নওগাঁ প্রতিনিধি : সরকারি নিয়ম-নীতিকে উপেক্ষা করে নওগাঁর আত্রাইয়ে ফসলী জমির ওপর ইটভাটা স্থাপন করা হয়েছে। ওই ইটভাটার কালো ধোঁয়া ও ছাই উড়ে পড়ে চারিপাশের শত শত বিঘা জমির ফসল নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। প্রতি বছর ইটভাটার এই বিরূপ প্রভাবে এলাকার কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হলেও প্রশাসনের এ ব্যাপারে কার্যকর কোন পদক্ষেপ না থাকায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা হতাশ হয়ে পড়েছেন।

জানা গেছে, নওগাঁর আত্রাই উপজেলার শিকারপুর গ্রামে গত দু’বছর আগে সম্পূর্ণ কৃষি জমির ওপর ইটভাটা স্থাপন করা হয়। সে সময় স্থানীয় লোকজন সেখানে ইটভাটা স্থাপনে বিরোধিতা করলেও এর কোন তোয়াক্কা না করে স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজ করে ইটভাটাটি স্থাপন করা হয়। এদিকে ভাটার মালিক প্রভাবশালী হওয়ায় স্থানীয় লোকজন তাদের কাছে যেন জিম্মি হয়ে পড়েন।

এলাকার কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত বছর ওই ইটভাটার বিষাক্ত ধোঁয়ায় ভাটি সংলগ্ন শতাধিক বিঘা জমির বোরো ধান ও ভূট্টা গাছ মরে যায়। এতে করে কৃষকরা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এবারেও ওই ইটভাটার বিষাক্ত ধোঁয়ায় আক্রান্ত হয়ে মরে যাচ্ছে ভাটি সংলগ্ন এলাকার বোরো ধান ও ভূট্টা গাছ।
শনিবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ইটভাটার পার্শ্ববর্তী কয়েক বিঘা জমির ভূট্টা গাছ মরে গেছে। বোরো ধান গাছ লালচে রং ধারণ করেছে। যে সব ধানের শীষ বের হয়েছে তার প্রায় সব শীষই কালো হয়ে মরে যাচ্ছে।

জগদাস গ্রামের কৃষক আকরাম হোসেন বলেন, আমরা অন্যের জমি বর্গা নিয়ে কিছু লাভের আশায় চাষাবাদ করেছি। কিন্তু আমাদের সবকিছুকে গ্রাস করে নিয়েছে এই ইটভাটা। লাভ তো দূরের কথা যে অর্থ খরচ করেছি তাও ইটভাটার কালো ধোঁয়ার কবলে পড়ে পুড়ে ছাই হয়ে যাচ্ছে। এতে করে আমরা আর্থিকভাবে চরম ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি।

শিকারপুর গ্রামের হেলালুর রহমান মাস্টার বলেন, গত বছর ইটভাটার প্রভাবে আবাদ নষ্ট হওয়ার বিষয়টি আমরা লিখিতভাবে প্রশাসনকে জানিয়েছিলাম। কিন্তু প্রশাসনের পক্ষ থেকে কার্যকর কোন পদক্ষেপ না নেয়ায় এবারও এলাকার কৃষকদের ফসল পুড়ে যাচ্ছে। অনেক প্রান্তিক কৃষক আছেন, যারা একমাত্র এই ফসলের ওপর নির্ভরশীল। এ ফসল নষ্ট হওয়ায় তাদেরকে চরম মানবেতর জীবন যাপন করতে হবে।

কৃষক হুমায়ুন কবির বলেন, গত বছর আবাদ নষ্ট হওয়ায় ভাটা কর্তৃপক্ষ বলেছিল, আমরা কৃষকদের ক্ষতিপুরণ দেব। এ মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে কৃষকদের সঙ্গে প্রতারণা করে এবছর ফের কৃষকদের আবাদ পুড়িয়ে মারছে তারা । প্রশাসনিকভাবে এর ব্যবস্থা হওয়া বিশেষ জরুরী বলে দাবি করেন তিনি।
এ ব্যাপারে ওই ইটভাটি পরিচালনাকারী মিজানুর রহমান মামুন বলেন, ভাটির কারনে ফসল বিনষ্ট হয়েছে এটা ঠিক নয়। অন্য কোন রোগেও এ ফসলগুলো আক্রান্ত হতে পারে। তবে ভাটির একেবারে নিকটবর্তী জমির কিছু ভূট্টা আবাদের কিছুটা ক্ষতি হয়েছে বলে স্বীকার করে তিনি বলেন, ক্ষতির বিষয়টি আমরা দেখবো। এ ব্যাপারে আত্রাই উপজেলা নির্বাহী অফিসার হেমন্ত হেনরী কুবি বলেন, ওই ভাটির ব্যাপারে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা গতবছর একটি আবেদন করেছিলেন। সে আবেদনের প্রেক্ষিত ৩ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিল। কিন্তু সে সময় জমিতে কোন ফসল না থাকায় তারা তদন্ত করতে পারেননি। তবে এবারে তদন্ত করে প্রতিবেদন দিলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানান তিনি।
(বিএম/এএস/এপ্রিল ১২, ২০১৪)