কক্সবাজার প্রতিনিধি : মিয়ানমারে নিপীড়নের শিকার রোহিঙ্গারা এবার ভেলার ভেসে নাফ নদী পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। তৃতীয় দিনের মতো শুক্রবার সকালে ১০টি বিশেষ ভেলায় কক্সবাজারের টেকনাফ সীমান্তে এসেছে আরও প্রায় পাঁচ শতাধিক রোহিঙ্গা নারী, শিশু ও পুরুষ। এ নিয়ে গত তিন দিনে ভেলায় ভেসে প্রায় সাত’শ বিপদাপন্ন রোহিঙ্গা নতুন করে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেছে।

টেকনাফ-২ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল এস এম আরিফুল ইসলাম তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, শুক্রবার সকাল থেকে রোহিঙ্গাদের ১০টি ভেলা টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপের জারিয়াপাড়ার ওপারে মিয়ানমারের জলসীমানায় অবস্থান করছে এমন খবর পেয়েছিলাম। ভেলার চারপাশে ওই দেশের আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার কয়েকটি স্পিডবোটও দেখা যাচ্ছিল।

তিনি আরও জানান, নিজ দেশে নির্যাতনের শিকার রোহিঙ্গারা নৌকা সংকটের কারণে প্লাস্টিকের জারিকেন, কাঠ, বাঁশ ও দড়ি দিয়ে ৮০০ থেকে ১০০০ বর্গফুটের ভেলা তৈরি করে ঝুঁকি নিয়ে বাংলাদেশে আসছে। গত বুধবার একটি ভেলায় ৫২ জন, বৃহস্পতিবার পৃথক দুটি ভেলায় ১৩২ জন নিরাপদে বাংলাদেশের তীরে ভিড়েছে। হয়তো এটি জানতে পেরেই ভেলার উপর নির্ভরতা বাড়াচ্ছে বিপন্ন রোহিঙ্গারা।

বিজিবির এই কর্মকর্তা বলেন, নাফ নদীর বিশাল অংশ এভাবে ঝুঁকি নিয়ে পার হতে গিয়ে যেকোনো সময় ভেলা উল্টে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। পাশাপাশি নিয়মবহির্ভূতভাবে জলসীমা অতিক্রম করে বাংলাদেশে ঢুকলেও মানবিক কারণে বিজিবি তাদের উদ্ধার করে একটি স্থানে জড়ো করে। খাদ্য ও অন্যান্য সহায়তা দিয়ে বালুখালী ক্যাম্পে উদ্ধার রোহিঙ্গাদের পাঠানো হয়। এভাবে আগতরা কোনো ধরণের মাদক ও আগ্নেয়াস্ত্র আনছে কিনা তা দেখতে ক্যাম্পে পাঠানোর আগে তল্লাশি করা হয়।

সাবরাং ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান নুর হোসেন বলেন, এভাবে ভেলায় করে নদী পার হওয়া উদ্বেগজনক। যে কোনো সময় সলিল সমাধির খবর আসতে পারে। ফলে আতঙ্কে রয়েছি আমরা। খবর নিয়ে জেনেছি মিয়ানমারে দু’মাস আগে শুরু হওয়া নিপীড়ন এখন বন্ধ রয়েছে। উখিয়া-টেকনাফে রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে প্রতিনিয়ত পর্যাপ্ত ত্রাণ দেয়ার খবরে এখনকার রোহিঙ্গারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দলে দলে বাংলাদেশে ঢুকছে।

টেকনাফ থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাঈন উদ্দিন খান বলেন, চলতি রোহিঙ্গা সংকটের পর বেশ কিছু মাছ ধরার নৌকা অর্থের বিনিময়ে ওপার থেকে রোহিঙ্গাদের এপারে এনেছে। মাঝখানে নানা কারণে ডুবে গেছে রোহিঙ্গা বোঝাই ২৮টি নৌকা। এতে সলিল সমাধি হয়েছে প্রায় ২ শতাধিক নারী, শিশু ও পুরুষের। ফলে অনাকাঙ্খিত মৃত্যু এড়াতে নৌকার মালিক, মাঝি ও দালালসহ ৪৫২ জনকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে সাজা দেয়া হয়। সাজার ভয় ও সীমান্ত কড়া পাহারার কারণে এখন নাফ নদে ও সাগরের টেকনাফ অংশে বোট নামা এক প্রকার বন্ধ রয়েছে।

তিনি বলেন, এ কারণে কৌশল সৃষ্টি করে ভেলা বানিয়ে রোহিঙ্গারা নাফ নদ পার হচ্ছে। ভেলায় আসা শুরু হওয়ার পর কিছু নৌকা রাতের আঁধারে রোহিঙ্গা নিয়ে আসছে বলে অভিযোগ পাচ্ছি। তাদের রুখতে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা এখন আবারও সোচ্চার হয়েছে।

(ওএস/এসপি/নভেম্বর ১০, ২০১৭)