ছাদেকুল ইসলাম রুবেল, গাইবান্ধা : পলাশবাড়ী  উপজেলার বিভিন্ন ওলিলিতে শিক্ষক কর্তৃক সরকারী নীতিমালাকে বৃদ্ধাঙ্গলী দেখিয়ে দীর্ঘদিন ধরে রমরমা ভাবে নিষিদ্ধ কোচিং বাণিজ্য চালিয়ে আসছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

স্থানীয়রা জানান, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকরা স্বীয়স্বার্থে সরকারের কঠোর নির্দেশনা উপেক্ষা করে কতিপয় সহকারী শিক্ষকের পৃষ্টপোষকতায় বীরদর্পে অবৈধভাবে কোচিং বানিজ্য চালিয়ে আসলেও দেখার যেন কেউ নেই। কোচিং বানিজ্যের সাথে সংশ্লিষ্ট প্রধান শিক্ষক বিদ্যালয়ের ৬ষ্ট শ্রেণি থেকে ১০ম শ্রেনি পর্যন্ত সকল শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের উন্নত পাঠদানের মাধ্যমে অভাবনীয় ফলাফল অর্জনের শতভাগ নিশ্চয়তাসহ নানা ধরণের সুযোগ সুবিধা দেয়ার আশ্বাস দিয়ে কোচিং ক্লাশে ভর্তির জন্য উৎসাহিত করছেন বলে একাধিক সুত্রে জানা গেছে।

তাদের এমন আশ্বাসে অনেক অভিভাবক অতি উৎসাহী হয়ে ছেলে মেয়েদের ভবিষ্যত ভেবে তাদের কোচিং ক্লাশে ভর্তি করে দেয়। এভাবে আড়াই থেকে প্রায় তিনশত শিক্ষার্থী ভর্তি হয়। এসব শিক্ষার্থীদের নিকট থেকে প্রতিমাসে শ্রেণি ভিক্তিক ৪শ থেকে ৫শ টাকা কোচিং ফি আদায় করা হয়।

এদিকে কোচিং শিক্ষার্থীদের কাঙ্খিত ফলাফল অর্জনের জন্য ঢাক-ঢোল পিটালেও বাস্তব চিত্রে তা সম্পূর্ণ বিপরীত। তাদের কথা ও কাজের কোন মিল নেই। এমন কথা জানিয়ে মজিবর রহমান ও মফিজল হক নামের দুই অভিভাবক ক্ষোভের সাথে জানান, বড় আশা আর বুকভরা স্বপ্ন নিয়ে ছেলেকে কোচিং ক্লাশে ভর্তি করে দিয়েছিলাম। কিন্তু তাতে ছেলের লেখাপড়ার তেমন কোন উন্নতি হয়নি। অহেতুক প্রতি মাসে ৪/৫ শত টাকা গচ্ছা দিতে হচ্ছে।

অন্যদিকে আমিনুর রহমান ও গফুর আলীসহ দরিদ্র পরিবারের অনেক অভিভাবক বলেন, ছেলে মেয়েদের পিছনে প্রতিনিয়তই, খাতা কলম ও বই পুস্তক কিনতে অনেক টাকা ব্যয় হয়। তার উপর শিক্ষকদের চাপে নিরূপায় হয়ে কোচিং ক্লাশে ছেলে মেয়েদের ভর্তি করতে হয়েছে। প্রতিমাসে অতি কষ্টে ধার-দেনা করে হলেও কোচিং ফি পরিশোধ করতে হয়।

জানা গেছে, কোন শিক্ষার্থী যথাসময়ে কোচিং ফি পরিশোধ করতে ব্যর্থ হলে কিংবা একটু হেরফের করলেই ওই শিক্ষার্থীকে তারা নানা ভাবে ভৎর্সনা ও গালমন্দ করেন বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষার্থী এমন অভিযোগ করছেন। এছাড়া অভিযোগ রয়েছে প্রধান শিক্ষক ও কোচিয়ের সাথে সংশিøষ্ট সহকারী শিক্ষক গণ স্বীয়স্বার্থে বিভোর হয়ে সরকারী নির্দেশানুযায়ী সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত বিদ্যালয় চলাকালীন সময়ে যথাযথ ভাবে ক্লাশে পাঠদান না করে তারা অনেকটা অমনোপযোগি হয়ে শুধুমাত্র চাকুরী রক্ষার স্বার্থে লোক দেখানো কোন রকম দায়সারা গোচের পাঠদান করেই ক্লাশ থেকে সটকে পড়ছেন। এসব ক্লাশের প্রতি তারা তেমন কোন গুরুত্ব না দিয়ে শুধুই কোচিং ক্লাশ নিয়েই ব্যস্ত থাকেন বলে জানা গেছে।

এদিকে স্থানীয় অপর একটি সুত্র জানায়, কোন দিন ৩টা কোন দিন সাড়ে ৩টা বাজতে না বাজতেই ছুটির ঘন্টা বাজিয়ে দিয়েই কোচিং ক্লাশ শুরু করা হয় । আর তা চলে রাত ৯টা সাড়ে ৯টা বা ১০টা পর্যন্ত। এ সময় বিদ্যালয়ের অবকাঠামো, বিদ্যুত, চেয়ার, টেবিল, কাগজ কলম, চক ডাষ্টারসহ যাবতীয় উপকরণাদি তারা অবৈধভাবে নির্বিঘ্নে ব্যবহার করে কোচিং ক্লাশ চালিয়ে আসছেন।

তথ্যসুত্রে আরও জানা গেছে, কোচিং পরিচালনা কর্তৃপক্ষ কোচিংয়ে ভর্তি হয়নি এমন অনেক শিক্ষার্থীদের কে নানা রকম ভয়ভীতি দেখিয়ে তাদের কোচিংয়ে ভর্তি হতে বাধ্য করছেন।

বিশেষ করে আসন্ন এস. এস. সি পরীক্ষায় অংশ গ্রহন করবে এমন শিক্ষার্থীরা কোচিংয়ে ভর্তি না হলে তাদের কে ব্যবহারিক পরীক্ষায় কম নম্বর দেয়াসহ ফেল করে দেয়া হুমকি দেয়া হচ্ছে বলে জানা যায়।
তবে প্রধান শিক্ষকরা এ অভিযোগ অস্বীকার করেন। এ প্রসঙ্গে পলাশবাড়ী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার জানান, বিষয়টি আমার জানা নেই। বিষয়টি ক্ষতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেয়া হবে।


(এসআইআর/এসপি/অক্টোবর ২০, ২০১৭)