শরীয়তপুর প্রতিনিধি : প্রজনন মৌসুমে  ১ থেকে ২২ অক্টোবর মোট ২২ দিন নদীতে মা ইলিশ শিকারে নিষেধাজ্ঞা জারি করে নজরদারি রাখলেও মাছ ধরা রোধ করতে পারেনি সরকার। শরীয়তপুরের পদ্মা-মেঘনার নৌ সীমানায় টহলের ব্যবস্থা থাকলেও তা উপেক্ষা করে রাত দিন মাছ শিকার করেছে জেলেরা। আর অভিযানে প্রতিদিনই জেলার চার উপজেলার কোন না কোন এলাকায় আটক করা হয়েছে জাল, নৌকা, জেলে, মাছ।

গত ২০ দিনে মৎস বিভাগ, কোষ্টগার্ড, র‌্যাব ও পুলিশের অভিযানে মোট ৫ শত জন জেলেকে আটক করে তাদের মধ্যে ৩ শত ৯৭ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা, ১ শত ১৩ জনকে জরিমানা করা হয়। কারেন্ট জাল আটক করা হয় প্রায় ২২ লÿ মিটার, মা ইলিশ জব্দ করা হয়েছে ৮ মেট্রিক টনেরও বেশী এবং প্রায় ৪০টি মাছ ধরার নৌকাও আটক করেন অভিযান পরিচালনাকারিরা।

শরীয়তপুর মৎস বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, শরীয়তপুর জেলার জাজিরা, নড়িয়া, ভেদরগঞ্জ ও গোসাইরহাট উপজেলায় নিবন্ধিত জেলে রয়েছেন ৩৩ হাজারেরও বেশী। তার মধ্যে মাত্র ১৩ হাজার জেলের জন্য রয়েছে মৎস ভিজিএিফ কার্ডের মাধ্যমে প্রতি মাসে ৪০ কেজি পরিমানে চাল সহায়তা। বাকি ২০ হাজার জেলেকে রাখা হয়েছে সকল প্রকার সরকারি সহায়তার বাইরে। ফলে, আড়ৎ মালিক, দাদন ব্যবসায়ী, এনজিওর কিস্তির টাকা পরিশোধসহ সংসার চালানোর তাগিদে অনেক জেলে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে নদীতে মাছ ধরতে নেমে আটক হয়েছে।

মৎস বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ২০ দিনের অভিযানে সবচেয়ে বেশী সফলতা দেখিয়েছে নড়িয়া উপজেলা। পদ্মা নদীর মাত্র ৫ কিলোমিটার নৌ সীমানা থেকে তারা ১৯৬ জন জেলেকে আটক করে তাদের মধ্যে ১৫৬ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দিয়েছেন। বাকি ৪০ জনের প্রত্যেককে ৫ হাজার করে মোট ২ লক্ষ টাকা জরিমানা করেছেন। জাল আটক করেছেন ৬ লক্ষ মিটার এবং সারা জেলা থেকে জব্দকৃত ৮ টন ইলিশের মধ্যে ৪ মেট্রিক টনই জব্দ করেছে একা নড়িয়া উপজেলা মৎস বিভাগ। এর পরের সফলতা এসেছে জাজিরা উপজেলা থেকে। সেখানে ২০ দিনে ১৮৪ জেলেকে আটক করে তাদের মধ্যে ১৪৭ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা ও ৩৭ জনকে ৫ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে।

১৫ কিমি নৌ সীমার ভেদরগঞ্জ উপজেলায় কোষ্ট গার্ডের টিম থাকলেও সেখান থেকে সফলতা তেমনটি অর্জণ করা সম্ভব হয়নি। ২০ দিনের অভিযানে তারা মাত্র ৮৫ জনকে আটক করেছে। এর মধ্যে ৫৮ জনকে সাজা ও ২৭ জনকে জরিমানা করে ছেরে দিয়েছেন। কোষ্ট গার্ডের অভিযানে ৩২টি মাছ ধরার নৌকাও আটক করা হয়। জেলার সবচেয়ে বড় নৌ সীমানা গোসাইরহাট উপজেলায় বরাবরই অভিযান থাকে রহস্যে ঘেরা। এ উপজেলায় প্রায় ২৫ কিমি এলাকায় ইলিশের উৎপাদন ক্ষেত্র থাকলেও অভিযান হয়েছে চোখে না পরার মত। ২০ দিনে তারা মাত্র ৪৫ জেলেকে আটক করে তাদের থেকে ৩৬ জনকে সাজা ও ৯ জনকে জরিমানা করেছেন।

ইলিশের প্রজনন মৌসুমে মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞাকালিন সময়ে বিভিন্ন দপ্তরের সরকারি কর্মকর্তাদের নিয়ে এলাকাবাসীর মধ্যে অনেক বিরুপ ধারনার জন্ম নেয়। বিশেষ করে গোসাইরহাট ও সখিপুর থানা পুলিশ বিতর্কের উর্ধ্বে উঠতে পারেননা। তাদের সাথে বিভিন্ন সিন্ডিকেটের যোগসাজসে ইলিশ ধরায় সহায়তার কথা শুনা যায়।

অভিযানের সময় আইন শৃংখলা বাহিনীর হাতে আটক জেলেদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, তারা সরকারি সহায়তা থেকে বঞ্চিত হওয়ার কারনে এবং এনজিও, মহাজন, দাদন ব্যবসায়ী ও আড়তদারদের কিস্তি পরিশোধের টাকা যোগার করতেই বাধ্য হয়ে তারা আইন অমান্যকরে নদীতে নামে মাছ ধরতে।

শরীয়তপুর জেলা মৎস অফিসার কৃষিবিদ মো. আব্দুস সালাম বলেন, আমরা সাধ্য মত অভিযান পরচিালনা করে ২০ দিনে ৫ শত জনের অধিক লোক আটক করেছি। ৫ লক্ষ ২০ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করেছি। প্রায়ন ২২ লক্ষ মিটার কারেন্ট জাল উদ্ধার করে তা আগুনে পুড়িয়ে ফেলেছি। মৎস বিভাগের লোকবল বেশী থাকলে আমরা আরো সফলতা পেতাম।


(কেএনআই/এসপি/অক্টোবর ২১, ২০১৭)