কক্সবাজার প্রতিনিধি : কক্সবাজারের উখিয়ার পালংখালীর বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্পের পাহাড়ি এলাকায় বন্যহাতির আক্রমণে মা-মেয়েসহ একই পরিবারের ৪ জন নিহত হয়েছেন। এসময় আহত হয়েছেন একই পরিবারের বাবা ও ছেলে।

শুক্রবার দিবাগত রাত একটার দিকে ক্যাম্পের গহীন পাহাড়ি এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। উখিয়া থানার পরিদর্শক মিজান তথ্যটি নিশ্চিত করেছেন।

নিহতরা হলেন, পালংখালীর ১ নম্বর ওয়ার্ড বালুখালীর রোহিঙ্গা বস্তির গহীন পাহাড়ি এলাকায় বাস করা মুহাম্মদ ছিদ্দিকের স্ত্রী তাসলিমা বেগম (৩৫), তার মেয়ে রুবিনা আকতার (১১), সাবেকুন নাহার সাবুকা (৯) ও ছেলে মুহাম্মদ হামিম (৫)।

আহতরা হলেন, মুহাম্মদ ছিদ্দিক (৪৫) ও তার দু’বছর বয়সী ছেলে স্বপন। পরিবারটি সম্প্রতি মিয়ানমার থেকে অন্যদের সঙ্গে বাংলাদেশে এসে বালুখালীর গহীন বনে বাসা করেছিলেন। আহত বাবা-ছেলেকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

উখিয়া উপজেলা ছাত্রলীগ নেতা ও বালুখালী এলাকার বাসিন্দা ইব্রাহিম আজাদ জানান, রাত একটার দিকে হঠাৎ মানুষের কান্না ও হৈ চৈ শুনে স্থানীয়দের ঘুম ভাঙে। অবস্থা জানতে অনেকে ঘর থেকে বেরিয়ে ক্যাম্পের কাছাকাছি এসে জানতে পারেন গহীন পাহাড়ের পাদদেশে গড়া ঝুপড়ি ঘরে হাতির পাল হানা দিয়েছে। এতে একই পরিবারের ৪ জন মারা গেছে। আহত হয়েছে বাকিরা। তাদের দ্রুত উদ্ধার করে রাতেই কুতুপালং এলাকায় এনজিও এমএসএফ পরিচালিত হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

উখিয়া থানার পরিদর্শক মিজান বলেন, খবর পেয়ে শনিবার দুপুরে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। ঘটনাস্থল দুর্গম ও গহীন পাহাড়ি এলাকা।

নিহতদের আশপাশে বসবাসকারি রোহিঙ্গারা জানায়, রাত পৌনে একটার দিকে হাতিরপাল আক্রমণ করে। এসময় ছিদ্দিকরা ঘুমাচ্ছিলেন। হাতির পাল বাড়িটি সুঁড় দিয়ে ভাঙা শুরু করলে তাদের ঘুম ভাঙে। এসময় আতংকিত হয়ে চিৎকার ও প্রতিহত করতে চাইলে হাতির পাল আক্রমণ করে পায়ে চাপা দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই মা-মেয়ে-ছেলেসহ ৪ জন মারা যায়। অন্যরা বাসা থেকে বেরিয়ে দিকবিক পালায়। দুপুর ২টা পর্যন্ত মরদেহ ঘটনাস্থলেই ছিল। স্থানীয় ভাবে তাদের দাফনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।

পালংখালী ইউপির বালুখালী এক নম্বর ওয়ার্ড সদস্য ও প্যানেল চেয়ারম্যান আফসার উদ্দিন চৌধুরী জানান, এরআগেও বালুখালী অস্থায়ী শিবির ও কুতুপালং ক্যাম্পের পাহাড়ি এলাকার ঝুপড়ি বাড়িতে বন্যহাতির আক্রমণে শিশুসহ ৪ জনের প্রাণহানী ঘটেছে। ভাংচোরের কবলে পড়েছে অসংখ্য রোহিঙ্গা ঝুপড়ি ঘর।

কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিাভাগের বন কর্মকর্তা মো. সাজ্জাদ হোসেন বলেন, হাতিরপাল ঝোপঝাড় ও হালকা পানি রয়েছে এমন জায়গা পছন্দ করে। এরা কচি বাঁশের পাতা ও কলাগাছ এবং বিভিন্ন বনজ লতাপাতা খায় এবং চলাচল করে রাতের বেলায়। কিন্তু রোহিঙ্গার আবাস মহাসড়ক থেকে এখন প্রায় তিন থেকে পাঁচ কিলোমিটার ভেতরে ঢুকে যাওয়ায় নির্বিচারে ঝোপঝাড় ও লতাপাতা কেটে ফেলা হয়েছে। এতে অভয়ারণ্য হারিয়ে চলাচলের পথে হাতিরপাল সামনে যা পায় তাতে আক্রমণ করে। এছাড়া কুপি কিংবা চুলার আগুন দেখলে বিচলিত হয় হাতিরপাল। তাই হাতির আক্রমণে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে বলে মনে করেন তিনি।

(ওএস/এসপি/অক্টোবর ১৪, ২০১৭)