বিশেষ প্রতিনিধি : নেত্রকোনার ‘কেন্দুয়ায় এমপি পিন্টুর জনসভা বয়কট করলেন উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতারা’ এ শিরোনামে গত ১১ নভেম্বর রাতে দুর্জয় বাংলাসহ কয়েকটি অনলাইন পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হলে ওই দিনই ফুসে ওঠে এমপি ইফতিকার উদ্দিন তালুকদার পিন্টু সমর্থক যুবলীগ ও ছাত্রলীগ নেতারা।

সাংবাদিক সমরেন্দ্র বিশ্বশর্মা জানান, ছাত্রলীগ নেতা আপেল মাহমুদ মুঠোফো নেতাকে হুমাকি দিয়ে বলে, এই সংবাদ কে লিখেছে? এই সংবাদ লেখার জন্য তোমার পা দুটি ভেঙ্গে ফেলবো। বাসা বাড়িতে যাবো। এরপরও যদি লেখালেখি বন্ধ না হয় গাড়ির চাকার নিচে ফেলে পিষ্ট করে মেরে ফেলার হুমকি দেয় আপেল। হুমকির ঘটনার পরেরদিন বিভিন্ন গনমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হয়। এরপর থেকে এমপি পিন্টু সমর্থক কতিপয় ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও আওয়ামীলীগ নেতারা নানাভাবে হয়রানী ও নিপীড়ন করে আসছে।

সাহসী লেখার জন্য প্রেরণা দিয়ে কেন্দুয়া পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি সাবেক ছাত্রনেতা কামরুল হাসান ভূইয়া সমরেন্দ্র বিশ্বশর্মাকে ধন্যবাদ জানিয়ে তার ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন। এ লেখাটি পোস্ট করার পর এমপি ও তার সমর্থকদের আঁতেঘা লেগেছে। এরপর বিতর্কিত ও রেজিস্ট্রেশন বিহীন, অন-অনুমোদিত দৈনিক নেত্রকোনা নামের একটি অনলাইন পত্রিকার মাধ্যমে পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম জুয়েল তার মনগড়া ও কুরুচিপুর্ণ বক্তব্য প্রকাশ করে হুমকির ঘটনাটি লোক চক্ষুর আড়াল করার চেষ্টা করছেন। অর্থাৎ ছাত্রলীগ নেতার হুমকির ঘটনাটি ‘শাক দিয়ে মাছ ঢাকার চেষ্টা’ করছেন জুয়েল। জুয়েলের বক্তব্য সাজানো, মিথ্যা, ভিত্তিহীন ও বানোয়াট।

সাংবাদিক সমরেন্দ্র বিশ্বশর্মা বলেন, প্রেসক্লাব থেকে দুর্নীতির জন্য তাকে বহিষ্কার করা হয়েছে এ কথা প্রমাণ করতে পারলে তিনি তার দীর্ঘদিনের পেশা ছেড়ে দিয়ে অন্য পেশায় নিয়োজিত হবেন।

এদিকে সাংবাদিকের উপর হুমকির ঘটনায় ময়মনসিংহ বিভাগের বিভিন্ন জেলা, উপজেলা প্রেসক্লাব ও সাংবাদিক সমিতির নেতারা বলেন, যদি এই ধরনের মিথ্যাচার থেকে এমপি ও তার সমর্থকরা বিরত না থাকেন তা হলে নির্বাচনী এলাকা থেকে সংগৃহীত অনিয়ম দুর্নীতির তথ্য ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ করা হবে। তাছাড়া যেসব ব্যক্তি মিথ্যা তথ্য দিয়ে সংবাদ প্রকাশ করে সাংবাদিককে সমাজে হেয় প্রতিপন্ন করার চেষ্টা করছে। এসব বিষয় পত্রিকায় বিবৃতি দিয়ে দুঃখ প্রকাশ না করা হলে আদালতে মানহানির মামলা দায়ের করবেন সমরেন্দ্র বিশ্বশর্মা।


ময়মনসিংহ বিভাগের সাংবাদিক সমাজের নিন্দা

এদিকে হুমকির ঘটনাটি সাংবাদিকের পক্ষ থেকে নেত্রকোনা পুলিশ সুপার ও কেন্দুয়া থানার অফিসার ইনচার্জকে মৌখিক ভাবে জানিয়েছেন।

হুমকির ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন ময়মনসিংহ বিভাগীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি এসএমএ সালাম, সাধারণ সম্পাদক মোঃ নজরুল ইসলাম, বাংলাদেশ সাংবাদিক সমিতি কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ এনামুল হক বাবুল, প্রেসক্লাব নান্দাইলের সভাপতি এ্যাডভোকেট হাবিবুর রহমান, জাতীয় সাংবাদিক সংস্থার সভাপতি ইলিয়াস উদ্দিন ফকির রঞ্জু, বাংলাদেশ সাংবাদিক সমিতি নান্দাইল শাখার সভাপতি এবি ছিদ্দিক খসরু, নান্দাইল প্রেসক্লাব সভাপতি মোঃ ফজলুল হক, প্রেসক্লাব নান্দাইলের সাধারণ সম্পাদক রায়হান, ময়মনসিংহ উপজেলা প্রেসক্লাব ফোরামের সাধারণ সম্পাদক খোরশেদুল আলম, তাড়াইল প্রেসক্লাবের সভাপতি দেওয়ান ফারুক দাদ খান, সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম, মদন প্রেসক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মোতাহার আলম চৌধুরী, মদন প্রেসক্লাবের বর্তমান সভাপতি আল-আমিন, সাধারণ সম্পাদক পরিতোষ দেবনাথ, ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মোঃ সেলিম, পূর্বধলা প্রেসক্লাবের সভাপতি শফিকুল আলম শাহিন, সাধারণ সম্পাদক শফিকুজ্জামান শফিক ও কেন্দুয়া উপজেলা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ও উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর সাধারণ সম্পাদক সাংবাদিক মোঃ মহিউদ্দিন সরকার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন।

পৃথক বিবৃতিতে তারা বলেন, যদি একজন পেশাগত সাংবাদিকের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করা হয় এবং সংবাদ প্রকাশের জের ধরে হুমকি অব্যাহত থাকে, তাহলে সারা দেশের সাংবাদিক সমাজ ঐক্যবদ্ধ হয়ে এসব অপরাজনীতির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবে।



(এসবি/এসপি/নভেম্বর ১৪, ২০১৭)