স্টাফ রিপোর্টার : চলতি অর্থবছরের শেষ ১০ মাসে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর জন্য অন্তত ৭ হাজার ১২৬ কোটি টাকা বরাদ্দ লাগবে। যা বাংলাদেশের ২০১৭-১৮ অর্থবছরের মোট বাজেটের ১ দশমিক ৮ শতাংশ। আর মোট রাজস্বের ২ দশমিক ৫ শতাংশ।

বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) ও জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশনের (ইউএনএইচসিআর) এক গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে।

শনিবার রাজধানীর গুলশানে একটি হোটেলে সিপিডি আয়োজিত এক সেমিনারে এ তথ্য উপস্থাপন করা হয়। ‘রোহিঙ্গা সংকট মোকাবেলায় বাংলাদেশের করণীয়’ শীর্ষক এ সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন।

সিপিডির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. রেহমান সোবহানের সভাপতিত্বে সেমিনার সঞ্চালনা করেন সংস্থার বিশেষ ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। এতে বক্তব্য রাখেন, পররাষ্ট্রসচিব শহীদুল হক, বাংলাদেশে নিযুক্ত ব্রিটিশ ডেপুটি হাইকমিশনার ডেবিট এসলে, সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার শাখাওয়াত হোসেন, বিশ্ব বুদ্ধিস্ট ফেডারেশনের সভাপতি অধ্যাপক ড. সুকমল বড়ুয়া, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ প্রমুখ।

ড. রেহমান সোবহান তার বক্তব্যে বলেন, রোহিঙ্গা সমস্যায় দেশের অর্থনীতিতে প্রভাব পড়বে এতে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু এ সমস্যা বেশিদিন জিইয়ে রাখা যাবে না। এজন্য আন্তর্জাতিক মহলকে সঙ্গে নিয়ে ধীর্ঘমেয়াদি উদ্যোগ নিতে হবে।

ড. দেবপ্রিয় বলেন, বিশ্বব্যাপী ৬৫ মিলিয়ন মানুষ এখন উদ্বাস্তু। একক দেশ হিসেবে বাংলাদেশ চতুর্থ সর্বোচ্চ উদ্বাস্তু আশ্রয়দাতা। কিন্তু বাংলাদেশে অর্থনৈতিক অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে এটা বিরাট বোঝা বলা যায়।

এটা বর্তমানে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্চ উল্লেখ করে তিনি বলেন, সমস্যা সমাধানে এখনই উদ্যোগ নিতে হবে। নিতে হবে স্বল্প ও মধ্যমেয়াদি উদ্যোগ।

অধ্যাপক ড. সুকমল বড়ুয়া বলেন, এটি একটি মানবজাতির সমস্যা। মানবতার সমস্যা। মুসলিম বা বুদ্ধ বলে তাদের আখ্যায়িত না করে মানুষ হিসেবে সমস্যার সমাধান করতে হবে।

পররাষ্ট্রসচিব মো. শহীদুল হক বক্তব্যে বলেন, এখন পর্যন্ত কোন দেশ একজন রোহিঙ্গাকেও নিতে চায়নি। তৃতীয় কোন পক্ষও এগিয়ে আসেনি। এজন্য রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধান করতে হবে দ্বিপক্ষীয় উদ্যোগে।

তিনি বলেন, রোহিঙ্গা সংকটের সমাধানে আমরা সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি। এরপরও শান্তিপূর্ণ সমাধানের চেষ্টা চলছে। মিয়ানমার সফরে গিয়ে ২৩ নভেম্বর পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী নেপিদো কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠক করবেন। এ সংক্রান্ত চুক্তির যে খসড়া তা তৈরি হয়ে গেছে। শিগগিরই চুক্তিটা হবে।

রোহিঙ্গা সংকটের চ্যালেঞ্জ তুলে ধরে সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, রোহিঙ্গা সংকটের কারণে বাংলাদেশ বহুমাত্রিক সমস্যায় পড়েছে। রোহিঙ্গা সংকটের সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়েছে অর্থনীতি, সমাজ ও পরিবেশের ওপর। এ তিন খাতে বাংলাদেশ নানা চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছে। অর্থনীতিতে প্রভাব পড়ায় জীবন যাপনের ব্যয় বৃদ্ধি, কর্মসংস্থানের সংকট তৈরি হয়েছে। আর ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে পর্যটন।

তিনি বলেন, রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এলাকায় সামাজিক বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। জনসংখ্যা বৃদ্ধি, স্বাস্থ্য ও স্যানিটেশন সমস্যা, স্থানীয় জনসাধারণের মধ্যে রোহিঙ্গাদের নিয়ে নেতিবাচক ধারণা দেখা দিয়েছে।

পরিবেশের ওপর রোহিঙ্গা সংকটের প্রভাব তুলে ধরে তিনি বলেন, কক্সবাজারে মোট বনভূমির পরিমাণ ২০ লাখ ৯২ হাজার ১৬ একর। রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশে এরইমধ্যে ৩ হাজার ৫০০ একর বনভূমির ক্ষতি হয়েছে। রোহিঙ্গা শরণার্থী অধ্যুষিত এলাকায় বায়ু দূষণ, ভূমিধসের মতো ঘটনা ঘটছে। এ বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে জীবন-জীবিকার ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।

সিপিডির পক্ষ থেকে কয়েকটি সুপারিশ তুলে ধরার পাশাপাশি রোহিঙ্গা সংকট মোকাবেলায় এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।

(ওএস/এসপি/নভেম্বর ১১, ২০১৭)