চাঁদপুর প্রতিনিধি : আসছে শুভ বাংলা নববর্ষ, আসছে বৈশাখী মেলা। সে জন্য ইতোমধ্যে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে কুমারপাড়া। এই পাড়ার প্রতিটি বাড়ির উঠোনে রোদে দেয়া হয়েছে নরম মাটির তৈরি বিভিন্ন প্রকারের শিশু খেলনা। আর ঘরে বারান্দায় কিংবা ঘরের ভেতরে চলছে তৈরি করা খেলনার উপরে রংয়ের কারুকাজ। যার কিছু অংশ করছে নারী আর কিছু অংশ পুরুষ। গতকাল শুক্রবার এমন চিত্র দেখা গেছে চাঁদপুর সদর উপজেলার মনিহার ও হাজীগঞ্জ উপজেলার অলিপুর কুমার বাড়িতে। তবে এই ব্যবসা প্রচণ্ডভাবে হুমকির মুখে পড়েছে প্লাস্টিক খেলনা সামগ্রীর কাছে।

জানা যায়, মাটির তৈরি পাতিল ও কলস ছাড়া বৈশাখী মেলার জন্য কুমার বাড়িতে তৈরি হচ্ছে ছোট মাটির কলস, খেলনা চুলা, মাটির ব্যাংক, হাঁস-মুরগী, কবুতর, ঘোড়া, হাতি, বাঘ, হরিণ, টিয়া পাখি, চড়ুই পাখিসহ প্রায় ৩০/৩৫ প্রজাতির পশুপাখি। শেষ মুহূর্তে এ সকল খেলনার শরীরে চলছে রংয়ের কারুকাজ। কারুকাজের কঠিন কাজটি কুমার পরিবার নিজেরা করে থাকে। রংয়ের কারুকাজ শেষ হলে এ সকল খেলনা ধানের খড় মুড়িয়ে যত্ন করে রেখে দেয়া হবে বৈশাখী মেলার দিন বিক্রির জন্য।
কুমারপাড়ার মৃৎ শিল্পের কারিগরগণ জানান, মাটির তৈরি শিশুদের খেলনা বৈশাখী মেলায় বিক্রি করে এবারে প্রতিটি পরিবার ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা ব্যবসা করার ইচ্ছে পোষণ করছে।
মনিহার কুমার বাড়ির মৃত অনিমেষের ছেলে শ্রীকৃষ্ণ (৩৫) জানান, ১২ বছর বয়স থেকে তিনি এ কাজ করছেন। তিনি জানান, আগে এ সকল খেলনা বাজারে ভালো বিক্রি হতো। আমরা যে ধরনের খেলনা তৈরি করছি সে একই ধরনের প্লাস্টিক খেলনা বাজারে ১০/১৫ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। প্লাস্টিক সামগ্রীগুলো টেকসই হওয়ার কারণে ছোটরা বা তাদের অভিভাবকরা প্লাস্টিকের সামগ্রীর দিকে ঝুঁকে পড়ছে। তাই হুমকির মুখে পড়েছে আমাদের কুমার শিল্প।
এই কারিগরগণ আরো জানান, খেলনা তৈরির জন্য বর্তমানে মাটি, শুকনা কাঠ, তুলি, স্প্রে মেশিন ও রংসহ সকল কাঁচামালের দাম অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পেয়েছে। তাই খেলনাগুলো তৈরি করে আগের মতো লাভ করা সম্ভব হচ্ছে না। এ কাজের জন্য কোনো এনজিও বা ব্যাংক আমাদেরকে লোন দিচ্ছে না। আর অন্য কাজ না শেখার কারণে বাধ্য হয়ে বর্তমানে এ পেশা আঁকড়ে ধরে পড়ে আছি।
অলিপুর বড় কুমার বাড়ির কারিগররা জানান, একটি খেলনা তৈরি করতে সর্বমোট ৩ থেকে ৪ ঘণ্টা সময় ব্যয় করতে হয়। অন্য কাজে এই ৪ ঘণ্টা সময় ব্যয় করলে দেড় থেকে ২শ’ টাকা আয় করা সম্ভব। আর একটি খেলনা বিক্রি করতে হয় ৩০ থেকে ৫০ টাকায়, তারপর লাভ। এ অবস্থায় সামনের দিকে এই পেশা ছেড়ে দেবার ইচ্ছা আছে।
(এমজে/এএস/এপ্রিল ১২, ২০১৪)