নীলফামারী প্রতিনিধি : উজানে ভারি বর্ষণ, পাহাড়ি ঢল এবং গজলডোবার গেট খুলে দেওয়ায় তিস্তা নদীর অববাহিকায় পানির ঢল নেমেছে। সোমবার ভোর থেকে তিস্তার পানি ডালিয়া পয়েন্টে বিপদসীমার ২৪ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়।

এতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে খুলে দেওয়া হয়েছে তিস্তা ব্যারেজের ৪৪টি স্লুইচ গেট। উজানের ঢলের কারণে নদীর চর অঞ্চলের লোকজন তিস্তার বামতীর বাঁধে আশ্রয় নিয়েছে।

পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় তিস্তা নদীর সংলগ্ন চর গ্রামগুলো প্লাবিত হয়েছে। এসব এলাকার বাড়িঘর হাঁটু থেকে কোমর পানিতে তলিয়ে গেছে।

ডিমলা উপজেলা খাঁলিশা চাঁপানী ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়াডের ইউপি সদস্য রমজান আলী জানান, রোববার দিবাগত রাত ১টা থেকে তিস্তা নদীর পানি প্রবাহ বৃদ্ধি পেয়ে পশ্চিম বাইশপুকুর, পূর্ব বাইশপুকুর, ছোটখাতা গ্রামে প্রবেশ করায় ৫ শতাধিক পরিবারের ঘরবাড়ি ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কোমর পানিতে তলিয়ে যায়।

পশ্চিম বাইশপুকুরের চারটি কাঁচা মাটির রাস্তা ভেঙে গেছে। স্থানীয়রা অভিযোগ করে জানান, অপরিকল্পিতভাবে বাইশপুকুর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ নির্মাণ করায় পশ্চিম বাইশপুকুরে বন্যার পানি প্রবেশ করে পুকুরের পাড় ভেঙে মৎস্যখাতের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।

পূর্বছাতনাই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফ খান জানান, ঝাড়শিঙ্গেশ্বর চরের কাছ দিয়ে তিস্তার আরেকটি চ্যানেল তৈরি হয়ে পানি প্রবাহিত হওয়ায় সেখানে ভাঙন শুরু হয়েছে। সোমবার সকালে ওই চরের চারটি পরিবারের ভিটাবাড়ি তিস্তা নদীতে বিলীন হয়েছে ও ১০টি পরিবার তাদের ঘরবাড়ি অন্যত্র সরিয়ে নিয়েছে।

অপরদিকে উজানের ঢলে তিস্তা অববাহিকার টেপাখড়িবাড়ি, খগাখড়িবাড়ি, গয়াবাড়ি, খালিশা চাপানি, ঝুনাগাছ চাঁপানী, জলঢাকা উপজেলার ডাউয়াবাড়ি, শৌলমারী, কৈমারী এলাকার চরগ্রামগুলো প্লাবিত হয়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের তিস্তার ডালিয়া বন্যা পূর্বাভাস কেন্দ্র জানায়, ভারতের দো-মোহনী পয়েন্টে তিস্তার পানি বিপদসীমা (৮৫ দশমিক ৯৫ মিটার) দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় উজানে থেকে এই ঢল নেমে আসে। ফলে তিস্তা ব্যারেজ ডালিয়া পয়েন্টে সোমবার ভোর ৬টা থেকে তিস্তা নদীর পানি বিপদসীমার (৫২ দশমিক ৪০ মিটার) ২৪ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। তবে বিকেলে পানির প্রবাহ কিছুটা কমে আসে। ডিমলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আশরাফুজ্জামান বলেন, ইউপি চেয়ারম্যানদের ক্ষতিগ্রস্তের তালিকা দিতে বলা হয়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের ডালিয়া ডিভিশনের নির্বাহী প্রকৌশলী মাহবুবুর রহমান জানান, বর্ষণ ও উজানের পাহাড়ি ঢল সামাল দিতে দেশের সববৃহৎ সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারেজের ৪৪টি স্লুইচ খুলে রাখা হয়েছে।

(ওএস/এস/জুন ৩০, ২০১৪)