ছাদেকুল ইসলাম রুবেল, গাইবান্ধা : আশ্বিন- কার্তিক মাসে অর্থাৎ এ সময়ে কৃষকরা বেকার থাকতো। তদের না খেয়ে থাকতে হতো। কিন্তু এখন আর নীলফামারীর কৃষকদের বসে থাকার সুযোগ নেই। আগাম আলু আবাদের কারণে তাদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।

আগাম আলু ক্ষেতে কাজ করা রহিম বক্স, মেহের আলী, জয়ন্ত্রী রানী জানান, আলুর জমিতে কাজ করে প্রতিদিন দেড় থেকে দুইশত টাকা করে পাচ্ছেন। এখন আগাম আলু ক্ষেতে কাজ করে সংসার চালাচ্ছেন। আমন ধান পুরোপুরি না পাকা পর্যন্ত আলু ক্ষেতে কাজ চালিয়ে যাবেন তারা।

এসময় আলু ক্ষেতে পানি দেয়া, কীটনাশক প্রয়োগ, নিড়ানি দেয়া সহ আলু ক্ষেত পরিচর্যায় এখন ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে তাদের।

আগাম আলু চাষের জন্য বিখ্যাত গাইবান্ধা জেলার পলাশবাড়ী উপজেলা। উপজেলায় আগাম আলুর সিংহভাগ উৎপাদন হয় এখানে। আগাম লাগানো আমন ধান কর্তনের পর এখানকার কৃষকরা এক খন্ড জমিও পতিত রাখেন না । এছাড়া বছরের পর বছর যে জমিগুলো পড়ে থাকতো গত কয়েক বছর ধরে সে জমি গুলোতে আগাম জাতের আলু চাষ করে বিপ্লব ঘটিয়েছে কৃষকরা। ৫৫ থেকে ৬০ দিনের মধ্যে উৎপাদিত গেনোলা জাতের আগাম আলু চাষ করে থাকেন এখানকার কৃষকরা। এ দু’টি উপজেলার মাঠে মাঠে এখন আগাম আলুর বেড়ে উঠা লগলগে গাছ শোভা পাচ্ছে।

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিস জানায় ৫০০ হেক্টর জমিতে আগাম জাতের আলুর চাষ করা হয়েছে। যা নভেম্বরের শেষ সপ্তাহ থেকে উত্তোলন শুরু করবেন কৃষকরা। আগাম আলু তোলার পর একই জমিতে আবার মৌসুমী আলু, ভূট্টা, মরিচ সহ অন্যান্য ফসল আবাদ করে থাকেন তারা। বছরে একই জমিতে তিন থেকে চারটি ফসল চাষ করে কৃষকরা আর্থিক ভাবে লাভবান হচ্ছে। আগাম আলু চাষে সেচ সার কম লাগে এবং স্বল্প সময়ে ভালো ফলন পাওয়ায় এ আলু চাষে কৃষকদের আগ্রহ বাড়ছে। এখানকার উৎপাদিত আগাম আলু জেলার চাহিদা মিটিয়ে যায় দেশের বিভিন্ন স্থানে।

পলাশবাড়ী উপজেলার জসর জানীর কৃষক মধু মিয়া ও মাসুদ জানান, আগাম জাতের আলু চাষে বিঘা প্রতি উৎপাদন খরচ হয় প্রায় ১৫ হতে ২০ হাজার টাকা। বাজার ধরতে পারলে অন্তত ৪০/৫০ টাকা কেজি দরে আলু বিক্রি করা সম্ভব হবে। এতে খরচ বাদে প্রতি বিঘাতে লাভ হবে অন্তত ৫০ হাজার টাকা বলে তারা জানান।

হোসেনপুর ইউনিয়নের কাঙালের বাজার এলাকার কৃষক মকুল জানান, গত বছর পাঁচ বিঘা জমিতে তিনি আগাম আলুর আবাদ করেছিলেন। এবার আবাদ করেছেন ৩ বিঘা। তিনি বলেন, আগাম আলু চাষে খরচ কম লাভ বেশি।

এছাড়া বাজারে আগাম আলুর ব্যাপক চাহিদা থাকায় বিক্রি করতে কোন ঝামেলা পোহাতে হয় না। একই গ্রামের কৃষক মশিইর রহমান বলেন, এবারে ৪ বিঘা জমিতে আগাম জাতের আলুর আবাদ করেছেন। এখন পরিচর্যার কাজ চলছে। ৬০ দিনের মধ্যে আলু তুলে বাজারে বিক্রি করা যাবে।

পলাশবাড়ী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আজিজুল ইসলাম জানান, আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে আর অল্প কিছু দিনের মধ্যে আগাম আলু উত্তোলন করতে পারবেন এ উপজেলার কৃষকেরা। আর ২০ থেকে ২৫ দিনের মধ্যে এই উপজেলায় আগাম আলু উত্তোলন শুরু হবে।

পলাশবাড়ী কৃষি সম্প্রসারন কর্মকর্তা কৃষ্ণ কুমার জানান, দেশের অন্যান্য জেলার আগেই পলাশবাড়ীতে আগাম আলু উঠে এবং আগাম বাজার ধরতে পারায় কৃষকেরা লাভবান হন।

(এসআইআর/এসপি/নভেম্বর ১১, ২০১৭)