পূর্ব প্রকাশের পর
দ্বিতীয় দৃশ্য
(প্রথম অংক)

(রাম নিত্যপৃজায ব্যস্ত। সীতা গলায় বস্ত্র নিযে প্রণাম করে উঠতে উঠতেই লক্ষণ মঞ্চে প্রবেশ করে হাতে কিছু ফল নিয়ে।)

লক্ষন : বৌঠান ও বৌঠান, বৌঠান।
(সীতা প্রণাম সেরে উঠে ইশারায চুপ করতে বলে লক্ষণকে।)
সীতা: তোমার দাদা পুজায বসেছেন। পূজার ব্যাঘাত হবে।
লক্ষণ: এই নাও।
সীতা : এত সুন্দর ফল তুমি কোথায পেলে লক্ষণ। প্রাতঃরাশে ফল অতুলনীয় ।তুমি ঠাকুরের প্রণাম সেরে নাও। আমি আসছি।
(লক্ষণ ঠাকুরকে প্রণাম করতে যায । সীতা যায় ফল পরিবেশন করার জন্য পাত্র আনতে। প্রণাম সেরে লক্ষণ আর রামের কথোপকথন।)
লক্ষনঃ দাদা, দেখ বৌদি অল্প কদিনের মধ্যে পঞ্চবটিকে কেমন আপন করে নিয়েছে। সাংসারিক কাজের দক্ষতা দেখলে কে বলবে তিনি রাজকন্যা।
রাম: তোমার তৈরি এই সুন্দর কুটির পেয়ে সে অযোধ্যার রাজ প্রাসাদের কথা একে বারেই ভুলে গেছে। তা তুমি এত সুন্দর ঘর কিভাবে করলে লক্ষণ? এই বিদ্যায় যে তোমার দক্ষতা আছে সেটা তো জানা ছিল না।
লক্ষ্মণ : সে গুরুজনদের আর্শিবাদ দাদা। তোমার কাছে এই পঞ্চবটিটা কেমন লাগছে।
রাম: এমনিতে তো খুব সুন্দর। চির সবুজ বন। পাখির কলকাকলি। কিন্তু মানুষের আবাধ বিচরণে কোথায় যেন বাধা আছে বলে মনে হচ্ছে।
লক্ষণ: সবুজ বন দেখে মনে হচ্ছে দক্ষীনের সাগর এখান থেকে বেশী দুরে হবে না। রাক্ষস রাজ রাবণের রাজত্ব থেকে আমরা খুব বেশী দুরে নয়।
(সীতা দুই হাতে দুটো পাত্রে কিছু কাটা ফল এনে তুলে দেয দুই ভাইয়ের হাতে)
সীতা: দেখ ফলটা নিশ্চিত মিষ্টি।
রাম: তুমি কিভাবে জানলে, খেয়ে দেখছে?
সীতা: যা তোমাদের খাবার আগে আমি কি কখনও খাই। চেয়ে দেখ এই পঞ্চবটিকে। এর ফল সুমিষ্ট না হয়ে পারে।
রাম: স্বামীর আগে রেধে বেড়ে যেবা নারী খায়। লক্ষ্মী বলে সেঘর থেকে পালায় পালায়।
সীতা: নাও আর জ্ঞান দিতে হবে না । আমি ভাল জানি। তাড়াতাড়ি খেয়ে নাও।
লক্ষণ: তোমরা কথা বলো, আমি একটু গোদাবরীর পাশ দিয়ে হেটে আসি। ( বলতে বলতে লক্ষণ বেরিয়ে যায়)
সীতা: চোখ নাক খোলা রেখ। বেশী দুরে যেও না লক্ষণ। দুপুরের আহারের আগে ফিরে এসো। (রামকে) লক্ষণ আর উর্মিলার কথা ভাবলে আমার মাঝে মাঝে ভীষণ কষ্ট হয়। সংসারের সুখ ছেড়ে দশটি বছর শুধু আমাদের সেবা করে যাচ্ছে।
রাম: সবই বিধাতার খেলা। তুমিও তো আমার জন্য সেই প্রাসাদ সুখ ছেড়ে দশ বছর বনে বনে কাটিয়ে দিলে জানকী ।
সীতা: আমি তোমার স্ত্রী। সুখে দুঃখে তোমার সাথে থাকতে পারাটাই আমার সার্থকতা। লক্ষণকেতো পিতৃ সত্য পালনের দরকার ছিল না। উর্মীলার কি দোষ?
রাম: হু সবই বুঝি। আমিতো ওকে আসতে বলিনি।
সীতা: হয়তো মনে মনে তুমি চেয়েছিলে ও তোমার সাথেই আসুক।
রাম: সবই অদৃষ্ট। হয়তো অবচেনস মনে চেয়েছিলাম। আচ্ছা বলতো এই পঞ্চবটি এসে তোমার কেমন লাগছে।
সীতা : এত সুন্দর পঞ্চবটিতে গৃহ অভ্যন্তরে থাকতে কিছুতেই মন চায় না ।
রাম: সত্যি পঞ্চবটি সকলের চেয়ে আলাদা। তবে এখানে এসে তোমার নিরাপত্তা নিয়ে আমার কেন যেন চিন্তা হচ্ছে।
সীতা : এত দুশ্চিন্তা করবেন না। আমারতো কখনও তা মনে হয় না ।
রাম: হয়ত দুশ্চিন্তা করার কিছু নেই, তবুও লক্ষণ কিম্বা আমাকে ছাড়া বাইরে হাঁটাহাঁটি করা তোমার উচিত হবে না।
