সিরাজদিখান (মুন্সীগঞ্জ) প্রতিনিধি : ইটভাটা নির্মাণের ক্ষেত্রে সরকারি নিয়ম, পরিবেশ আইন বা ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন যে কোনো কাজে আসছে না, তা বোঝা গেল সিরাজদিখান ধলেশ্বরী নদীতে ইটভাটা গড়ে তোলার মধ্য দিয়ে। ইটভাটার থাবা থেকে নদীও এখন বাঁচতে পারছে না।

সিরাজদিখানে আকবর নগর থেকে কুচিয়ামোড়া পর্যন্ত ধলেশ্বরী নদীর সীমানা নির্ধারণকারী পিলার থেকে আরও ভেতরে ইট-সুরকি ও বালু দিয়ে নদী ভরাট করে ইটভাটা বানিয়েছে। ভাটায় শুধু কয়লা দিয়ে ইট পোড়ানোর নিয়ম থাকলেও এখানে গাছের গুঁড়ি ও কাঠ দিয়ে ইট পোড়ানো হচ্ছে। স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সঙ্গে সুসম্পর্ক থাকায় এই ইটভাটার মালিকের বিরুদ্ধে কেউ কিছু বলার সাহস পায় না। কোনো আইনেই ইটভাটা নির্মাণের জন্য নদী ভরাটের অধিকার নেই।

২০১৩ সালের ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইনের ৮(১) ধারা অনুযায়ী, আবাসিক এলাকা ও কৃষিজমির ওপর ইটভাটা স্থাপন নিষিদ্ধ। অন্যদিকে পরিবেশ সংরক্ষণ আইনের ৬(ঙ) ধারায় নিষিদ্ধ করা হয়েছে জলাশয় ভরাট। কিন্তু বাস্তবে মুন্সীগঞ্জ সিরাজদিখানে এসব আইন যে মানা হচ্ছে না, তা তো বোঝাই যাচ্ছে।

পরিবেশ সংরক্ষণ আইন লঙ্ঘন করে জলাশয় ভরাট করলে দুই বছরের কারাদন্ড বা দুই লাখ টাকা জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে। ইটভাটা এমন কোনো স্থাপনা নয় যে তা লুকিয়ে রাখা সম্ভব, আইনে যেখানে কারাদন্ডের ও জরিমানার বিধান রয়েছে, সেখানে দিনের পর দিন এই ইটভাটা চলছে কীভাবে ? প্রশাসনের স্বার্থান্বেষী কোনো গোষ্ঠীর সঙ্গে লেনদেন ছাড়া নদী দখল করে খাস জমিতে ইটভাটার ব্যবসা এমন হওয়ার কথা নয়।

এসব দেখার দায়িত্ব যাদের, সংশ্লিষ্ট সবাইকে এ জন্য জবাবদিহিতে বাধ্য করা জরুরি হয়ে পড়েছে। এর পাশাপাশি আইন লঙ্ঘন করে পরিবেশকে হুমকির মুখে ফেলে যাঁরা এভাবে ইটভাটা গড়ে তুলছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে অবিলম্বে ব্যবস্থা নিতে হবে।

জানা যায়, ধলেশ্বরী নদীসহ সিরাজদিখান থানাধীন ইটভাটাগুলোতে আগামী সপ্তাহ থেকে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হবে। এরপর আমরা সেখানে আর কোনো অবৈধ ইটভাটা দেখতে চাই না।

সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছ, মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখনি উপজেলার বালুচর ইউনিয়নের আকবর নগর এলাকায় ধলেশ্বরী নদীর দুই পাড়ে কমপক্ষে ৫০ টি ইটভাটার স্থাপনা রয়েছে। এই ইট ভাটার কারণে দখল হচ্ছে ধলেশ্বরী নদীর দুই পাড়।

আকবর নগর এলাকার ইট ভাটার মালিক মোঃ নিজাম মেম্বার,খালেক মাদবর ও হাজী মমতাজ এর ইট ভাটায় বেশির ভাগ জমিই সরকারি খাস জমি। প্রতিটি ইট ভাটাতেই রয়েছে সরকারি খাস জমি। গত বছর নিজাম মেম্বারের “মামা ভাগিনা” ইট ভাটায় অবৈধ ভাবে চালানোর কারণে সিরাজদিখান উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) নজরুল ইসলাম ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে এক লক্ষ টাকা জরিমানা করে এবং অবৈধ ভাবে ইট ভাটা চালানোর কারণে ইট ভাটার আগুন ফায়ার সার্ভিসের মাধ্যমে পানি দিয়ে নিভিয়ে দেয়। তার পরেও বন্ধ হয়নি ঐ ইট ভাটা। মালিকরা প্রভাবশালি হওয়ায় খাস জমির মাটি কেটে হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা। দখল করছে সরকারি খাস জমি। তাই তারা বৈধ আর অবৈধ সমান মনে করে।

এ ব্যাপারে আকবর নগর একতা ব্রিকফিল্ডের মালিক মনতাউদ্দিন আহম্মেদের বড় ছেলে ওহিদুল ইসলাম বলেন, এই ইটভাটা আমার দাদা ও দাদির জমির উপর নির্মিত। এই খানে আমাদের ১৬ একর জায়গা রয়েছে। এখানে কোন খাস জমি নেই।

সিরাজদিখান উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) মোঃ নজরুল ইসলাম জানান, ইতোমধ্যে কিছু কিছু ইটভাটাকে ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে জরিমানা করা হয়েছে। কিছু ইট ভাটার মালিকরা হাইকোর্টে রিড করেছে। তাই হাই কোর্টের নিষেধাজ্ঞা থাকার কারণে আমরা সেখানে যেতে পারছি না। বাকী যে সমস্ত ইটভাটায় সরকারী খাস জমি রয়েছে সেগুলো আমরা যাচাই বাছাই করে আইনগত ব্যাবস্থা গ্রহণ করব।

(এসডিআর/এসপি/নভেম্বর ১৩, ২০১৭)