১. কলম

হে, আমার কলম তুমি যেও না থেমে;
কবিতার পাতায় বিদ্রোহ হয়ে এসো আজ নেমে।
তোমার কালিতে যেন জ্বলে ওঠে আজ বিদ্রোহের অগ্নিশিখা,
জালিমদের মৃত্যু তোমার কালিতে থাকে যেন আজ লেখা।
লেখা থাকে যেন তোমার কালিতে সাম্যের কবিতাখানি,
যেন থাকে লেখা তোমার কালিতে তারুণ্যের মহাবাণী।
কলম তুমি থেমে যেও না, চলতে আবার লাগো...
দানব-দাজ্জাল যে যেখানে বিশ্ব থেকে ভাগো।

২. যুদ্ধ, আমি ক্ষুব্ধ

অাজও ধরণীতে তাণ্ডব! দামামা!! শান্তি চারিদিকে রুদ্ধ
মরণ! মরণ!! খেলাতে অাজ বিশ্বরাঙা— যুদ্ধ।
অাজও মানুষ ধ্বংসতৃষায় জীবন করেছে বদ্ধ,
জীবন অাজও নিদারুণ অসহায় তামাম জমিন মধ্য।
অাজও শুনি অামি মৃত্যুর ধ্বনি; বাতাসে বারুদের গন্ধ…
অাজও দেখি অামি পুরো পৃথিবী বোমার ধোঁয়ায় অন্ধ!
অাজও মানুষের বিবেক হলো না, বিস্ময় জাগে বুকে!
রক্ত অাজ ঢেলে দাও তবে, পিপাসু পৃথিবীর মুখে!!
যুদ্ধ যদি করতে হয়, তবে করো জীবনের সাথে যুদ্ধ...
জীবনযুদ্ধে, অালোর রোদ্দে করো রে তাঁহা শুদ্ধ।
যুদ্ধ, অামি ক্ষুব্ধ; তবু, তোমার হাঙ্গামা থামলো না…
ক্ষুব্ধ অামার মানুষসত্তা, কেউ তা জানলো না!

৩. অগ্নিশিখা জ্বালো

পৃথ্বী মাঝে অর্য তুমি, চক্ষে তোমার অালো
অামি বলি, বক্ষে তোমার অগ্নিশিখা জ্বালো।
পোঁড়াও তোমার কুরিপু অাজ, জ্বালাও তোমার মন—
অামি দেখি, বক্ষে তোমার যুগের অান্দোলন।
চুরমার করো বিবেক তোমার, ছারখার করো তমা!
মানুষবেশী শূয়োর-জানোয়ার পায় না'কো যেন ক্ষমা।
অবাক ধরণী! অামি তো জানি স্যালুট করে গো তোমায়,
ক্ষুব্ধ অামি অাজকে অাজও বিশ্ব কাঁপে বোমায়!!

৪. মহাকাব্য

হে, মহাকাব্য!
অার কতোকাল নীরব থাকব?
কতোকাল অার সন্ত্রস্ততায়,
কালের নিঃসঙ্গতায়,
ধ্বংসখেলা হবে পক্ত!
অারও কতো মানুষ মরবে,
অকাতরে ঝরবে রক্ত!!
অারও কতো যুদ্ধ, অারও কতো
দানবের কালো নখড়ের হিংস্রতা;
হে, মহাকাব্য! উত্তর কি দেবে তা?

তবু, মহাকাব্য!
অাজ শুধু হাঁসব;
তুমি হয়ে উঠো অাজ এই বিশ্বমাঝ
বিদ্রোহী এক বর্ম,
`অাজ মৃত্যু, নয়তো জন্ম’।

৫. নববার্তা

চারিদিকে জুলুম! ধ্বংস!! দাঙ্গা!!! রুখবে এসব কে?
মায়ের গর্ভ ছেড়ে অাজ পৃথিবীতে অাসছে যেঁ।
তাঁর দিকে অাজ অাগামী চেয়ে, ধরিবে হাল বুঝি
তাঁর মাঝে অামি যে অাজ চেতনার স্বপ্ন খুঁজি।
হুঙ্কারিত অঙ্গনে, কালের প্রাঙ্গনে অাজও যুদ্ধের বার্তা শুনি...
অাজকের নবজাতকের মাঝখানে অামি নতুন বিস্ময় বুনি।
অার নয় রক্ত, অার নয় হাঙ্গামা; ধ্বংসখেলা হোক রিক্ত—
নবপ্লাবনের জোয়ারে অাজ জাগ্রত হোক চিত্ত।
তাই মুছে যাক কালের বিভৎস্য ইতিহাস, থেমে যাক শকুনের থাবা।
`যেঁ শিশু জন্ম নিলো অাজ, সেঁ-ই অাগামীর বাবা’।।