(লক্ষণ মঞ্চে প্রবেশ করে)
সীতা: এত তাড়াতাড়ি ফিরে এলে লক্ষণ।
লক্ষণ: একটি শিয়াল বাম পাশ থেকে দৌড়ে ডান দিকে চলে গেল। মনে হলে অশনি সংকেত। মনে হলো হাটাহাটি করা উচিৎ হবে না কুটিরে ফিরে যাই।
(রাম লক্ষণ সীতার উপর আলো আবছা হয়ে যায় সুন্দরী সূর্পনখার প্রবেশ। তার উপর আলোর ফোকাস)
সূর্পণখা: ওমা ! এ কে গা। এমন রূপ কোথায় পেলোগো। এযে পাগল করা রূপগো। মানুষকি কখনো এমন সুন্দর হতে পারে অ্যাঁ । আমি যদি ওকে বিয়ে করতে পারি তাহলে খুব মজা হবে। ওমা সাথে দেখি একজন সুন্দরী মেয়ে মানুষও আছে। ও কার কমিনিীগো। দেখি আগে পরিচয়টা জেনে দেখি।
(পুরো মঞ্চে আলো জ্বলে উঠে)
সূর্পণখা: হ্যাগা তোমার নাম কিগো। এই বনেতো আগে কখনও দেখি নাই।
(লক্ষণ ঘুরে গিয়ে সীতার পাশে দাঁডায়। )
রাম: আমি রামচন্দ্র। অযোধ্যার রাজা দশরথ পুত্র।
সূর্পণখা: তোমার পাশে ও কে গা। তোমরা কি যমজ নাকি গো।
রাম: ও আমার ভাই। লক্ষণ।
সূর্পনখা: তোমার সাথে এই কামিনীটা কেগো।
রাম: ইনি সীতা। জনক রাজার কন্যা। আমার স্ত্রী।
সূর্পনখা: হ্যাগা আমার কি হবে গো।
রাম: তুমি এমন করছ কেন। তোমার কী হবে মানে?
সূর্পনখা: আমি যে তোমাকে ভালবেসে ফেলেছি গো। আমি যে তোমকে বিয়ে করতে চেয়েছিলাম গো।
রাম: আমাকে তুমি বিয়ে করতে চাও! সেতো খুব ভাল কথা।
সীতা : ( সীতা রেগে যায়) হচ্ছেটা কী।
রাম: (সীতাকে ফিস ফিস করে) ক্ষেপছ কেন একটু মজা করি। (সূর্পনখাকে উদ্দেশ্য করে) কিন্তু আমিতো তোমাকে চিনিনা । তোমার পরিচয় বলো । তারপর বুঝি তোমাকে বিয়ে করতে পারি কিনা ।
সূর্পণখা: আমি সূর্পণখা । লঙ্কার রাজা দশানন রাবণ আমার ভাই। এক ভাই বীর কুম্ভুকর্ণ। আরেক ভাই ধার্মিক বিভিষণ। বড় ভাই কুবের থাকে কৈলাসে, শীবের সহচর। আমি ঘুরে বেড়ায় বনে বনে। যেখানে খুশি সেখানে। অশোক কানন থেকে পঞ্চবটি, গন্ধমাদন থেকে হিমালয়।
রাম: তাহলেতো তুমি যোগ্য পাত্রী্ কিন্তু আমাকে বিয়ে করলে তুমি সতীন পাবে। রাজার বোনের সেটা মানায় না । তার চেয়ে তুমি এক কাজ কর লক্ষণকে বিয়ে কর।
সূর্পনখা: সেটা একেবারে মন্দ প্রস্তাব নয়। দুজনইতো রূপে গুণে এক রকম। একজনকে বিয়ে করলেই হলো। (লক্ষণের কাছে গিয়ে) হ্যাগা তাহলে তুমিই আমাকে বিয়ে করো।
লক্ষণ: তুমি ভুল করছ। আমি ওনার দাস। উনি রামচন্দ্র অযোধ্যার রাজা। উনাকে বিয়ে করলে তুমি রাজরানী হবে।
সূর্পণখা: অ্যা, তাই নাকি। রাজা। (রাম কে) তাহলে আমি রাজাকেই বিয়ে করবো, রাজ রানী হবো । ও বুঝেছি কেন তুমি আমাকে বিয়ে করতে চাইছ না। (সীতাকে) তুই সব বাঁধা, তুই বেঁচে থাকতে রাম চন্দ্র রাজি হবে না । তোকে খেয়ে ফেললেই সব বাঁধা দুর হয়ে যাবে।
(সূর্পণখা সীতাকে আক্রমণ করে। সীতা রামের পিছনে চলে যায়। সূর্পণখা একবার ডান থেকে আরেকবার বাম থেকে আক্রমণ করে।)
রাম: লক্ষণ অনেক হয়েছে এবার। (লক্ষণ রা্মের দিকে তাকায়। রাম ইশারা দিয়ে সূর্পণখাকে প্রতিহত করতে বলে।)
লক্ষণ: দাড়াও বিয়ের শখ মেটাচি্ছ, সূর্পণখা ।
সূর্পণখা লক্ষণের দিকে তাকায়। লক্ষণ বান ছুরে মারে।
(সূর্পণখা নাক কানে হাত দিয়ে চিৎকার করে বেরিয়ে যায়।)

(দ্বিতীয় দৃশ্য শেষ – চলবে)

রামায়ণ অবলম্বনে প্রবাসী লেখক বিশ্বজিত বসুর নাটক 'অকাল বোধন' : পর্ব- ১