয়ী হয়ে সরকার গঠন করবেই করবে। জনমানুষের আকাংখার বিজয় অনিবার্য। কিন্তু সেই নিশ্চিত সম্ভাবনার পথে বাধা হয়ে দাড়াতে পারে রোহিঙ্গা ইস্যু। অথচ শেখ হাসিনাই পৃথিবীর একমাত্র রাষ্ট্র নায়ক, যিনি সম্পূর্ণ মানবিক বিবেচনায় রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ার মহৎ সাহস দেখিয়েছেন। আর আমার ভয়টা সেখানেই। যে বঙ্গবন্ধুর জন্ম না হলে বাংলাদেশ কখনো স্বাধীন হতো না, সেই বঙ্গবন্ধুকে আমরা স্বাধীনতার মাত্র ৪ বছরের মাথায় সপরিবারে খুন করে কলংক তিলক পরিয়েছি! আমরা কী না পারি! আমি নিশ্চিত, রোহিঙ্গাদের জন্য পাওয়া দেশি বিদেশি ত্রাণসামগ্রী বিতরণে আওয়ামীলীগ সরকার নেতৃত্ব দিলে বিএনপি-জামায়াতসহ আওয়ামীলীগ বিরোধী দল বা গোষ্ঠী ত্রাণ বিতরণে অনিয়মের অভিযোগ তুলবেই এবং তারা তাদের অভিযোগের পক্ষে বিশ্ব সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আকর্ষণে শক্ত তৎপরতা চালাবে। অবশ্যই তারা কিছু কিছু রাষ্ট্রের কাছে ত্রাণ বিতরণে অনিয়মের বিষয়টি বিশ্বাসযোগ্য করে তুলবে। আর সেক্ষেত্রে বিশ্ব সম্প্রদায়ের কাছে বাংলাদেশ ও আওয়ামীলীগ একটি প্রশ্নবোধক চিহ্নের নিচে দাঁড়িয়ে থাকবে। আর এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে। আমি সেই সুযোগ দিতে চাইছি না।

আমার গভীর আস্থা ও বিশ্বাস রয়েছে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার প্রতি। তিনি নিশ্চয়ই রোহিঙ্গাদের মধ্যে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ ও তাদের জন্য অস্থায়ী আবাস গড়ার দায়িত্ব দিবেন আমাদের গর্বের ধন বাংলাদেশ সেনা বাহিনী ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিদের হাতে। অবশ্য পুরো বিষয়টি মনিটরিং করবে তার নেতৃত্বের সরকার। আর সেই কর্মযজ্ঞের ভেতর দিয়েই শেখ হাসিনা তার সরকার ও দলের বিরুদ্ধে চলমান দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রের দাঁতভাঙ্গা জবাব দিবেন, দিবেনই।

(পিএস/অ/সেপ্টেম্বর ২৮, ২০১৭)