পূর্ব প্রকাশের পর তৃতীয় দৃশ্য


(নেপথ্যে পুথি পাঠ চলতে থাকে । পাশাপাশি চলতে থাকে মঞ্চ সাজানোর কাজ।)

রক্তমাখা মুখ দেখে রেগে দূষণ খর
রামরে বধিবে বলে লাগায় সমর।
চৌদ্দ জন সেনাপতি পাঠায় ভ্রাতা খর
রামের ছোড়া চৌদ্দ বানে যায় যমের ঘর।
চৌদ্দ হাজার সৈন্য নিয়ে রণে আসে খর
এত সৈন্য দেখেও রাম নাহি পায় ডর।
রাম বলে লক্ষণেরে সীতা পাবে ডর
সীতাকে সরিয়ে নাও গুহার ভিতর।
এত বড় যুদ্ধ সীতা কভু দেখে নাই
সীতাকে তুমি দেখ, আমি লড়ে যাই।
খর-দূষনের সৈন্য চতুর্দশ হাজার
এক বানে রাম সব করে ছাড়খার।
খর-দূষণ মরে গেল কি হবে উপায়
কাটা নাক নিয়ে সূর্প রাবণ পানে ধায়।

(লঙ্কার রাজপুরি। রাবণ এবং মন্দোদরী সিংহাসনে বসা। সামনে চলছে মুখোশ নৃত্য।)

ধা ধা গা ধা , ধা ধা গা ধা
গা গা ধা ধা, গা গা ধা ধা
ধা ধা ধা ধা, ধা ধা ধা ধা
ধারে ধা ধারে ধা
ধারে ধা, ধারে ধা
গা ধা গা ধা, গা ধা গা ধা
গেরে কটে ধা, গেরে কটে ধা
গা ধা গা ধা, গা ধা গা ধা।

( নাচ শেষ হতেই সূর্পণখার প্রবেশ)

সূর্পণা: দাদা, রক্ষা করো দাদা।

মন্দোদরি: একি সূর্প, তোর কি হয়েছে, তোর নাকে মুখে রক্ত কেন।

রাবণ: তোমার এ অবস্থা কে করছে, কার এত বড় স্হাস ?

সূর্পণখা: পঞ্চবটি বনে গিয়েছিলাম দাদা। সেখানে দুই বনবাসী আমার এ অবস্থা করেছে।

রাবণ: সেখানে তো খর আর দূষণ রয়েছে। তারা কিছু করতে পারল না।

সূর্পণখা: তারা আর জীবিত নেই দাদা। আমার কাঁটা নাক দেখে তারা প্রতিশোধ নিতে গিয়েছিল । রাম একাই তাদের ধ্বংশ করে ফেলেছে। খর, দুষণ কেউই আর বেঁচে নেই দাদা।

রাবণ: রামের সাথে আর কে কে আছে সেখানে।

সূর্পণখা: রাম সেখানে থাকে সন্যাসির বেশে। কিন্তু সে সন্যাসি নয়। স্ত্রী সীতা আছে তার সাথে, আর আছে ভাই লক্ষণ।

রাবণ: এত বড় সাহস আমার বোনকে অপমান। তুই আমার পরিচয় দিয়েছিলি।

সূর্পণখা: হ্যাঁ, দিয়েছিলাম দাদা।

রাবণ: এই কে কোথায় আছিস। প্রতিশোধ আমাকে নিতেই হবে।

মন্দোদরি: শান্ত হোন মহারাজ, অত উতলা হবেন না।

(রাবণ মঞ্চে পায়চারি করতে থাকে। আর রেগে ফুসতে থাকে।)

সূর্পণখা: তোমার পায়ে পড়ি তুমি এর প্রতিশোধ নাও দাদা। তুমি সীতাকে তুলে এনে বিয়ে করো। আগে নারীর অপমানের প্রতিশোধ। তারপর হত্যার প্রতিশোধ ।

মন্দো: ওমা! তুই কী রামের সাথে প্রেম করতে গিয়েছিলি নাকি।

সূর্পণখা: হ্যাঁ------ ( মন্দোদরীকে জড়িয়ে ধরে)।

মন্দোদরী: তাইতো বলি আমার সুন্দরী ননদিনীর নাক কেন কাটা গেল।

রাবণ: মারিচ, মারিচ

মারিচঃ (হরিণের বেশে। মঞ্চে ঢুকে) আজ্ঞে মহারাজ।

মন্দোদরি: তুমি দেখি হরিণ বেশেই চলে এসেছে।

মারিচ: সবই মহারাজের ইচ্ছা।

মন্দোদরী: তোমরা যে আবার কোন কান্ড ঘটাবে। হে শঙ্কর আমাদের রক্ষা করো। চল সূর্প ভিতর চল। তোর নাকে কানে ওষুধ লাগাতে হবে।

(মন্দোধরী সূর্পণখা কে নিয়ে মঞ্চ থেকে বেরিয়ে যায়।)

রাবণ: হ্যাঁ এই বেশেই চলবে। রাম লক্ষণ নামে দুই ভাই পঞ্চবটিতে বাসা বেঁধেছে। আমার বোন জেনেও সূর্পণখার নাক কানে কেটে দিয়েছে। খর দুষণ কে হত্যা করেছে। প্রতিশোধের জন্য প্রস্তত হও। বোনের অপমানের বদলা চাই। হত্যার বদলে হত্যা চাই।

মারিচ: রামচন্দ্রকে মারবেন। সেটাকি পারবেন?

রাবণ: তুমি এভাবে কথা বলছ কেন মারিচ?

মারিচ: না আমি বলছিলাম রাম চন্দ্র স্বয়ং ---।

রাবণ: আমি যা বলছি তাই করো। আমার সংগে পঞ্চবটি চলো। তুমি হরিণ বেশে রাম লক্ষণকে কুটির থেকে বের করে বনের ভেতর নিয়ে যাবে। আমি প্রথমে সীতাকে তুলে আনব, মানুষের মাংসতো তোমার প্রিয় তাইনা ।

মারিচ: একাজ থেকে বিরত থাকুন মহারাজ। আমি ঘোর বিপদ দেখছি ।

রাবণ: আবারও তর্ক। আমি যা বলছি তাই করো। নইলে রাজ আজ্ঞা না শোনার অপরাধে আমার হাতেই তোমার মৃত্যু হবে।

(রাবণ মঞ্চ থেকে বেরিয়ে যায়)

মারিচ: বুঝেছি, আগে আমাকে মরতে হবে। তারপর ওর বংশ ধ্বংশ হবে। রাবণের হাতে মরার চেয়ে রামের হাতে মরাই উত্তম।

(মঞ্চে আলো নিভে যায়)
- চলবে

রামায়ণ অবলম্বনে প্রবাসী লেখক বিশ্বজিত বসুর নাটক 'অকাল বোধন' : পর্ব-