শাহেদ খান: পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করে, সেক্ষেত্রে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় উজ্জ্বল ব্যতিক্রম। ব্যতিক্রম বলব এজন্যই যে, এই বিশ্ববিদ্যালয় একটি দেশের প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। এটি সর্বজনস্বীকৃত এবং আমিও ব্যক্তিগতভাবে মনে করি এ বিষয়ে কারোরই দ্বিমত থাকার কথা নয়।

একটু ভিন্ন প্রসঙ্গে আসি, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হবার পর থেকে প্রতি বছরই ভর্তি পরীক্ষার সময়ে প্রায় সবার কাছেই কমবেশি সুপারিশ আসে কোনভাবে কিছু করা যায় না! বোধ করি এ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র, শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী সবাই কমবেশি এ ধরণের প্রশ্নের সম্মুখীন হয়েছেন। এমন প্রশ্নে আমি বরাবরই একই উত্তর দিতাম স্বয়ং মহামান্য রাষ্ট্রপতি চাইলেও সম্ভব না।

প্রায়শই সংবাদপত্রে দেখা যায় অমুক প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তির বিরুদ্ধে অমুক অপরাধের অভিযোগ পাওয়া গেছে। সকল ক্ষেত্রে যে অভিযোগগুলো সত্য তা নয়। অনেক ক্ষেত্রে কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে হেয় করার জন্য উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে এটা করা হয়। অভিযুক্ত ব্যক্তি চাইলে প্রকাশিত সংবাদের প্রতিবাদ জানাতে পারেন। কিন্তু মিথ্যা অভিযোগে তার যে সম্মানহানি হয়েছে তা কি ফিরিয়ে আনতে পারবেন? এবং সেটি যদি হয় বাংলাদেশের সবচেয়ে স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে!

মুল প্রসঙ্গে আসি, সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের 'ঘ' ইউনিটের প্রশ্নফাঁসের অভিযোগ উঠেছে! আমার ব্যক্তিগত অভিমত যেটা সেটা হয়ত অনেকের মনেই ঘুরপাক খাচ্ছে। মিডিয়াকর্মীরা দাবি করছে তাদের কাছে ২০ তারিখ রাত অনুমানিক আড়াইটা থেকে তিনটার মধ্যে ইংরেজী অংশের ২৪ টি প্রশ্নের মেইল এসেছে। একটু ভাবুন তো কোন প্রশ্ন ফাঁসকারী কি জেনেশুনে সাংবাদিক কে ফাঁসকৃত প্রশ্ন মেইল করবে! অবশ্যই না! তবে কে করেছে? নিশ্চয়ই কোন সচেতন নাগরিক! ভাল কথা তবে তার পক্ষে কি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা অসম্ভব ছিল? সংগত কারনেই প্রশ্ন থেকে যায়।

সাংবাদিক বন্ধুরা দাবি করছেন, তাদের কছে রাতেই ইংরেজির ফাঁস হওয়া ২৪ টা প্রশ্নের মেইল এসেছে। দায়িত্বশীলতার জায়গা থেকে কি তাদের উচিত ছিল না সেটা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা! সচেতন নাগরিক হিসাবে আমরা সাংবাদিক বন্ধুদের কাছে জনস্বার্থে এটা আশা করতেই পারি।

বরং সবাই যখন প্রশ্ন তুলছে সাংবাদিক বন্ধুদের প্রতি আপনারা প্রশ্ন আগে পেয়ে থাকলে পরীক্ষার পরে নিউজ করলেন কেন? তখন আমি কিছুটা অবাক হলাম কতিপয় সাংবাদিক বন্ধুদের বক্তব্য দেখে! তারা বলেছেন, পরীক্ষার আগের রাতে 'ঘ' ইউনিটের ইংরেজি অংশের ফাঁসকৃত ২৪ টি প্রশ্ন আদৌ সঠিক কিনা তা নিশ্চিত হতে পরীক্ষা শেষ হওয়া পর্যন্ত তাদের অপেক্ষা করতে হয়েছে।

বিষয়টি অনেকটা আমার কাছে অনেকটা এমন মনে হয়েছে যে পাশের বাড়ির খড়ের গাঁদায় আগুন লেগেছে ঘরের লোককে পরে ডাকি, আগে দেখি ঘর পোড়ে কি না!

এই বিষয়ে আমার ব্যক্তিগত অভিমত হচ্ছে, প্রকৃতপক্ষে কি ঘটেছে তা জানার জন্য তদন্ত কমিটি গঠন করে সুষ্ঠু তদন্ত করা প্রয়োজন। আর সত্যিই প্রশ্নফাঁস হয়ে থাকলে দুষ্কৃতিকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা উচিত যাতে আর কেউ এমন অপরাধ করার দুঃসাহস না করে। নতুবা এ ধরনের ঘটনা পুনরাবৃত্তি অবসম্ভাবি।

লেখক: ছাত্র, আইন বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

(অ/ও/অক্টোবর ২৪, ২০১৭)