শেকৃবি প্রতিনিধি : মাস্টার্স পাস করার আগেই মাস্টার্সে ক্লাস নেয়ার অভিযোগ উঠেছে রাজধানীর শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শেকৃবি) কৃষি ব্যবসা ও বিপণন অনুষদের দুই শিক্ষকের বিরুদ্ধে।

জানা গেছে, শেকৃবির ম্যানেজমেন্ট ও ফিন্যান্স বিভাগে রাজিব কামাল চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে মাস্টার্সে ক্লাস নিচ্ছেন। অথচ তিনি নিজেই এখনও মাস্টার্স পাশ করেননি। তবে রাজিব কামালের দাবি তিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) ফিন্যান্স ও ব্যাংকিং বিভাগ থেকে সান্ধ্যকালীন এমবিএ কোর্সে পাশ করেছেন।

এদিকে জাবি ফিন্যান্স ও ব্যাংকিং বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, রাজিব কামাল সান্ধ্যকালীন এমবিএ কোর্সের ১৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী (আইডি-২০১৬২০১৯)। ওই ব্যাচের ফলাফল এখনও প্রকাশিত হয়নি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন এমবিএ শিক্ষার্থী বলেন, রাজীব স্যার ক্লাসে সংশ্লিষ্ট টপিক না পড়িয়ে অন্যান্য বিষয় নিয়ে বেশি কথা বলতেন। কোনো টপিকই ভালোমতো বুঝাতে পারতেন না। লেকচার না বুঝতে পেরে প্রশ্ন করলে তিনি রেগে উঠতেন।

এদিকে, কৃষি ব্যবসা ও বিপণন বিভাগ সূত্র জানিয়েছে, ফজলুল হক নামে একজন চলতি বছরের মার্চ থেকে ওই বিভাগের মাস্টার্স শ্রেণিতে ক্লাস নিচ্ছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) মার্কেটিং বিভাগ সূত্র জানা গেছে, ফজলুল হক সান্ধ্যকালীন এমবিএ (মার্কেটিং) কোর্সের ২৯তম ব্যাচের শিক্ষার্থী (আইডি: ৪১৫২৯০৫১)। ওই ব্যাচের ফলাফল চলতি বছর ৪ জুন প্রকাশিত হয়েছে।

তবে অভিযুক্ত ওই দুই শিক্ষক জানিয়েছেন, বিভাগীয় চেয়ারম্যানের নির্দেশেই তারা ক্লাস নিয়েছেন।

এ ব্যাপারে ম্যানেজমেন্ট ও ফিন্যান্স বিভাগের চেয়ারম্যান সহকারী অধ্যাপক আবু জাফর আহমেদ মুকুল এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘বিসিএসের মতো পরীক্ষায় যদি অ্যাপিয়ার্ড সনদ দিয়ে পরীক্ষা দেয়া যায়, তবে এখানে ক্লাস নিতে পারবে না কেন?’ এক পর্যায়ে তিনি হুমকি দিয়ে বলেন, ‘বেশি টাকা খেয়ে নিউজ করার চেষ্টা করো না।’

এদিকে, কৃষি ব্যবসা ও বিপণন বিভাগের চেয়ারম্যান সহকারী অধ্যাপক সজীব সাহার সঙ্গে মুঠোফোনে কল ও মেসেজ দিয়েও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

স্নাতকোত্তর শ্রেণির ডিন অধ্যাপক ড. পরিমল কান্তি বিশ্বাস বলেন, সহকারী অধ্যাপক না হওয়া পর্যন্ত আমরা শিক্ষকদের মাস্টার্সে ক্লাস নিতে দেই না। এমবিএতে ক্লাস নিতে হলে সংশ্লিষ্ট শিক্ষককে ন্যূনতম এমবিএ পাশ হতে হবে। তবে, কোনো কোনো বিভাগে শিক্ষক স্বল্পতা থাকায় জুনিয়র শিক্ষকদেরও ক্লাস দিতে হয়।

খণ্ডকালীন শিক্ষক নিয়োগ না দেয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, কিছু কিছু বিভাগে খণ্ডকালীন শিক্ষক রয়েছেন। তাদের প্রতি কোর্সে ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা দিতে হয়। খণ্ডকালীন শিক্ষক না নেয়ার পেছনে এটাও একটা কারণ।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, ২০১৫ সালে শেকৃবির ডেভেলপমেন্ট ও পোভার্টি স্টাডিজে স্নাতকোত্তর শ্রেণিতে ভর্তি হন রাজিব কামাল। পরবর্তীতে থিসিসে ভুল ডাটা দেয়ার কারণে তার ডিগ্রি বাতিল করে উক্ত বিভাগ। সে সময় ওই বিভাগের চেয়ারম্যান ছিলেন ড. অশোক কুমার ঘোষ।

এ ব্যাপারে তিনি বলেন, রাজিবের থিসিসে অনেক ঝামেলা ছিল। সময় মতো থিসিস জমা না দেয়ায় তার ডিগ্রি বাতিল করা হয়।

কী ঝামেলা ছিল জানতে চাইলে তিনি বলেন, তার থিসিসে ৩৫ শতাংশের বেশি তথ্য নকল করা ছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ের (শেকৃবি) নিয়ম অনুযায়ী সুপারভাইজার ও কো-সুপারভাইজারের মধ্যে যে কোনো একজনকে সংশ্লিষ্ট বিভাগের শিক্ষক হতে হবে। কিন্তু রাজিবের ক্ষেত্রে দু’জনই সংশ্লিষ্ট বিভাগের বাইরের শিক্ষক ছিলেন। ত্রুটিপূর্ণ থিসিস লেখার কারণে রাজীব কামালের সুপারভাইজার তানভীর মাহমুদ পদত্যাগ করেন।

(ওএস/এসপি/নভেম্বর ০৩, ২০১৭)