ঈশ্বরদী (পাবনা) প্রতিনিধি : ঈশ্বরদীর অরনকোলা এলাকার নারী উদ্যোক্তা রোকেয়া আক্তার পোল্ট্রি খামার করে সফলতা অর্জন করেছেন। রোকেয়ার সফলতার খবর পেয়ে তাঁর খামারে উত্তরাধিকার ৭১ নিউজের প্রতিবেদকের মুখোমুখি হলে তিনি জানান, উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করার পর ২০০৩ সালে আনোয়ার হোসেনের সাথে বিয়ে হয়। বিয়ের পর স্বামীর বাড়িতে এসে ঘর-সংসারের কাজের ফাঁকে কিভাবে সফলতা ও অর্থনৈতিক উন্নতি হয় এনিয়ে তিনি ভাবনা শুরু করেন।

রোকেয়া জানান, টিভি চ্যানেলে এবং খবরের কাগজে পোল্ট্রি খামার করে অনেকের সফলতা অর্জনের খবর পড়ে রোকেয়াও সিদ্ধান্ত নেন্ পোল্ট্রি খামার করবেন। প্রথমে ১ হাজার মুরগির বাচ্চা দিয়ে পোল্ট্রি খামার শুরু করেন। ১৪ বছর নিরলস পরিশ্রম ও নিষ্ঠার সাথে কাজ করে তিনি আজ একজন সফল পোল্ট্রি খামারি। পোল্ট্রি খামারের পাশাপাশি, মাছ চাষ, ধান চাষ ও সবজি উৎপাদনের খামারও তিনি গড়ে তুলেছেন। শুরু পর আর তাকে পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি এখন শুধুই এগিয়ে চলেছেন সামনের দিকে। রোকেয়া ইতোমধ্যে জাপানি একটি সংস্থায় কৃষির উপর ১৮ মাসের প্রশিক্ষণ গ্রহন করেছেন বলে জানালেন।

রোকেয়া আরো জানান, বিয়ের আগে ১ লাখ ৬০ হাজার ধারন ক্ষমতা সম্পন্ন একটি বানিজ্যিক লেয়ার ফার্মে ম্যানেজমেন্ট বিভাগে কর্মরত ছিলেন। স্বামীর সহযোগিতায় লেয়ার জাতের ১ হাজার মুরগি পালন শুরু করেন। মুরগি পালন করে তিনি গোটা বছরের পারিবারের ডিমের ও মুরগির চাহিদা মিটানোর পর ডিম ও মুরগি বিক্রি করে বাড়তি কিছু আয় করতে থাকেন। বাড়তি আয়ের অর্থে খামারকে প্রসারিত করতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। বর্তমানে তার খামারে ৬ হাজার মুরগি রয়েছে। এরমধ্যে ৪ হাজার মুরগি ডিম দেয়, বাকি গুলো ছোট বাচ্চা। বর্তমানে প্রতিদিন ৩ হাজার ৮’শ ডিম বিক্রি করে থাকেন। রোকেয়া জানান, পোল্ট্রি ও সবজি খামারে এখন ১৫ জন শ্রমিক নিয়মিত কাজ করছেন। এরমধ্যে চারজন নারী ও দুইজন প্রতিবন্ধি শ্রমিকও রয়েছে।

রোকেয়া পোল্ট্রি খামারের স্বত্ত্বাধিকারি নারী উদ্যোক্তা রোকেয়া আক্তার আরও বলেন, মুরগির বিষ্ঠা দিয়ে পরিবেশ বান্ধব একটি বায়োগ্যাস প্লান্ট তিনি তৈরী করেছেন। এই প্লান্ট থেকে পরিবারের রান্নার কাজ চলছে। রোকেয়া দেশের অবহেলিত নারী সমাজকে এগিয়ে নিতে গরু, ছাগল, হাঁস, মুরগি, গবাদি পশু পালন, নকশী কাঁথা, টেইলারিং, হস্তশিল্প ও কম্পিউটার প্রশিক্ষণ সেন্টার গড়ে তোলার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। তিনি শিক্ষিত বেকার যুবকদের পোল্ট্রি খামার করার জন্য আহ্বান জানান।

ঈশ্বরদী উপজেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা কৃষিবিদ মোস্তফা জামান বলেন, রোকেয়া আক্তার পোল্ট্রি খামার করে আজ সফল ও মডেল খামারি হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছেন। রোকেয়া পোল্ট্রি খামার করে কিছুটা হলেও দেশের মুরগি ও ডিমের চাহিদা পূরণ করছেন। সেই সাথে দেশের মানুষের পুষ্টির যোগানও দিচ্ছেন। রোকেয়ার পোল্ট্রি খামারটি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ভাবে সাজানো গোছানো।

(এসকেকে/এসপি/অক্টোবর ১০, ২০১৭)