প্রহলাদ মন্ডল সৈকত, রাজারহাট (কুড়িগ্রাম) : কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলা কমপ্লেক্সটি ৫০ শয্যায় উন্নীত হলেও রোগীরা চরম ভোগান্তি শিকার হচ্ছে প্রতিনিয়িত। ফলে এ কমপ্লেক্সটির সুনাম ক্ষুন্ন হয়ে ইউনিয়ন কমিউনিটি ক্লিনিকের ন্যায় পরিনত হয়েছে। হাসপাতালে নেই ডাক্তার, নেই ওয়ার্ডবয়, নেই তেমন লোকবল। ফলে সেবা নিতে এসেও রোগীরা সেবা না পেয়ে অন্যত্র চলে যাচ্ছে। কিংবা মূমুর্ষ রোগীরা প্রয়োজনীয় চিকিৎসা না পেয়েই অকালেই মারা যাচ্ছে।

সংশিøষ্ট সূত্রে জানা যায়, রাজারহাট উপজেলার আড়াই লাখ মানুষের স্বাস্থ্য সেবার জন্য এই উপজেলা স্বাস্থ্য কমেপ্লেক্্রটি স্থাপিত করা হয়। ৫০শয্যায় বিশিষ্ট হাসপাতালে ১০জন অভিজ্ঞ চিকিৎসক ও ১৭জন সাধারণ চিকিৎসক মিলে মোট ২৭জন চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও মাত্র ৪জন চিকিৎসক রয়েছে। এদের মধ্যে অভ্যন্তরিন জঠিলতার কারণে বেশ কিছুদিন ধরে ডাঃ ফারুক হাসান বসুনিয়া ও ডাঃ মোফাজ্জাল হোসেন বাইরে অবস্থান করছেন।

বর্তমানে ওই হাসপাতালে ডাঃ জিয়াউল আলম চিকিৎসা সেবা দিয়ে আসছে। আর ১জন চিকিৎসক প্রশাসনিক কাজে সর্বদা নিয়োজিত থাকায় বহিঃবিভাগে রোগী দেখা সম্ভব হয় না। চতুর্থ শ্রেনীর আয়া, ওয়ার্ডবয় ও সুইপার ১জন করে থাকায় ইনডোরে চিকিৎসকের সহায়তাদান ও হাসপাতাল ক্যাম্পাস পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন কাজে হরহামেশায় বিঘ্ন ঘটছে।

পরিসংখ্যান জাহাঙ্গীর আলম জানান, এখানে মেডিকেল অফিসার পদে ৫জন, ৩য় শ্রেণীর ১৪জন ও ৪র্থ শ্রেনীর কর্মচারী ১জনের পদ শুণ্য রয়েছে। চিকিৎসক না থাকায় সকল ধরণের অপারেশন বন্ধ রয়েছে। এছাড়া হাসপাতালটিতে ১যুগ ধরে এক্সরে মেশিন বন্ধ থাকায় রোগীদের চরম দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। গুটি কয়েক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়ে হাসপাতালটিতে চিকিৎসা সেবা দিতে গিয়েও প্রশাসনের উদাসিনতায় ৪র্থ শ্রেণীর কর্মচারী নুরুজ্জামান, আখের আলীকে সিভিল সার্জন অফিসে এবং হযরত আলী, রোকনুজ্জামান ও কহিনুর বেগমকে কুড়িগ্রাম সদর হাপাতালে প্রেষণে (ডিপুটিশনে) নেয়া হয়েছে। ফলে কর্তৃৃপক্ষের চতুরতায় কয়েকজন মহিলাকে বিনা পারিশ্রমিকে দিবা-রাত্রি কাজ করে নিচ্ছে।

২১অক্টোবর শনিবার দুপুরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মহিলা ওয়ার্ডে মাত্র ৭জন এবং পুরুষ ওয়ার্ডে মাত্র ১০জন রোগী চিকিৎসা সেবা নেয়ার জন্য বেডে কাতরাচ্ছে।

চিকিৎসারত রোগীরা অভিযোগ করে বলেন, ২৪ ঘন্টায় ডাক্তার মাত্র ১বার (রাউন্ড) ঘুরে যায়। এমনকি কখনও ২দিন পর ১বার ডাক্তার রাউন্ড দেয়। এতে বেশী অসুস্থ রোগীরা চিৎকারে পাশের রোগীদের অসুবিধা হয়। এ হাসপাতালে চিকিৎসারত রোগীরাই সুচিকিৎসা পাচ্ছে না। তাই কখনো ডাক্তারের ইচ্ছায় আবার কখনও রোগীরা চিকিৎসা না পেয়ে বাধ্য হয়েই ছাড়পত্র নিয়ে অন্য হাসপাতালে কিংবা বাড়ীতে পল্লী চিকিৎসকের শরণাপন্ন হচ্ছে।

এ ব্যাপারে ২১অক্টোবর শনিবার উপজেলা ইউএইচএফপি ডাঃ মোঃ শহিদুল্লাহ জানান, চিকিৎসক ও কর্মচারী না থাকায় হাসপাতালটির এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। বাইরে অবস্থানরত ২ চিকিৎসকের ব্যাপারে বলেন তাদেরকে বেশ কয়েকবার শোকজ ও বর্তমানে তাদের বেতন বন্ধ করে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

কুড়িগ্রাম সিভিল সার্জন ডাঃ এসএম আমিনুল ইসলাম জানান, রাজারহাট স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সটির ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে।

(পিএমএস/এসপি/অক্টোবর ২১, ২০১৭)