আন্তর্জাতিক ডেস্ক : পানামা পেপারসের কর ফাঁকির গোপন তথ্য ফাঁসের ঘটনায় গত বছর বিশ্বজুড়ে ব্যাপক তোলপাড় শুরু হয়েছিল। এবার কর ফাঁকি দিয়ে বিদেশে বিনিয়োগের গোপন তথ্য ফাঁস হয়েছে। প্যারাডাইস পেপারস নামে পরিচিত এ গোপন নথিতে বিএনপির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা আব্দুল আওয়াল মিন্টুসহ ১০ বাংলাদেশির নাম উঠে এসেছে।

বারমুডার আইনি প্রতিষ্ঠান অ্যাপলবির ১ কোটি ৩৪ লাখ নথি ফাঁস করেছে ইন্টারন্যাশনাল কনসোর্টিয়াম অব ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিস্ট (আইসিআইজে)। আব্দুল আউয়াল মিন্টু ছাড়া প্যারাডাইস পেপারসে আরো যে বাংলাদেশিরা আছেন, তারা হলেন, আউয়াল-নাসরিন ফাতেমা, আউয়াল-তাবিথ মো., আউয়াল-তাফসির মোহাম্মদ, চৌধুরী-ফয়সাল, মিন্টু- আব্দুল আউয়াল, মুগল-ফরিদা ওয়াই, উল্লাহ-শহীদ, আব্দুল আউয়ালমিন্টুকে তাজওয়ার মো. আওয়াল, আহমদ সামির ও আউয়াল-তাজওয়ার মুহাম্মদের অভিভাবক হিসেবে পরিচয় করে দেয়া হয়েছে।

প্যারাডাইস পেপারসের নথির বরাত দিয়ে বারমুডায় নিবন্ধিত বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠানের তালিকাও প্রকাশ করেছে আইসিআইজে। এসব প্রতিষ্ঠান হলো ইউনোকল বাংলাদেশ এক্সপ্লোরেশন লিমিটেড, ইউনোকল বাংলাদেশ ব্লক সেভেন লিমিটেড, ইউনোকল বাংলাদেশ ব্লক ফাইভ লিমিটেড, ইউনোকল বাংলাদেশ ব্লক টেন লিমিটেড, ইউনোকল বাংলাদেশ ব্লকস থার্টিন অ্যান্ড ফোর্টিন লিমিটেড, ইউনোকল বাংলাদেশ ব্লক টুয়েলভ লিমিটেড, বার্লিংটন রিসোর্সেস বাংলাদেশ লিমিটেড, ফ্রন্টিয়ার বাংলাদেশ-বারমুডা লিমিটেড, টেরা বাংলাদেশ ফান্ড লিমিটেড, আনিসুর রহমান অ্যান্ড কোং ও ব্রামার অ্যান্ড পার্টনার্স অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট (বাংলাদেশ) লিমিটেড।

আইসিআইজে শুক্রবার নতুন করে প্যারাডাইস পেপারসের প্রায় ২৫ হাজার নথি প্রকাশ করে। গোপনে অফশোর কোম্পানির মাধ্যমে কর ফাঁকি দিয়ে কোটি কোটি বিনিয়োগের ১ কোটি ৩৪ লাখ নথি বারমুডার আইনি প্রতিষ্ঠান অ্যাপলবি জার্মানির দৈনিক সুডয়চে জেইটংয়ের কাছে হস্তান্তর করেছে। পরে জার্মানির এই দৈনিক ৩৮০ জনেরও বেশি সাংবাদিকের সংগঠন আইসিআইজের কাছে তুলে দিয়েছে এসব নথি। পাঁচ নভেম্বর এসব নথির বিস্তারিত প্রকাশ করে আইসিআইজে।

আইসিআইজে বলছে, ১৯৯৯ সালের ৯ আগস্ট বারমুডায় এনএফএম এনার্জি লিমিটেড নামে একটি প্রতিষ্ঠান খুলে গোপনে বিপুল পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করেছেন আব্দুল আউয়াল পরিবারের সদস্যরা।

বারমুডার অফশোর আইনি প্রতিষ্ঠান অ্যাপলবি এসব নথি প্রকাশ করেছে। গত বছর মোস্যাক ফনসেকার কর ফাঁকির ১ কোটি ১৫ লাখ গোপন নথি ফাঁসের ঘটনায় বিশ্বজুড়ে ব্যাপক তোলপাড় শুরু হয়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ক্ষমতাধর রাজনীতিক এবং ব্যবসায়ীরা প্রচণ্ড চাপের মুখে পড়েন। ব্যাপক বিক্ষোভের মুখে আইসল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী সিগমুন্ডুর গুনলাউগসন পদত্যাগ করেন।

পানামা পেপারসে ক্ষমতাধর রাজনীতিক থেকে শুরু করে নামকরা সেলিব্রেটি অনেকের কর ফাঁকির গোপন তথ্য বেরিয়ে আসে। পানামার লিগ্যাল ফার্ম ‘মোস্যাক ফনসেকা’ থেকে এসব গোপন দলিল ফাঁস হয়ে যায়। ওই সময় আইসিআইজের ওয়েবসাইটে কর ফাঁকি দিয়ে বিদেশে অর্থপাচারে জড়িত ৩২ বাংলাদেশি ব্যক্তি ও ২ কোম্পানির নাম প্রকাশ করা হয়। এতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী এক সাংসদ ও তার পরিবারের সদস্যরাও আছেন।

গত বছর ফাঁস হওয়া পানামা পেপারস কেলেঙ্কারিতে যেসব বাংলাদেশির নাম উঠে আসে তারা হলেন, এ.এস.এম. মহিউদ্দিন মোনেম, এএফএম রহমাতুল বারী, আসমা মোনেম, আজমত মোনেম, ক্যাপ্টেন এম.এ জল, দিলিপ কুমার মোদি, দিলিপ কুমার মোদি, এফ.এম জুবাইদুল হক, এফ.এম জুবাইদুল হক ও সালমা হক, জাফর উম্মিদ খান, কাজী রায়হান জাফর, খাজা শাহাদত উল্লাহ, মাহতাবুদ্দিন চৌধুরী, মির্জা এম ইয়াহিয়া, মোহাম্মদ আমিনুল হক, মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম, মোহাম্মদ শাহেদ মাসুদ, মোহাম্মদ শাহেদ মাসুদ, মোহাম্মদ ফয়সাল করিম খান, নজরুল ইসলাম, নাজিম আসাদুল হক, নিলুফার জাফরুল্লাহ, সালমা হক, সৈয়দ সিরাজুল হক, সৈয়দা সামিনা মির্জা, তারিক ইকরামুল হক, উম্মেহ রুবানা, কাজী জাফরুল্লাহ (আ. লীগ সাংসদ), জাফরুল্লাহ কাজী ও জাফরুল্লাহ নিলুফার, জাফরুল্লাহ নিলুফার এবং জুলফিকার হায়দার।

এছাড়া আইসিআইজের ওই তালিকায় দুই বাংলাদেশি কোম্পানি বাংলা ট্রাক লিমিটেড ও বিবিটিএলের নামও প্রকাশ করা হয়। তবে এ বিষয়ে বিস্তারিত কোনো তথ্য দেয়নি মোস্যাক ফনসেকা।

(ওএস/এসপি/নভেম্বর ১৮, ২০১৭)