স্টাফ রিপোর্টার : রোহিঙ্গা ইস্যুতে রাশিয়া ও চীন বাংলাদেশের পক্ষে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। বুধবার রোহিঙ্গা বিষয়ে সাম্প্রতিক অগ্রগতি নিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী এ কথা জানান।

রোহিঙ্গা ইস্যুতে রাশিয়া ও চীনের অবস্থান বাংলাদেশের পক্ষে নয়, তাদের অবস্থান মিয়ানমানের পক্ষে- এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আরিয়া ফরমুলা সভায় (গত ১৩ অক্টোবর অনুষ্ঠিত জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের বিশেষ গোপনীয় সভা) রাশিয়া তাদের বক্তব্যে কফি আনান রিপোর্ট সাপোর্ট করেছে। বাংলাদেশ তো কফি আনান কমিশনের রিপোর্টের বাস্তবায়ন চায়। তাহলে রাশিয়া কীভাবে মিয়ানমারের পক্ষে ও বাংলাদেশের বিরুদ্ধে গেল- এটা আমি বুঝতে পারলাম না।’

মন্ত্রী আরও বলেন, ‘চীনের রিপোর্টে কফি আনানের রিপোর্টের বিষয়ে বক্তব্য নেই কিন্তু চীনের ভাষাটা অন্যরকম। তারা রাখাইন সম্পর্কে বলতে গিয়ে হিস্টরিক্যাল ও ইউনিক ব্যাকগ্রাউন্ড শব্দ ব্যবহার করেছে। তার মানে হল এই লোকগুলো (রোহিঙ্গারা) পরশুদিন ওখানে (মিয়ানমারে) যায়নি, যুগ যুগ ধরে তারা সেখানে বসবাস করছে। গতকালের ঘটনাকে তো হিস্টরিক্যাল বলে না। তারা (চীন) নির্যাতন বন্ধ করতে বলেছে। তারা রাখাইন সমস্যাকে আলাদা করছে, আমরাও আলাদা করছি। কোথায় বাংলাদেশের বিরুদ্ধে গেল (চীন)?’

মাহমুদ আলী বলেন, ‘অং সান সুচি রোহিঙ্গা ইস্যুতে একেবারেই কথা বলছেন না এটা কিন্তু ঠিক নয়। কাজটা তো ওইভাবে হয় না। একটা মিলিটারি ডিকটেটরশিপকে কীভাবে রাতারাতি পাল্টে দেওয়া যায়...., আমরাও তো এটার ভেতর দিয়ে সময় অতিবাহিত করেছি। জিনিসটা এতো সহজ নয়।’

‘আমরা অপেক্ষা করছি আমাদের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহোদয় মিয়ানমার যাবেন। আমরা মিয়ানমার সফরের তারিখ পেয়েছি ২০ থেকে ৩০ অক্টোবর। সময় তো এখন আছে। এর মধ্যে উনি গেলে দুটো এমওইউ (সমঝোতা স্মারক) সই হবে। দুই দেশের বর্ডারের ২৭১ কিলোমিটারের সমস্যার সমাধান করা হবে। আশা করি পরিবেশটা তৈরি হবে, তারপর আমি যাব।’

রোহিঙ্গারা যুগ যুগ ধরে শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে মিয়ানমারে বসবাস করছেন জানিয়ে মাহমুদ আলী বলেন, ‘আজ হঠাৎ করে বললে (রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের নাগরিক নয়) তো হবে না। আরও ডকুমেন্ট আমাদের হাতে এসেছে। আমরা যথাসময়ে উর্দিওয়ালা মিয়ানমারের সামরিক কর্মকর্তাদের দেব। যে রোহিঙ্গাদের আপনারা পুরস্কার দিয়েছেন, সেখানে রোহিঙ্গা শব্দ ব্যবহার করেছেন। বেশি দিন আগের কথা নয়, কয়েক বছর আগের কথা।’

তিনি বলেন, ‘এখন রোহিঙ্গারা নিরুদ্দেশ হয়ে গেল, রোহিঙ্গা ছিল না, কেউ নেই। তারা বাঙালি হয়ে গেল। কেমন করে বাঙালি হল, এরা তো বাঙালি নয়।’

ইউএনএইচসিআর একটি ড্রোন ভিডিও প্রকাশ করেছে যে সীমান্তে ১৫ হাজার রোহিঙ্গা আটকে আছে। তারা বাংলাদেশে প্রবেশ করতে পারছে না। এ বিষয়ে জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমি এটা বলতে পারলাম না, আমি জানি না। এটা দেখব আমি। খোঁজ-খবর নেব।’

জাতিগত নিপীড়নে পালিয়ে আসা মিয়ানমারের কয়েক লাখ রোহিঙ্গা দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশে বসবাস করছে। মিয়ানমারের সীমান্তে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর চেক পোস্টে হামলার ঘটনাকে কেন্দ্র করে গত ২৫ আগস্ট থেকে নতুন করে রাখাইনে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর উপর অভিযান চালাচ্ছে দেশটির সেনাবাহিনী। তখন থেকে রোহিঙ্গারা জীবন বাঁচাতে বাংলাদেশে পালিয়ে আসছে।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, জাতিসংঘের তথ্যানুযায়ী গত ২৫ আগস্টের পর এ পর্যন্ত ৫ লাখ ৪০ হাজার রোহিঙ্গা সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। সব মিলিয়ে এখন ৯ লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে বসবাস করছেন বলেও জানান মন্ত্রী।

রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফিরিয়ে দিতে বাংলাদেশে নানামুখী কূটনৈতিক তৎপরতা চালাচ্ছে।

সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হকও উপস্থিত ছিলেন।

(ওএস/এসপি/অক্টোবর ১৮, ২০১৭)