স্টাফ রিপোর্টার : এ বছরের জানুয়ারি মাসের চেয়ে অক্টোবরে জীবনযাত্রার ব্যয় ৭৬.৩৭ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। মঙ্গলবার শিশু কল্যাণ পরিষদে এক আলোচনা সভায় এ তথ্য জানায় বাংলাদেশ সাধারণ নাগরিক সমাজ। আলোচনা সভার শিরোনাম ছিল ‘বিদ্যুৎ ও জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি ও বর্তমান নাগরিক জীবনে এর প্রভাব।’

সংগঠনের আহ্বায়ক মহিউদ্দীন আহমেদ বলেন, বাংলাদেশে সেবা খাত সমূহকে আইন অনুযায়ী অলাভজনক প্রতিষ্ঠান হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। অথচ বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতকে একটি লাভজনক প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরের প্রক্রিয়া চলছে। এই খাতে ঘাটতি, সিস্টেম লস, বিগত দিনের ভর্তুকির অর্থ, ঋণের লাভসহ সব কিছুই জনগণের কাছ থেকে আদায় করা হচ্ছে। যা আমাদের ভাবিয়ে ‍তুলেছে।

বর্তমান সময়ের নাগরিক জীবনে ব্যায়ের সংক্ষিপ্ত একটি চিত্র উপস্থাপন করে তিনি বলেন, ছোট পরিবারের মাসিক খরচ হিসাব করলে দেখা যায়, জানুয়ারির চাইতে চলতি মাসে তার অতিরিক্ত খরচ দাঁড়ায় ৪৮৪০ টাকা। যা শতকরা হিসাবে +৫৬.৩৭%। সেই সঙ্গে আপ্যায়ন, পরিবহন, বাড়িভাড়া, বিনোদন, পানি, গ্যাস, টেলিকম, চিকিৎসা, শিক্ষা, বিদ্যুৎ, আসবাবপত্র, অলংকার ও ইলেকট্রিক ও ইলেকট্রনিক্স এর অতিরিক্ত মূল্য যোগ করলে দেখা যাবে এ সকল খাতেও ব্যয় বৃদ্ধির হার ২০ শতাংশ। অর্থাৎ জীবনযাত্রার ব্যয় সর্বমোট ৭৬.৩৭ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে অথচ সেই হারে আয় বৃদ্ধি পায়নি।

তিনি বলেন, গত বৎসর সেপ্টেম্বর থেকে গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি করা হলে যার ফলে নাগরিকের জীবনে সর্বক্ষেত্রে ব্যয়ভার বৃদ্ধি হতে শুরু করে। চলতি বছর জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত নিত্যপ্রয়োজনীয় সকল পণ্যের মূল্য ঊধ্র্বগতি হতে শুরু করে। এতে মার্চ পর্যন্ত ব্যয়ভার বৃদ্ধি পায় ২০ শতাংশ। এরপর হাওর বিলীন, পাহাড় ধস অতিবর্ষণ, অকাল বন্যা, সর্বশেষ রোহিঙ্গা সংকট মিলিয়ে আরেক দফা দ্রব্যের দাম ঊধ্র্বগতির ফলে নাগরিক জীবন দুবির্ষহ হয়ে পড়ে। এতকিছুর পর এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির ওপর গণশুনানি করে।

বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, দেশে সরকার থাকলেও নাগরিকদের ভাবার কোনো ব্যক্তি নেই। আজ প্রত্যেকটি নাগরিকের জীবন দুর্বিষহ হয়ে পড়েছে। জীবন চলছে একমাত্র আল্লাহ তায়ালার দয়ায়।

বিদ্যুৎ খাতকে ভারত নির্ভর করার অপচেষ্টা চলছে। তাই বিদ্যুৎকে ভারত নির্ভর না করে দেশের জনগণের কল্যাণে বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধি না করার আহ্বান জানান তিনি।

আলোচনায় অংশ নিয়ে সিপিবি’র কেন্দ্রীয় সম্পাদকমণ্ডলীল সদস্য রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, বিদ্যুতের গণশুনানিতে আমরা অনেক যুক্তি উপস্থাপন করে বোঝাতে সক্ষম হয়েছি যে বিদ্যুতের মূল্য না বৃদ্ধি করে মূল্য কমানো যায়। বিদ্যুতের এক পয়সা দাম বৃদ্ধি করলে সারাদেশে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।

বাসদের কেন্দ্রীয় নেতা রাজেকুজ্জামান রতন বলেন, সিস্টেম লসের নামে দুর্নীতি, লুটপাট এবং সরকারের ভুলনীতি পরিহার করলে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর তো প্রয়োজনই নেই বরং দাম কমানো সম্ভব। রেন্টাল, কুইক রেন্টাল এর নামে অধিক দামে বিদ্যুৎ কেনা বন্ধ করলে, ডিজেল, ফার্নেস অয়েলের মূল্য সমন্বয় করলে ৭৮৪৩ কোটি টাকা সাশ্রয় করা যেত। তাতে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম ১.৫৬ পয়সা কমানো সম্ভব। বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি জীবনযাপনের সমস্ত ক্ষেত্রে ব্যয় বাড়িয়ে দেবে। এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা জনগণের দায়িত্ব।

আয়োজক সংগঠনের আহ্বায়ক মহিউদ্দীন আহমেদ সভাপতিত্বে আরো উপস্থিত ছিলেন, বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, সাবেক সংসদ সদস্য হুমায়ুন কবির হিরু, দুর্নীতি প্রতিরোধ আন্দোলনের সভাপতি হারুন-অর-রশিদ খান প্রমুখ।

(ওএস/এসপি/অক্টোবর ১০, ২০১৭)