ছাদেকুল ইসলাম রুবেল, গাইবান্ধা : চলতি বছরের বন্যায় কাটাখালী নদীতে ভাঙনের ফলে গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার কামালেরপাড়া ইউনিয়নের পশ্চিম বাঙ্গাবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পূর্বপাশের একটি শ্রেণিকক্ষের মেঝে ভেঙে দেবে গেছে। দেয়ালে ফাটল ধরেছে। এর মধ্যেই পাশের কক্ষে ঝুঁকি নিয়ে শিক্ষার্থীদের পাঠদান চলছে।

তিনমাস পেরিয়ে গেলেও ভবনটির শ্রেণিকক্ষ সংস্কারে কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি। নতুন আরও দুই কক্ষ নির্মাণের প্রয়োজন হয়ে পড়েছে।

বিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, ১৯৮৬ সালে স্থাপিত পশ্চিম বাঙ্গাবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি সরকারিকরণ হয় ২০১৩ সালে। বিদ্যালয়টিতে শিক্ষক আছেন তিনজন। ছাত্র-ছাত্রী ১৬৫ জন। চলতি বন্যায় বিদ্যালয়ের একটি শ্রেণিকক্ষ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পর পাশের আরেকটি কক্ষে সকাল থেকে দুপুরে একসঙ্গে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণি এবং দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির ক্লাস চলে।

সরেজমিনে দেখা যায়, চার কক্ষ বিশিষ্ট পশ্চিম বাঙ্গাবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টির পূর্ব পাশের একটি শ্রেণি কক্ষের নিচে মাটি নেই। চলতি বন্যায় ভাঙনের ফলে কক্ষটির মেঝের মাটি নদীতে তলিয়ে গেছে। ফলে ভবনটি পূর্বদিকে কিছুটা হেলে পড়েছে। কক্ষটির ভেতরে ও বাহিরের দেয়ালে ফাটল ধরেছে। অন্য তিনটির মধ্যে একটি অফিস কক্ষ। আর অন্য দুইটি কক্ষে শিক্ষার্থীদের পাঠদান করান শিক্ষকরা। শিক্ষার্থীদের সুরক্ষার জন্য বিদ্যালয় মাঠের পূর্বপাশে নদীর দিকে বাঁশের বেড়া দেয়া হয়েছে।

বাঙ্গাবাড়ী গ্রামের আনছার আলী বলেন, আমার মেয়েটা ওই স্কুলে পড়াশোনা করে। কখন যে কি হয়, তাই সবসময় দুশ্চিন্তায় থাকি। কিন্তু দীর্ঘদিনেও ভবনটি মেরামতের কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি। বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষ ঝুঁকির কারণে অনেক অভিভাবকই তাদের সন্তানদের নিয়মিত বিদ্যালয়ে পাঠান না।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির দুইজন ছাত্র জানায়, এখন এক কক্ষেই একসঙ্গে গাদাগাদি করে বসে দুই শ্রেণির ক্লাস করানো হচ্ছে। উচ্চ স্বরে পড়ার কারণে সবার মনোযোগ নষ্ট হচ্ছে। তারপরও বাধ্য হয়ে ঝুঁকিপূর্ণ ওই কক্ষের পাশের আরেকটি কক্ষে প্রতিদিন আমাদেরকে পড়াশোনা করতে হচ্ছে। সবসময় চিন্তা থাকি কখন যে ভবন ভেঙে যায়। এই কারণে বিদ্যালয়ে আসতে ইচ্ছে করে না। ফলে পড়াশোনার ক্ষতি হচ্ছে।

বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত) মো. গোলাম ফারুক বলেন, শ্রেণিকক্ষ সংকটের কারণে এক কক্ষেই দুই শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ক্লাস নেয়া হচ্ছে। এতে করে শিক্ষার্থীদেরও মনোযোগ নষ্ট হচ্ছে। আমাদেরও কষ্ট করে ক্লাস নিতে হচ্ছে। আরও দুইটি নতুন কক্ষের খুব প্রয়োজন। বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন দফতরে আবেদন করা হলেও কোনো ফল পাচ্ছি না।

সাঘাটা উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আজিজুল ইসলাম বলেন, বিদ্যালয়টি মেরামতের জন্য মন্ত্রণালয়ে আবেদন করা হয়েছে। বরাদ্দ পাওয়া গেলে কাজ শুরু করা হবে। এছাড়া এই বিদ্যালয়ের বিষয়টি ইউপি চেয়ারম্যানসহ সাঘাটার ইউএনও স্যারকে জানানো হয়েছে।

এ বিষয়ে সাঘাটা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) উজ্জ্বল কুমার ঘোষ বলেন, উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তাকে ওই স্কুলে পাঠানো হবে। তিনি এসে বিস্তারিত জানালে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। স্কুলের জন্য যা ভালো হবে সেটাই করা হবে বলেও জানান ইউএনও।


(ওএস/এসপি/নভেম্বর ১৪, ২০১৭)