পলাশবাড়ীতে পোকার পেটে কৃষকের স্বপ্ন
ছাদেকুল ইসলাম রুবেল, গাইবান্ধা : এ উপজেলার অধিকাংশ মানুষেই একমাত্র জমির ফসলের উপর নির্ভশীল। উৎপাদিত ওই ফসল দিয়ে মৌলিক চাহিদা গুলো মেটানোর চেষ্টা করেন। বিগত বন্যায় কৃষকদের ব্যাপক ক্ষতি হওয়ার পর ঘুরে দাড়ানোর জন্য ধার-দেনা করে আমন ধান চাষাবাদ করেন। কাঙ্খিত ধান কাটাই-মাড়াই করে কিছুটা হলেও স্বচ্ছতা ফিরে আনবেন বলে কৃষকের স্বপ্ন। যেন সেই স্বপ্ন স্বপ্নই রয়ে গেল। সম্প্রতি দেখা দিয়েছে আমন ক্ষেতে নানা রোগের প্রাদুর্ভাব। কৃষকরা ঘুরে দাড়ানোর চেষ্টা করলেও তা কোনক্রমেই ধকল সামলাতে পারছেন না। নানান দুর্ভোগে পড়ছেন কৃষকরা।
চলতি আমন মৌসুমে উপজেলার প্রত্যান্ত অঞ্চলের মাঠপর্যায়ে এবার আমন ধান ক্ষেতে নেকব্লাস্ট, শীষ ব্লাস্ট ও বিএলবি (পাতা পোড়া) রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। ফলে কৃষকদের কাঙ্খিত ফলন না হওয়ায় দিশাহারা হয়ে পড়েছেন তারা।
কৃষকরা জানান, রোপিত আমন ধানের গাছের পাতা সাদা হয়ে পঁচন ধরছে। তাদের অভিযোগ, কৃষি বিভাগের পরামর্শে সংক্রমিত জমিতে কীটনাশক প্রয়োগ করেও কোনো কাজ হচ্ছে না। এক জায়গায় এ রোগ দেখা দিলে মুহূর্তেই তা ছড়িয়ে পড়ছে পুরো জমিতে। এতে ক্ষতির মুখে পড়েছেন এ উপজেলার দুই লাখেরও বেশি কৃষক।
সরজমিনে পলাশবাড়ী উপজেলার শ্যামপুর গ্রামের আমন চাষি মমিন ও সুমন মন্ডল বলেন, আমার ৫০ শতক জমিতে হঠাৎই দেখি ধানের গাছের পাতা ও শীষ সাদা হয়ে যাচ্ছে। পরে কৃষি বিভাগের লোক এসে ওষুধ লিখে দিলে সে মোতাবেক স্প্রে করি। কিন্তু পরের দিন এসে দেখি পুরো জমির ধানের শীষ সাদা হয়ে গেছে।
একই কথা জানিয়েছেন, বিভিন্ন গ্রামের আরো বেশ কয়েকজন কৃষক। তাদের অভিযোগ, কৃষি বিভাগের কোনো পরামর্শেই কাজ হচ্ছে না। ক্ষেতের পর ক্ষেত সাদা হয়ে গেছে। এতে সর্বস্বান্ত হয়ে পড়েছেন কৃষক মহল। কৃষক জলিল উদ্দিন বলেন, আমার কোনো আবাদি জমি না থাকায় আমি ৬০ শতক জমি বর্গা নিয়ে আমন ধান চাষ করেছি। ৪০ মণ ধান ঘরে তোলার আশাবাদে বিভিন্ন এনজিও সংস্থা থেকে লোন নিয়ে ধান চাষাবাদ করি।
এমতাবস্থায় ওই ক্ষেতে সাদা পাতা ও শীষ বের হয়েছে। বর্তমানে জমি থেকে ১০ মণ ধান অর্জন করাও সম্ভবনা নেই। বিশেষ করে বি-আর-১১ জাতের ধানে এ রোগে আক্রান্ত বলে তিনি জানান। গাইবান্ধা জেলার দায়িত্বরত মামুন এগ্রো প্রোডাক্টস লিঃ এর এসএমও সোলায়মান সরকার ও নাগবাড়ী বাজারের রিটেইলার শাফিউল মন্ডল এসব রোগের তথ্য নিশ্চিত করে বলেন বিঘা প্রতি ৩০ গ্রাম ফিক্সার এর সাথে ১০০ গ্রাম পটাস মিশ্রিত স্প্রে করলে কৃষকেদের সমস্যা সমাধান হতে পারে।
পলাশবাড়ী কৃষি কর্মকর্তা আজিজুল ইসলাম জানান, এসব রোগের জন্য ফিক্সার, টল ও সালফাইটার দেয়ার পরামর্শ দিচ্ছি। আর যেসব জমি এখনো সংক্রমিত হয়নি, সেসব জমিতে প্রতিরোধক হিসেবে ফিক্সার, নাটিভো, টল ওষুধ স্প্রে করার পরামর্শ দিচ্ছি। আমরা সম্ভাব্য সবকিছুই করছি।
(এসআইআর/এসপি/অক্টোবর ২০, ২০১৭)