অমল তালুকদার, পাথরঘাটা (বরগুনা) : তৃতীয়বারও  কন্যা সন্তান জন্মেছিল মা রাবেয়ার গর্ভে। ভূমিষ্ঠও হয়েছিল নবজাতকটি। কিন্তু নিষ্ঠুর পরিবার তাকে আর বাচতে দিল না। পাথরঘাটার চরদুয়ানী গ্রামের এ ঘটনা।

ওই গ্রামের ফুল মিয়া শিকদারের ছেলে আফজাল। আফজালের স্ত্রীর গর্ভে আগেও দু-দুটো কন্যা সন্তান জন্মেছিল। স্বামী তাকে হমকি দিয়েছিলেন। এরপরে যদি মেয়ে হয় তাহলে রাবেয়াকে আর সে রাখবেনা। তৃতীয়বার ১টি পুত্র সন্তানের আশায় সে বুক বেধেছিল । কিন্তু বিধিবাম! এবারেও তার কন্যা(!) বিরক্ত হলেন পরিবারের সকল সদস্য। শুধু বিরক্ত হয়ে থামলেন না পরিবারের সদস্যরা। কৌশলে লবন খাইয়ে দিলেন নবজাতকটিকে। প্রতিবেশীরা দেখলেন শিশুটির ওষ্ঠদেশ (ঠোট) ফুলে ঝুলে গেছে।

পাথরঘাটার চিকিৎসকরা উন্নত চিকিৎসার জন্য বরিশাল অথবা অন্য কোথাও নিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেন । তড়িঘরি করে পার্শ্ববর্তী উপজেলা মঠবাড়িয়ায় নেন ফুলমিয়া তার নাতনিকে। এবং চিকিৎসার প্রচেষ্টা ভেস্তে যায় তাদের। তারা কৌশলে হত্যা করল নবজাতক ওই কন্যা সন্তানটিকে। বিষয়টি গত ৫ অক্টোবর সোমবারের। ৬দিন ধরে ঘটনা নানাভাবে চাপিয়ে রাখলেও এখন ঘটনাটি সবার মুখে মুখে।

ইউনিয়ন পুলিশিং কমিটির সভাপতি ,সাবেক ইউপি সদস্য এবং ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কমিটি(সিপিপি) টিম লিডার হারুর অর রশীদ জমাদ্দার মুঠোফোনে জানান এ খবরটি। পরে ওই গ্রামের অদিবসীদের সাথে কথা বলেও ঘটনার সত্যতা মিলেছে।

চরদুয়ানী বাজার জামে মসজিদের কারী আঃ হক বলেন,এই অন্যায় কিছুতেই মেনে নেয়া যায়না। ঘটনাটি চরম অমানবিক এবং এর যথাযথ বিচার হওয়া দরকার।

নাম না প্রকাশের শর্তে ওই গ্রামের এশধিক ব্যক্তি জানান, মানুষ হয়ে মানুষ হত্যার জঘন্য ঘটনার অথবা খুনের বিচার হওয়া প্রয়োজন। তাদের দাবী এই ঘটনার বিচার নাহলে আবারও নবজাতক কন্যাশিশু হত্যার মহোৎসবে মেতে উঠবে মানুষরূপি কিছু দানব।

ঘটনাটি চরদুয়ানী নৌ পুলিশ ফাড়ীর ইনচার্জ আব্দুর রাজ্জাক মৌখিক ভাবে শুনেছেন বলে মুঠোফোনে জানান।

বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার পাথরঘাটা উপজেলা শাখার সভাপতি এড.নুরুল ইসলাম উত্তারাধিকার ৭১নিউজকে জানান, কোনো মা তার সন্তানকে হত্যা করতে পারেনা। যদি এমন কোনো ঘটনা ঘটেও থাকে তা তাদের সন্তান নয়। হয়তো অবৈধ কোনো পরকীয়ার ফসল ! সে যা-ই হোক এমন কোনো ঘটনা কেউ ঘটিয়ে থাকলে তার বিচার হওয়া প্রয়োজন।

এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, হত্যাযজ্ঞের শিকার শিশুটির মৃতদেহ নানা ওহাব আকনের বাড়ি পার্শ্ববর্তী কাঠালতলী ইউনিয়নের বকুলতলা গ্রামে দাফন করা হয়েছে।

বিষয়টি এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে। মা রাবেয়া (২৫) মানুষের নানা কথা থেকে আপাতত রক্ষা পেতে বাবার বাড়ি আত্মগোপন করে আছে বলে একটি সূত্র থেকে দাবী করা হয়েছে।


(এটি/এসপি/নভেম্বর ১১, ২০১৭)