ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি : বারবার তারিখ নির্ধারণের পরও পিছিয়ে যাচ্ছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা ছাত্রলীগের সম্মেলন। কয়েক দফা পেছানোর পর আগামী ২১ অক্টোবর আওয়ামী লীগের ভাতৃপ্রতিম এ সংগঠনটির সম্মেলন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত সম্মেলন হচ্ছে না বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।

সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী এবং কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের যেদিন সময় দেবেন সেদিনই ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা ছাত্রলীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছেন মেয়াদোত্তীর্ণ বর্তমান কমিটির সভাপতি মাসুম বিল্লাহ্। ওবায়দুল কাদের জেলা ছাত্রলীগের সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন বলে জানা গেছে। এর ফলে সহসায় অনুষ্ঠিত হচ্ছে না জেলা ছাত্রলীগের বহুল কাঙ্ক্ষিত সম্মেলন।

তবে সম্মেলন নিয়ে এখন পর্যন্ত অনিশ্চয়তা না কাটলেও দলে পছন্দের জায়গায় ঠাঁই পেতে দৌড়ঝাপ শুরু করেছেন সম্ভাব্য প্রার্থীরা। এসব প্রার্থীদের তালিকায় ‘ক্লিন ইমেজ’র প্রার্থীর চেয়ে মামলার আসামি আর ছাত্রত্বহীন প্রার্থীদের সংখ্যাই বেশি। তবে চলতি বছর সম্মেলন না হলে বয়সের গ্যাঁড়াকলে বাদ পড়তে পারেন কয়েকজন প্রার্থী।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত ২০১৩ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি মাসুম বিল্লাহ্কে সভাপতি ও রাসেল মিয়াকে সাধারণ সম্পাদক করে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা ছাত্রলীগের ২৮ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়। এক বছর মেয়াদী এই কমিটি তাদের ১৭৩ সদস্য বিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করতে সময় নেয় আরও দুই বছর। এই কমিটি দিয়েই গত সাড়ে চার বছরেরও বেশি সময় ধরে চলছে সাংগঠনিক সকল কার্যক্রম।

নির্ধারিত সময়ে সম্মেলন অনুষ্ঠিত না হওয়ায় নতুন কমিটিতে পদ প্রত্যাশীদের সঙ্গে তৃণমূলের কর্মীদের মাঝেও ক্ষোভ বিরাজ করছিল। সম্মেলন অনুষ্ঠানের জন্য কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ থেকে দুই দফা তারিখ নির্ধারণ করে চিঠি পাঠালেও সম্মেলন করতে পারেনি জেলা ছাত্রলীগের মেয়াদোত্তীর্ণ বর্তমান কমিটি।

অবশেষে তৃতীয়বারে মতো আগামী ২১ অক্টোবর সম্মেলন অনুষ্ঠানের জন্য চিঠি দিয়েছে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। এই সময়ের মধ্যে জেলা ছাত্রলীগ নতুন করে জেলার আর কোথাও কোনো কমিটি দিতে পারবে না বলেও চিঠিতে উল্লেখ করা হয়। সম্মেলনের নতুন তারিখ নির্ধারণের পর থেকেই জেলা ছাত্রলীগের বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীর মাঝে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছিল। তবে নতুন করে সম্মেলন নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দেয়ায় নেতাকর্মীদের মাঝে হতাশার পাশাপাশি চাপা ক্ষোভও বিরাজ করছে।

সম্মেলনে নিয়ে অনিশ্চয়তা না কাটলেও সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী হিসেবে মাঠে নেমেছেন ডজন খানেক নেতা। এদের কেউ কেউ বর্তমান কমিটির পদেও রয়েছেন। নিজের কাঙ্ক্ষিত পদের জন্য কেন্দ্রে জোর তদবির-লবিংও করছেন তারা।

সম্মেলনে সভাপতি প্রার্থী হিসেবে জেলা ছাত্রলীগের বর্তমান কমিটির সহ-সভাপতি মিনহাজ উদ্দিন মামুন, আকরামুল ইসলাম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তাজুল ইসলাম আপন, মেহেদী হাসান লেনীন, মো. মোমিন মিয়া, সাংগঠনিক সম্পাদক রবিউল হোসেন, ঢাকা মহানগর (উত্তর) ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি রিদোয়ান আনসারী রিমো ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি শাহাদাৎ হোসেন শোভনের নাম শোনা যাচ্ছে।

এছাড়া সাধারণ সম্পাদক পদে সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে জেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জাকির হোসেন, সুজন দত্ত, দফতর সম্পাদক সাইদুল ইসলাম ও শহর ছাত্রলীগের আহ্বায়ক মিকাঈল হোসেনের নাম শোনা যাচ্ছে।

তবে এসব প্রার্থীদের মধ্যে বেশ কয়েকজন ছাত্রত্ব হারিয়েছেন বহু আগে। তাছাড়া কোনো-কোনো প্রার্থীর নামে অস্ত্র আইন ও ভাংচুরসহ নানা অপরাধের অভিযোগে একাধিক মামলাও রয়েছে বলে জানা গেছে।

সম্মেলনের ব্যাপারে জানতে চাইলে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা ছাত্রলীগের মেয়াদোত্তীর্ণ বর্তমান কমিটির সভাপতি মাসুম বিল্লাহ্ বলেন, বিভিন্ন নির্বাচনসহ নানা কারণে আমরা নির্ধারিত সময়ে সম্মেলন করতে পারিনি। তাছাড়া কেন্দ্র থেকেও সম্মেলন করার জন্য সেভাবে কোনো নির্দেশনা আমাদের দেওয়া হয়নি।

তিনি আরও বলেন, আমরা এখন সম্মেলন করার জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত আছি। ওবায়দুল কাদের আমাদের সম্মেলনে প্রধান অতিথি থাকবেন। কিন্তু তিনি নানা ব্যস্ততার কারণে ২১ তারিখ আমাদের সময় দিতে পারছেন না। তাই যেদিন তিনি সময় দেবেন সেদিনই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে।

(ওএস/এসপি/অক্টোবর ১৮, ২০১৭)