চাঁদপুর প্রতিনিধি : হাজীগঞ্জ উপজেলার ৩২টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এবারের এসএসসি পরীক্ষায় প্রায় দেড় হাজার পরীক্ষার্থী অংশ নিতে পারছে না। নির্বাচনী পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়ায় এসব পরীক্ষার্থী এবার এসএসসির ফরম পূরণের সুযোগ পায়নি। এ ঘটনায় দুটি বিদ্যালয়ে ভাংচুর চালিয়েছে অকৃতকার্য শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। বিভিন্ন বিদ্যালয়ে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। অকৃতকার্য ওইসব শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের অন্যায় আচরণ, হুমকি-ধমকি ও হামলা এড়াতে এসব প্রতিষ্ঠানের প্রায় প্রধান শিক্ষক বিদ্যালয়ে যাওয়া বন্ধ রেখেছেন।

হাজীগঞ্জ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কার্যালয় থেকে পাওয়া তথ্য মতে, এবার উপজেলায় ৩২টি বিদ্যালয় থেকে ৩ হাজার ৯৫৯ জন পরীক্ষার্থী এসএসসির নির্বাচনী পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছে। এর মধ্যে ২ হাজার ৪৩১ জন কৃতকার্য হয়েছে। পাসের হার ৬১ দশমিক ৪০ শতাংশ। বিজ্ঞান বিভাগ থেকে ১ হাজার ১৮৯ জনের মধ্যে ১ হাজার ৫৩ জন, মানবিক বিভাগে ১ হাজার ৫২ জনের মধ্যে মাত্র ৪৪০ জন এবং ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে ১ হাজার ৭১৮ জনের মধ্যে ৯৩৮ জন পরীক্ষার্থী কৃতকার্য হয়েছে। তিনটি বিভাগ থেকে ১ হাজার ৫২৮ জন পরীক্ষার্থী নির্বাচনী পরীক্ষায় অকৃতকার্য হয়েছে। সবচেয়ে বেশি ৬১২ জন পরীক্ষার্থী মানবিক বিভাগ থেকে ফেল করেছে। এদিকে গত রোববার জরিমানা ছাড়া এসএসসির ফরম পূরণের নির্ধারিত সময় শেষ হয়েছে।

কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ড ও উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সূত্রে জানা গেছে, গত বছর কুমিল্লা বোর্ডের এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফল অতিরিক্ত খারাপ হওয়ার কারণে এবার বোর্ড থেকে নির্বাচনী পরীক্ষায় অকৃতকার্যদের ফরম পূরণের সূযোগ না দেয়ার জন্যে কঠোর নির্দেশনা দিয়ে প্রতিটি বিদ্যালয়ে চিঠি পাঠানো হয়। পাশাপাশি দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) থেকেও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে অকৃতকার্যদের ফরম পূরণ না করার জন্যে সতর্ক করে চিঠি দেয়া হয়। মূলত বোর্ড ও দুদকের চিঠি পেয়ে প্রতিষ্ঠান প্রধানরা নড়েচড়ে বসেন। এদিকে অন্যায়ভাবে ফরম পূরণের সুযোগ না পেয়ে ওইসব শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা উপজেলার বাকিলা ও টঙ্গীরপাড় উচ্চ বিদ্যালয়ে ভাংচুর করেছে বলে খবর পাওয়া গেছে।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কার্যালয় থেকে জানা গেছে, প্রতিটি বিদ্যালয় থেকে নির্বাচনী পরীক্ষার ফলাফল বিবরণী মাধ্যমিক শিক্ষা কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে। ওই ফলাফল সিটে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার স্বাক্ষর ও অনুমোদন সাপেক্ষে সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে ফরম পূরণের অনুমতি দেয়া হয়েছে। নির্বাচনী পরীক্ষার ফলাফল শিট শিক্ষা বোর্ডে পাঠানো হয়েছে।