৬. জাগো হে, তারুণ্য

জাগো হে, তারুণ্য!
জাগো অাজ সমস্বরে...
নেমে পড়ো বিদ্রোহে পৃথবীর 'পরে।
জাতি অাজ লজ্জিত, চারিদিকে শুধু লজ্জা!
অাজ গায়ের পশম রুখে দাঁড়াক, কাঁপুক অস্থিমজ্জা।
যুদ্ধের কোলাহলে, বিবেকের কল্লোলে উঠো অাজ জেগে
ঝাঁপিয়ে পড়ো তুফান হয়ে অাঁধার মত্ত মেঘে।
ছিঁড়ে ফেলো যতো শৃঙ্খল-বাধা, লঙ্ঘিয়ে যাও রাত্রি
হে, অামার তারুণ্য! মৃত্যু অভিযাত্রী।
জাগো হে, তারুণ্য!
অাজ জাগ্রত করো চেতন,
তোমার রক্তে উড্ডীন হোক ধর্ষিত পৃথিবীর কেতন।

৭. প্রশ্ন

ওঁদের শরীরের ঘাম,
বাবু সা’ব তুমি কতো দিয়েছো দাম?
কতো দামে কিনেছো তুমি ওঁদের বাগানের জবা?
কোন্ অধিকারে মেরেছো তুমি ওঁদের খাবারে থাবা?
ভুলে কি গিয়েছো ইতিহাস তুমি, ভুলে কি অতীত?
যাঁদের অবদানে শক্ত তোমাদের ঐ ভিত্।
ভুলো না বাবু; সাবধান! ভুলো না তোমার সত্তা
হায়রে, পৃথিবী! তোমরা মনিব, আমরাই পথের কুততা।

৮. রাত্রি ঘুমোয় না

রাত্রির চোখের ঘুম কেড়ে নিয়েছে ওরা;
ওরা ঘুমোতে দেয় না রাত্রিকে— রাত্রি তাই নির্ঘুম জেগে থাকে চিরদিন...

রাত্রি ঘুমোলে ওদের রক্তখেলা দেখবে কে?
ওদের বর্বরতার, হিংস্রতার, তাণ্ডবলীলার সাক্ষী থাকবে কে?
রাত্রি ঘুমোলে ওদের পাশবিকতা মহাকালের বুকে লিখবে কে?
ওদের কালো মুখোশ ছিঁড়ে ইতিহাসের কাছে সত্যকে তুলে ধরবে কে?
রাত্রি ঘুমোলে অার বুলেটের শব্দ কেউ শুনবে না, দানবের করাঘাতে মানুষের অার্তচিৎকারে কেউ উঠবে না, ওদের নির্মম হত্যাযজ্ঞের কথা কাঠগড়ায় উঠে কেউ স্বীকার করবে না; রাত্রি ঘুমোলে অাকাশের কষ্টও কেউ বুঝবে না!
রাত্রি ঘুমোয় না, রাত্রি তাই ঘুমোয় না; রাত্রি ঘুমোতে পারে না।
পৃথিবীর বুকে রাত্রির অামৃত্যু জাগরণ...

৯. দানব

ও মানব,
না-কি দানব?
মুখোশ ওর সরাও—
সকল অসত্যের রাস্তা মড়াও।
ও মানুষ নয়, মুখোশের অাড়ালে থাকে;
ভুল করেছি অামরা মানুষ ভেবে ওকে।
ও দানব! খুবলে খাবে গোটা বিশ্ব!!
মাটিতে তাকিয়ে দেখি অাজও রক্তগঙ্গার দৃশ্য!!!
গেঁথে অাছে অাজও অামার চোখে মানুষের বিভৎস্য লাশ!
ও দানব!! এদেশে কিভাবে করে বাস!!!
অাজ অাবারও তাই দ্রোহ জাগে ধুত্তুর!
বড়ো নেশা লাগে মৃত্যুর।

১০. জেগে ওঠোে আবার

হে কবি! নীরবতা ভেঙে ঘুম থেকে চেঙে ওঠো ফের
অামার রক্তের মাঝে কি যেন বাজে কি যেন পাচ্ছি টের!
সময় হাঁকছে, মহাকাল ডাকছে অাবারও রক্তের হলি!
হে মানব! জেগে ওঠো রক্তফুল হয়ে ফোঁটো- চলো একসাথে অাবারও জ্বলি।
অন্যায়ের গায়ে লাথি মারি পায়ে চূর্ণ করি জালিমের ক্ষমতা
এরা চায় রক্ত, রক্তে হবে শক্ত কেবলই মানুষের সমতা।
শুধু মুসলিম বলে নয়, এ মানুষের পরাজয়- জয় শূয়োররূপী ওই বুদ্ধের
সেখানে অাঘাত হানো, অাজ মরণনেশা অানো- তবু প্রবল সংগ্রাম যুদ্ধের।
যুদ্ধ মানেই শান্তি অাজ, যুদ্ধ মানেই জন্মতাঁজ- যুদ্ধেই হবে সব শুদ্ধ
ওদের প্রাসাদ, ভেঙে করো বরবাদ- ওরা জানোয়ার-শূয়োর-বুদ্ধ!

তাই মহাকাল! অামি অাসছি জেনো-
তোমার হৃদয় খুঁড়ে অাজ অামার মৃত্যুর দিন গোনো...!
তবু মৃত্যু দিয়ে যদি জন্ম দিতে পারি কোনো জন্ম মানব প্রকৃত পুরুষ-কন্যের
যেন সব পাপ মোচন হবে, অামার এ জন্ম পূর্ণ হবে পুণ্যের।

(ওএস/এসপি/নভেম্বর ০৯, ২০১৭)