প্রবীর সিকদার


বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর খুনিদের নির্দেশ ও নির্দেশনায় একটি গান লিখেছিলেন খান আতা। বঙ্গবন্ধুর রক্ত শুকানোর আগেই সেই গানটি খান আতারই সুরে নারী-পুরুষের কোরাস কণ্ঠে ধারণ করে রেডিও ও টেলিভিশনে হাজার হাজার বার পরিবেশন করা হয়। তখন আমি ঢাকার একটি স্কুলে পড়ি।

পুরো গানটি আমার মনে নেই। দুটো লাইন এখনো আমার কানে ভাসা ভাসা ভাসে খুব, 'এতদিন মহাজনী করেছে যারা/ মুখোশ আমরা তাদের খুলবোই...।' ওই গানে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বের আওয়ামীলীগ সরকারের বিরুদ্ধে প্রচণ্ড বিষোদগার করা হয়েছিল। ওই গান জনমত বিভ্রান্ত করতে দারুণ সহায়ক হয়েছিল, যা বঙ্গবন্ধুর খুনিদের পক্ষে সাফাই সাক্ষীর সামিল ছিল।

আমার ধারণা, সেই ভয়ঙ্কর সময়ে ওই গানটি রেডিও টেলিভিশনে যতোবার প্রচার করা হয়েছিল, আজ অব্দি আর কোনও গান ততোবার প্রচার হয়নি। সেই সময়েই আমি বিস্মিত হয়েছিলাম, এতো দ্রুত গান লিখে সুর করে শিল্পীদের কণ্ঠে ধারণ করে সেটি কিভাবে প্রচার করা সম্ভব! হতে পারে বঙ্গবন্ধুর খুনিরা আগেভাগেই ওই গান রচনা ও প্রচারের দায়িত্ব দিয়ে রেখেছিলেন খান আতাকে! দেশের বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও মুক্তিযোদ্ধা নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু অতি সম্প্রতি খান আতাকে রাজাকার বলায় ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার ঝড় বইছে দেশে বিদেশে। খান আতা একাত্তরে রাজাকার ছিলেন কিনা সেটা আমার জানা নেই।

তবে পঁচাত্তরে আমার শিশুমনে ওই গানের রচয়িতা ও সুরকার খান আতা সম্পর্কে যে নেতিবাচক ধারণার জন্ম হয়েছিল, সেটা আজও পাল্টায়নি। আর সেই কারণে খান আতাকে একাত্তরের রাজাকার না বললেও পঁচাত্তরের রাজাকার বলতে আমার বিন্দু পরিমান দ্বিধা নেই।

(ওএস/অ/অক্টোবর ১৭, ২০১৭)