উপজেলার বিদ্যালয়গুলোর নির্বাচনী পরীক্ষার ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, পিরোজপুর, রাজারগাঁও, রান্ধুনীমুড়া, রামচন্দ্রপুর, নাসিরকোর্ট শহীদ স্মৃতি, টঙ্গীরপাড় ও শ্রীপুর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে অর্ধেকেরও কম পরীক্ষার্থী নির্বাচনী পরীক্ষায় অকৃতকার্য হয়েছে। এদিকে সবচেয়ে বেশি কৃতকার্য হয়েছে পালিশারা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ১২০ জনের মধ্যে ১০১ জন ও হাজীগঞ্জ মডেল পাইলট হাই স্কুল এন্ড কলেজ থেকে ৩শ’ জনের মধ্যে ২৪৩ জন।

উপজেলার মধ্যে টংগীরপাড় হাটিলা ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয়ের নির্বাচনী পরীক্ষায় সবচেয়ে বেশি ছাত্র-ছাত্রী অকৃতকার্য হয়েছে। এ প্রতিষ্ঠান থেকে ১৩৪জন পরীক্ষার্থী অংশ নিয়ে মাত্র ৩২জন পরীক্ষার্থী কৃতকার্য হয়েছে। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি মোঃ তাফাজ্জল হোসেন বলেন, গত বছর এসএসসিতে আমার বিদ্যালয় থেকে মাত্র ৩৪ শতাংশ পরীক্ষার্থী পাস করেছে। এজন্যে এবার নির্বাচনী পরীক্ষায় অকৃতকার্য কাউকে ফরম পূরণের সুযোগ দেয়া হয়নি। ফরম পূরণের সুযোগ না পেয়ে অকৃতকার্যরা প্রতিষ্ঠানের বেশ কিছু দরজা-জানালা ভাংচুর করেছে। বিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ফরম পূরণের জন্যে অকৃতকার্যরা ফলাফল ঘোষণার পর বিদ্যালয়ে মানববন্ধনসহ নানা কর্মসূচি পালন করেছে। শনিবার বিকেলে বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের দু’ঘণ্টা তালা লাগিয়ে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়। পরে স্থানীয় জনগণের সহায়তায় তারা ছাড়া পান।

এদিকে গত মঙ্গলবার বিকেলে নির্বাচনী পরীক্ষায় অকৃতকার্য শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা বাকিলা উচ্চ বিদ্যালয়ে জড়ো হয়ে প্রধান শিক্ষক মোঃ মজিবুর রহমানকে তাঁর কক্ষে একঘণ্টা অবরোধ করে রাখে। এ সময় উত্তেজিত পরীক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ের কয়েকটি দরজা-জানালা ভাংচুর করে। পরে হাজীগঞ্জ থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে প্রধান শিক্ষককে উদ্ধার করে এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। মজিবুর রহমান এ প্রসঙ্গে বলেন, আমার বিদ্যালয়ে ১৮২জন পরীক্ষা দিয়ে ১০৩জন কৃতকার্য হয়েছে। অকৃতকার্য হয়েছে ৭৯জন। এসএসসি পরীক্ষায় যারা পাস করবে এবং পাসের সম্ভাবনা রয়েছে তাদেরকে যথাসম্ভব ফরম পূরণের সুযোগ দেয়া হয়েছে।

হাজীগঞ্জ মডেল পাইলট হাই স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ মোঃ আবু ছাঈদ বলেন, আমার প্রতিষ্ঠান থেকে ৩শ’ জন পরীক্ষা দিয়ে ২৪৩জন পরীক্ষার্থী কৃতকার্য হয়েছে। মাত্র ৫৭জন অকৃতকার্য হয়েছে। তারপরও অকৃতকার্যদের ফরম পূরণের সুযোগ দেয়ার জন্যে বিভিন্নভাবে হুমকি-ধমকি আসছে।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শাহ আলী রেজা আশ্রাফী জানান, নিয়মের বাইরে গিয়ে অকৃতকার্য কাউকে ফরম পূরণের সুযোগ নেই। প্রতিষ্ঠান প্রধানদের হুমকি ও হামলা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলে আইন অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর আব্দুল খালেকের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি মুঠোফোনে বলেন, আমরা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ অনুযায়ী কাজ করছি। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ রয়েছে নির্বাচনী পরীক্ষায় অকৃতকার্য কাউকে ফরম পূরণের সুযোগ দেয়া যাবে না। কোনো প্রতিষ্ঠানে এর ব্যত্যয় ঘটলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

(ইউএইচ/এসপি/নভেম্বর ১৪, ২০১৭)